প্রথম পাতা

পদ পেয়েছেন বিবাহিত, বয়স্ক ও ব্যবসায়ী

কমিটি ভেঙে দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৫ মে ২০১৯, বুধবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ এক বছর পর ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা ভেঙে দিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া নেতারা। গতকাল দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কমিটিতে স্থান পাওয়া কিছু নেতাও। তাদের দাবি, যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি তাদের। ওদিকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কমিটি ভেঙে না দিলে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। হুঁশিয়ার করেন গণপদত্যাগেরও। দাবি আদায়ে আজ দুপুর ১টায় টিএসসির সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এদিকে সোমবার কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দপ্তর সেলে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে পদ বঞ্চিতরা। অন্যদিকে গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে পদ বঞ্চিতদের তোপের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। পরে আহত নেতাদের না দেখেই ঢামেক এলাকা ত্যাগ করেন তারা।

এদিকে বিতর্কিত কমিটি ভেঙে দিতে গতকালও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন পদ বঞ্চিতরা। কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারীরাও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে চুড়ান্ত আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিয়েছেন। তারা বিক্ষোভকারীদের জামায়াত শিবির রাজাকার বলতেও ছাড়েনি। পদ বঞ্চিতদের অভিযোগ যারা ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ণ না করে নিষ্ক্রিয়, চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, বয়সোর্ধ্ব, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকাদের পদায়ন করা হয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফুদ্দিন বাবু বলেন, আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই যে অধিকাংশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে তা ভেঙে দিয়ে অধিক তদন্তের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও অর্থবহ কমিটি করার। সংবাদ সম্মেলনে শামসুন্নাহার হল শাখার সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানাই। যদি এ সময়ের মধ্যে নতুন করে কমিটি গঠন না করা হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মসূচিতে যাব।

সে কর্মসূচিতে আমাদের বিক্ষোভ ও অনশনও থাকবে। গণপদত্যাগ করবো আমরা। রোকেয়া হল শাখার সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বলেন, আমি রোকেয়া হলের সভাপতি ও ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আমাকে ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আপনি আমাকে ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিয়েছেন, ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি বলে আমাকে এই পদ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাপারটা এমন আপনি এমপি নির্বাচন করেছেন, এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। আমার প্রশ্ন হলো- আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও কেন ডাকসু নির্বাচন করলেন। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা শোভন-রাব্বানী কমিটির ৮-১০ মাস রাজনীতি করেছে। তাদের পেছনে-পেছনে ঘুরেছে। তাদের মেকানিজমে যারা তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। আগের দুই কমিটির ত্যাগী কাউকে রাখা হয়নি। তদন্ত কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা মধুর ক্যান্টিনে মারধর করেছে তাদেরকেই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি আমরা মানি না।

ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সরাসরি নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছে। আবার তারাই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা চাই এ হামলার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। জসীম উদ্দীন হন শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান বলেন, আমরা আর কোন আওয়ামী লীগ নেতারা আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে চাই না। কারণ তারা আমাদের ডাকসু নির্বাচনের সময়ও নানা ধরণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তারা তাদের ওয়াদা রাখেননি। তাই আমরা এখন একমাত্র আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার কথা শুনবো। আমরা তার দিকে তাকিয়ে। এর আগে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে নতুন পদপ্রাপ্তদের হামলায় যেসব পদবঞ্চিতরা আহত হয়েছিলেন তাদেরকে হাসপাতালে দেখতে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনী। এসময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন তারা।

এসময় তাদের প্রায় আধা ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয়ই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে হামলার ঘটনায় তদন্ত করতে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছেন- ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাৎ ও তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মণ। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার ইফতার-পরবর্তী সময়ে মধুর ক্যান্টিনে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা হয়েছে, আমরা ছাত্রলীগ পরিবার তার তীব্র নিন্দা জানাই।

সেই সঙ্গে ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরেজমিন অনুসন্ধান করে তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন দফতর সেলে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। তথ্য সংগ্রহ করছি। নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিবেদন দেয়া হবে। এ বিষয়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, কমিটি নিয়ে যদি কোন ত্যাগী নেতা বাদ পড়ে যায় তবে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি জানাব। তিনিই বিষয়টি দেখবেন। হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বনী বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে কমিটিতে বিবাহিতদের পদ পাওয়ার অভিযোগের পর এ বিষয়েও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status