এক্সক্লুসিভ
নুসরাত হত্যা
শঙ্কা আর আতঙ্কে পরিবার
জিয়া চৌধুরী
২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
নানা শঙ্কা আর চাপা আতঙ্ক নুসরাতের পরিবারে। অজানা ভয় যেন ভর করেছে সংসারে। তাইতো ঘটনার প্রায় মাস হতে চললেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি নুসরাতের পরিবার। ফেনী সোনাগাজীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করা ও দীর্ঘ পাঁচ দিন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যমের কাছে হার মানার ঘটনা দেশ বিদেশে আলোচিত ঘটনা। নুসরাতের মৃত্যুর পর থেকে তার পরিবারের সদস্যদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া পাহারার মধ্যে রেখেছেন। তারপরও এক চাপা আতঙ্কে দিন পার করছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকালে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মানবজমিনকে বলেন, আমার বোনের হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রায় সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তায় পুলিশও মোতয়েন করা হয়েছে। তবুও আমাদের মাঝে কেন যেন এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। নোমানের কথা- চোখের সামনে বোনকে এভাবে চলে যেতে দেখাও তো জীবনের বড় কষ্ট। বোনকে পুড়িয়ে হত্যায় আসামিদের উপযুক্ত সাজা হলে হয়তো সে কষ্টটা কিছুটা হলেও কাটবে। পরিবারের এক সদস্যকে হারিয়ে বাকিদের জীবন যুদ্ধটা যেন আরো কষ্টের। নোমান বলেন, নুসরাতের চলে যাওয়ার পর অনেকেই আসছেন, সাহস যোগাচ্ছেন, প্রেরণা দিচ্ছেন। কিন্তু চলতে-ফিরতে ঘুরেফিরে আসছে নুসরাতের হাসিমাখা মুখ।
এত বেদনার জীবনে স্বাভাবিক হওয়াটা তো কষ্টেরই। ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়ায় নুসরাত জাহান রাফিদের বাড়িতে এখনো মানুষের আনাগোনা। তবে এত মানুষের ভিড়েও যেন নিথর, প্রাণহীন পুরো বাড়ি। নিজের মেয়েকে হারিয়ে মা শিরিন আক্তার এখন স্তব্ধ। নুসরাতের পড়ার কক্ষে গিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠেন। তার বই, লেখার খাতা উল্টে-পাল্টে দেখেন। মায়ের চোখের জলে ভিজে যায় কন্যার বইপত্র। শোক তবুও যেন কমে না। মেয়ের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন নুসরাতের মা। হাউমাউ করে কাঁদেন, দু’হাত তুলে মোনাজাত ধরেন। অসুস্থ ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। তার মুখেও কোন কথা নেই। নুসরাতের বাবা মাদরাসা শিক্ষক এ কে এম মুসা মানবজমিনকে জানান, কম সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা ও মামলার তদন্ত ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করায় তারা অনেকটা সন্তুষ্ট। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ কে এম মুসা বলেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলা যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। আসামিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া হয়। তাহলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।
তার আকুতি, আর কোন বাবা-মায়ের বুক যেন এমন নৃশংসভাবে খালি না হয়। গণমাধ্যমসহ রাষ্ট্রের সকলকে নুসরাত হত্যা মামলার রায় না হওয়ায় পর্যন্ত সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনী জেলার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, আমরা নিবিড়ভাবে ঘটনার তদন্ত করছি। পিবিআই ফেনী টিমের সদস্য ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করছেন। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। আশা করছি তদন্ত শেষে খুব কম সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনের নামও উঠে আসে। আসামিদের জবানবন্দির পর গত শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন শনিবার বিকালে রুহুল আমিনকে আদালতে হাজির করলে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয় তাকে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, রুহুল আমিনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। এদিকে, নুসরাত হত্যায় পুলিশ ও প্রশাসনের গাফিলতি ছিল কিনা সে বিষয়ে খতিয়ে দেখছে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল। উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক এস এম শেখ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একজন পুলিশ সুপার, দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক তদন্ত দলে কাজ করছেন। তারা এরই মধ্যে সোনাগাজীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন। ঠিক কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এমন প্রশ্নে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী-
