বাংলারজমিন
কামারখন্দে বিলুপ্তির পথে হালের গরু, লাঙ্গল, জোয়াল
কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৫ মে ২০১৯, বুধবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্য কাঠের লাঙ্গল কালের বির্বতনে আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় কামারখন্দ উপজেলাসহ আশপাশে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চাষাবাদের অন্যতম উপকরণ হিসেবে কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। লাঙ্গল ছাড়া গ্রাম বাংলার চাষাবাদের কথা চিন্তা করা যেত না। বিজ্ঞানের আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যান্ত্রিক লাঙ্গল সেই স্থান দখল করায় দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙ্গল। ক্ষেতে খামারে কৃষক লাঙ্গল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য সবার নজর কাড়তো এক সময়। হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য চাষাবাদের বহুল ব্যবহৃত কাঠের হাতল ও লোহার ফাল বিশিষ্ট লাঙ্গল আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক যুগে চাষাবাদের যান্ত্রিক উপকরণ আবিষ্কারের প্রভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে লাঙ্গল, জোয়াল, মই ও হালের বলদ। এ সবের ব্যবহার স্বল্প আয়ের কিছু সংখ্যক কৃষক পরিবারের মধ্যে এখনো কোনো রকমে টিকে রয়েছে। দেখা যেত খুব ভোরে প্রান্তিক কৃষক তার ঘাড়ে লাঙ্গল, জোয়াল আর মই রেখে এক হাতে গরু শাসনের পিটুনি লাঠি আর অন্য হাতে চাষাবাদের উপযুক্ত দুই বলদের দড়ি ধরে রেখেছে। চাষাবাদ শেষ করে কর্দমাক্ত শরীরে ক্ষেতের আইলে বউ ছেলেদের নিয়ে আসা সকালের পান্তা আর কাঁচা মরিচ পেয়াজ দিয়ে ভাত খেয়ে নিয়েছেন কৃষক। বিশ্রাম শেষে আবারো কৃষকের ঠাঁই ঠাঁই শব্দ শোনা যেত। অনেক সময় দেখা যেত নিজের সন্তানকে মইয়ে বসিয়ে চাষাবাদের জমি সমান করার জন্য ষাঁড় দিয়ে দাবড়ানো যেন ছোট বেলার স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কৃষি কাজে ঠাঁই করে নিয়েছে যান্ত্রিক যন্ত্র পাওয়ার টিলার। অতি অল্প সময় কৃষকের সমস্ত জমি চাষাবাদ সম্পন্ন করা যায় এই যন্ত্রের মাধ্যমে। তাতে আর কি হবে কৃষকের কাঠের লাঙ্গলের চাষ যান্ত্রিক যন্ত্রের চেয়ে যে দ্বিগুন ভালো তা বলার অবকাশ রাখে না। আজ এতিহ্যবাহী কামারখন্দ হাটসহ আশপাশের হাটগুলোতে সারিবদ্ধভাবে কাঠের লাঙ্গল বিক্রি করতে দেখা যেত। এখন আর এ অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজারে কালের সাক্ষী লাঙ্গল জোয়াল ও মই ইত্যাদি সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা যায় না বিক্রেতাদের। অতীতের সেই কামারের ঠক ঠক শব্দ আর কানে আসে না। যারা এগুলোকে পেশা হিসেবে নিয়ে তৈরি করতেন তাদেরও অনেকেই এখন বেকার। তাই হালের গরু, লাঙ্গল, জোয়াল আজ বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন কামারখন্দের সাধারণ চাষিরা।