প্রথম পাতা

প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

বিশেষজ্ঞ বা রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, সারা দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়েটিক বিক্রি বন্ধ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল জনস্বার্থে দায়ের করা এ-সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারিসহ দুইদিনের মধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে এ আদেশ  দেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
হাইকোর্ট বলেছেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক (ডিজি) সার্কুলার জারি করবেন। দুইদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেবেন তিনি।

রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, আদালত আমাদের রিট পিটিশনের শুনানি শেষে একটি রুল ইস্যু করেছেন। রুলে সারাদেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে, এ আদেশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রতি জেলার সিভিল সার্জন ও ডিসিদের প্রতি সার্কুলার জারি করে এসব আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য পাঠাবেন। এর ফলে আজকের এই আদেশের পরে কার্যত প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বাংলাদেশে আর হতে পারে না, হবে না।

এর আগে, গত ২২শে এপ্রিল দ্য টেলিগ্রাফ ‘সুপারবাগস লিঙ্কড টু এইট আউট অব টেন ডেথস ইন বাংলাদেশ আইসিইউ’স’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সুমন ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ দায়ী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক সায়েদুর রহমানকে উদ্বৃত করে টেলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯০০ রোগী। তাদের মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা বেশি দেখা যায়। কারণ এসব  দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। আবার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া এবং  দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে রোগীরা ব্যবহার করে। আবার মানুষের ব্যবহৃত ওষুধ অধিক লাভের জন্য পশুর ওজন বাড়াতেও প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক দোকানে কেনাবেচা করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এসব ওষুধ শুধু হাসপাতাল থেকে বিতরণ করা হবে এমন উদ্যোগ নেয়া উচিত।

এছাড়া, পরিবেশবাদি সংগঠন ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের’ প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্বৃত করে রিটে বলা হয়েছে, কৃষিখাদ্যের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করায় রাজধানীর ৫৫.৭ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রিটে আরও বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা যে নষ্ট করে বা হুমকি সৃষ্টি করে, সে বিষয়টি তুলে ধরতে জাতীয় ওষুধ নীতিও ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে অ্যাটিবায়োটিকের অপ্যয়োজনীয় ব্যবহার মানুষের মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই ফাঁদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status