বিনোদন
গানে চলছে কথার আকাল
এন আই বুলবুল
১৫ মে ২০১৯, বুধবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন
দুই একটি ছাড়া ভালো কথার গান হচ্ছে না। বেশ আকাল চলছে এ ক্ষেত্রটিতে। গেল কয়েক বছর ধরে সংগীতাঙ্গনের লোকজনের মুখে এই একটি কথা প্রায়শই শোনা যায়। তবুও প্রতিদিন গান প্রকাশ হচ্ছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত গান প্রকাশ করছে। থেমে নেই শিল্পী, গীতিকার ও সুরকাররা। অনেক গানে কোটি ভিউ হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়। আবার কয়েক দিন পর সেই গান ভুলে যাচ্ছে শ্রোতারা। গেল এক বছরে আমাদের সংগীতাঙ্গনে বেশ কিছু শিল্পীর গান ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ইউটিউবে তাদের গান অতিক্রম করেছে অনেক জনপ্রিয় শিল্পীদের গানের ভিউ। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে রেখেছে এই সব শিল্পীকে। প্রশ্ন থেকে যায় কোন ধারার গানগুলো আজকাল বেশি শ্রোতাদের কাছে যাচ্ছে। এসব গানের শব্দ প্রয়োগ কেমন হচ্ছে? ‘তুমি দেহ দিলা, মন দিলা না’, ‘মাতাল হয়ে হিসু করব দেয়ালে’, তোমার নেশায় এখন আমি খাই সিগারেট’ একলা পাইলে বুঝবে তুমি আমি কি জিনিস'সহ এমন নানা উদ্ভট কথার গান প্রকাশ করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীরা। কিছু গানের শিরোনাম এমন-‘খাড়ার ওপর মইরা যামু’, ‘বউ এর শ্যাম্পু’, লাল টুকটুকি, হোমিওপ্যাথির ডোজ, ছ্যাকা খোর ‘ও ছেরি ও ছেরি’। এই ধরনের গানের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় দেখা যায়, বেশির ভাগ শিল্পী নিজেই সেই গান লিখছেন। গান শুনে বোঝার উপায় থাকে না এটি কোনো প্যারোডি নাকি আধুনিক গান। একইসঙ্গে থাকছে রগরগে মিউজিক ভিডিও। এসব গান কি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শোনার মতো? এমন প্রশ্ন এখন জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে সচেতন শ্রোতামহলে। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেন্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শোনার মতো না হলে সেটি কখনো গান হয় না। একজন নবীন শিল্পী যখন গান করেন তখন তিনি নিশ্চয়ই তার পরিবারের সদস্যদের সেই গান শোনাবেন। কিন্তু এখন যারা এই ধরনের উদ্ভট কথার গান করছে তারা কি পরিবারের সদস্যদের এই গান শোনাতে পারে? একটা গান করে ইউটিউবে প্রকাশ করলো। পরিবারের কে শুনলো আর কে শুনলো না সেটি তার বোধগম্য থাকে না। গান আত্মাকে প্রশান্তি দেয়। এই সময়ের গান শোনার পর নিজের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখানে বেহায়াপনা কেউ সহ্য করে না। আমাদের গানের শ্রোতাদের সচেতন হতে হবে। এই ধরনের গানকে বর্জন করতে হবে। গীতিকার-সুরকার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, যার যেমন টেস্ট সে তেমনি গান করে। অনেক দিন থেকেই দেখছি ভালো ছাড়া অন্য গানগুলো হারিয়ে যায়। আমি শুরু থেকেই মানসম্পন্ন গান করছি এবং এটির মধ্যেই থাকতে চাই। এখন যে ধরনের গান হচ্ছে সেগুলো আমি শুনি না। আগেও কখনো শুনতাম না। যারা শুনছে সেটি তাদের অভিরুচি। তবে আমাদের সকলের উচিৎ ভালো গানের প্রতি জোর দেয়া। গীতিকার আহমেদ রিজভী বলেন, বর্তমান সময়ে মানসম্পন্ন গান ভাইরাল হয় না। মানহীন গানগুলোই ভাইরাল হচ্ছে। আমি মনে করি, এই ধরনের গানের শিল্পীরা সমালোচনারও যোগ্য না। অডিও-সিডির যুগ থেকেই দেখে আসছি হঠাৎ করেই কারো গান ভাইরাল হয়ে গেছে। একজন শিল্পীর গান ভাইরাল হতে পারে। তবে তাকে পরবর্তীতে আরও ভালো গান দিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। বিভিন্ন কথার ভালো গান দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় । সংগীত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো গানের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। ভিউর জন্য যাকে তাকে শিল্পী বানানো সংগীতের জন্য ক্ষতিকর।