মহাপরিদর্শক(এআইজি) সোহেল রানা মানবজমিনকে বলেন, নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসন গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। গত ৬ই এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে মাদরাসায় দুর্বৃত্তরা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫দিন পর ১০ই এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ই এপ্রিল বিকেলে তার জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দোলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতে ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ই এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই মামলায় এজাহারভুক্ত ৮ জনসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মানবজমিনকে বলেন, আমার বোনের হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রায় সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তায় পুলিশও মোতয়েন করা হয়েছে। তবুও আমাদের মাঝে কেন যেন এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। নোমানের কথা- চোখের সামনে বোনকে এভাবে চলে যেতে দেখাও তো জীবনের বড় কষ্ট। বোনকে পুড়িয়ে হত্যায় আসামিদের উপযুক্ত সাজা হলে হয়তো সে কষ্টটা কিছুটা হলেও কাটবে। পরিবারের এক সদস্যকে হারিয়ে বাকিদের জীবন যুদ্ধটা যেন আরো কষ্টের। নোমান বলেন, নুসরাতের চলে যাওয়ার পর অনেকেই আসছেন, সাহস যোগাচ্ছেন, প্রেরণা দিচ্ছেন। কিন্তু চলতে-ফিরতে ঘুরেফিরে আসছে নুসরাতের হাসিমাখা মুখ।
এত বেদনার জীবনে স্বাভাবিক হওয়াটা তো কষ্টেরই। ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়ায় নুসরাত জাহান রাফিদের বাড়িতে এখনো মানুষের আনাগোনা। তবে এত মানুষের ভিড়েও যেন নিথর, প্রাণহীন পুরো বাড়ি। নিজের মেয়েকে হারিয়ে মা শিরিন আক্তার এখন স্তব্ধ। নুসরাতের পড়ার কক্ষে গিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠেন। তার বই, লেখার খাতা উল্টে-পাল্টে দেখেন। মায়ের চোখের জলে ভিজে যায় কন্যার বইপত্র। শোক তবুও যেন কমে না। মেয়ের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন নুসরাতের মা। হাউমাউ করে কাঁদেন, দু’হাত তুলে মোনাজাত ধরেন। অসুস্থ ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। তার মুখেও কোন কথা নেই। নুসরাতের বাবা মাদরাসা শিক্ষক এ কে এম মুসা মানবজমিনকে জানান, কম সময়ের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা ও মামলার তদন্ত ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করায় তারা অনেকটা সন্তুষ্ট। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ কে এম মুসা বলেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলা যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। আসামিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া হয়। তাহলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।
তার আকুতি, আর কোন বাবা-মায়ের বুক যেন এমন নৃশংসভাবে খালি না হয়। গণমাধ্যমসহ রাষ্ট্রের সকলকে নুসরাত হত্যা মামলার রায় না হওয়ায় পর্যন্ত সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনী জেলার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, আমরা নিবিড়ভাবে ঘটনার তদন্ত করছি। পিবিআই ফেনী টিমের সদস্য ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করছেন। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। আশা করছি তদন্ত শেষে খুব কম সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনের নামও উঠে আসে। আসামিদের জবানবন্দির পর গত শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন শনিবার বিকালে রুহুল আমিনকে আদালতে হাজির করলে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয় তাকে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, রুহুল আমিনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। এদিকে, নুসরাত হত্যায় পুলিশ ও প্রশাসনের গাফিলতি ছিল কিনা সে বিষয়ে খতিয়ে দেখছে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল। উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক এস এম শেখ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একজন পুলিশ সুপার, দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক তদন্ত দলে কাজ করছেন। তারা এরই মধ্যে সোনাগাজীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন। ঠিক কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এমন প্রশ্নে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী-
মহাপরিদর্শক(এআইজি) সোহেল রানা মানবজমিনকে বলেন, নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসন গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। গত ৬ই এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে মাদরাসায় দুর্বৃত্তরা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫দিন পর ১০ই এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ই এপ্রিল বিকেলে তার জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দোলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতে ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ই এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই মামলায় এজাহারভুক্ত ৮ জনসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।