দেশ বিদেশ
‘মাগো বিদেশ যেওনা জীবন বিপন্নের শঙ্কা’
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৫ মে ২০১৯, বুধবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন
বন্দরবাজারের ওরিয়েন্টাল মার্কেটের সোমা এয়ারসার্ভিসে বসা এক নারী। বিদেশে কর্মী হয়ে যেতে এখানে এসেছেন। এমন সময় ম্যাজিস্ট্রেট ঢুকলেন সেখানে। দেখলেন মহিলা বসা। জিজ্ঞেস করলেন- কী কারণে এসেছেন?-জবাবে ওই নারী জানালেন- বিদেশ যেতে এখানে এসেছি। এ সময় সোমা এয়ারসার্ভিসের স্বত্বাধিকারী কবির আহমদ জানান- তিনি শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যেতে চান। এ কারণে এসেছেন। এমন সময় ম্যাজিস্ট্রেট কবির আহমদের কাছে তার ব্যবসার কাগজপত্র দেখতে চান। কিন্তু কোনো বৈধ কাগজ পাওয়া গেলো না। এমন সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আটাবের সিলেট জোনের সভাপতি ও যাত্রীক ট্র্যাভেলস এজেন্সির মালিক আব্দুল জব্বার জলিল। মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘মাগো এভাবে বিদেশ যেও না। জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে।’ সিলেটে অনুমোদনহীন ট্রাভেলস এজেন্সির মালিকরা এভাবে প্রতিদিন মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ পাঠানোর ধান্ধায় ব্যস্ত। কেন এসব করছেন- প্রশ্ন করা হলে জবাবে সোমা এয়ার সার্ভিসের মালিক কবির জানান- ‘আমি এজেন্ট মাত্র। ঢাকার ব্যক্তিদের সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করি। সব প্রসেস তারা করে। আমরা কেবল লোক সংগ্রহ করি।’ সিলেটের জেলা প্রশাসনের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম সোমা এয়ার সার্ভিসের কোনো বৈধ কাগজপত্র না পেয়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এবং কাগজপত্র দ্রুত বৈধ করার নির্দেশ দেন। ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ট্র্যাজেডির পর সিলেটের প্রশাসন অবৈধ ট্রাভেল এবং ওভারসিজের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে। সিলেটে গড়ে উঠা প্রায় ৫০০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা অভিযান শুরু করেছেন। গতকাল অভিযানের ফাঁকে ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম জানান- যতদিন সিলেটে এই ধরনের অবৈধ আদম ব্যবসা বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত তাদের অভিযান চলবে। প্রতিদিন ৫টি টিম নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সিকে জরিমানা করা হয়। তবে- অবৈধ বেশির ভাগ ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভিযানের ভয়ে তারা প্রতিষ্ঠান খুলছেন না। আটাব সিলেট জোনের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল জানান- হিসেব মতে সিলেট বিভাগে বৈধ ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা প্রায় ২০০। কিন্তু অবৈধ সংখ্যা ৫০০। অবৈধদের কোনো দায় থাকে না বলে তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। জেলা প্রশাসনের এই অভিযানে আটাব সিলেটের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করছেন। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে- মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ও অনুমোদনহীন এজেন্সিতে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। অভিযানকালে নগরীর বন্দরবাজারের ইদ্রিসভবন, ওরিয়েন্টাল, কালিঘাটের নজির চেম্বারসহ বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ট্রাভেলস এজেন্সি পরিচালনার অনুমোদন দেখাতে না পারায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে তা আদায় করা হয়। এর আগে সোমবার দিনভর সিলেটের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে বৈধ কাগজপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ২৪টি ট্রাভেল এজেন্সিকে পৌনে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। গত ৯ই মে দালালদের মাধ্যমে সাগর পথে ইতালি প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরের তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান সিলেটের অন্তত ২০ জন। তাদের বেশিরভাগ যাত্রীকে ইতালি পাঠানোর জন্য ৮ লাখ টাকার চুক্তি করেছিলেন রাজা ম্যানশনের ইয়াহিয়া ওভারসিজ নামক এজেন্সির মালিক এনামুল হক চৌধুরী। এ ঘটনার পরই অবৈধ ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে রাজা ম্যানশনের ইয়াহিয়া ওভারসিজ। গত চার দিন ধরে তালা ঝুলছে প্রতিষ্ঠানে। ওভারসিজের মালিক এনামুল হক চৌধুরী সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে তিনি পলাতক রয়েছেন। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- তিন বছর রাজা ম্যানশনে ব্যবসা করছে এনামুল। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এখন লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষ তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তারা।