প্রথম পাতা

পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর আগ্রহ কম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১২ মে ২০১৯, রবিবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

দেশের পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণে নতুন বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলার আগ্রহ কমেছে। বছরের শুরুতে বিও খোলার আগ্রহ দেখা গেলেও একটানা দরপতনের ফলে হ্রাস পেয়ে এপ্রিল মাসে সেটা ৪ হাজারে নেমে এসেছে। যা চলতি বছরের সর্বনিম্ন। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বাজার ঘুরে দাঁড়ালে এ পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র মতে, চলতি বছরের ২৯শে জানুয়ারি থেকে শুরু হয় পুঁজিবাজারে দরপতন। সেই ধারাবাহিকতায় এপ্রিল মাসে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। এরপরও পুঁজিবাজারে কমেছে সব ধরনের সূচক, বাজার মূলধন ও লেনদেনের পরিমাণ। দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা। সিডিবিএল’র তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাজারে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ৪০ হাজার। পরের মাসে তা নেমে আসে ১৯ হাজারে। পতনের জেরে মার্চে তা নেমে আসে ৮ হাজারে। সর্বশেষ এপ্রিলে তা নেমে আসে ৪ হাজার ২৮৫টিতে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই চাঙ্গাভাব দেখা দেয় পুঁজিবাজারে। এ সময়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা হুহু করে বাড়তে থাকে। পরে হঠাৎ করেই পুঁজিবাজারে ছন্দপতন দেখা দেয়, যা গত ৪ মাস ধরে অব্যাহত আছে। এ কারণে বাজারের প্রতি আগ্রহ কমেছে সাধারণ মানুষের। যার প্রভাব পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলায়।

তথ্যমতে, এপ্রিল শেষে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৫টিতে। আগের মাসে যে সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৪৪ হাজার। ফেব্রুয়ারি শেষে এ সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ১৬২টি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৫টিতে। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা ২০ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬২টি। আর নারীদের বিও রয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪২৯টি। এছাড়া কোম্পানির বিও রয়েছে ১৩ হাজার ২০৪টি।

ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার খুব একটা ভালো অবস্থানে ছিল না। যে কারণে বাজারের প্রতি সবারই অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলায়। আশা করছি এ পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। বাজার পরিস্থিতি বদলে গেলে বিও অ্যাকাউন্টও বাড়তে শুরু করবে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ই এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০শে জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্টের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শেয়ারশূন্য। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিওর মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।

এর আগে গত বছর সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সে সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। নিয়মানুযায়ী জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status