বাংলারজমিন

চেয়ারম্যান বাড়িছাড়া হত্যার জন্য ফাইটার এনেছিল প্রতিপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

২৫ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:২২ পূর্বাহ্ন

 চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান নিজেও বাড়িছাড়া। জীবন শঙ্কায় গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় চাচাতো ভাই খোরশেদ আলমের বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। হাজার দেড়েক লোক তার বাড়ি ঘিরে তাকে মারার চেষ্টা চালায়। বাড়ির কলাপসিবল গেট ও জানালার কাচ ভেঙে গ্রিল কেটে তাকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। জানালা দিয়ে ট্যাঁটা ছুড়ে তাকে বিদ্ধ করার চেষ্টা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই সময় পুলিশকে প্রায় ১৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়তে হয়। নবীনগর থানা পুলিশও চেয়ারম্যানকে মারার জন্যে তার বাড়িতে গিয়ে শত শত লোক হামলা করেছিল বলে স্বীকার করেছেন। উপজেলা নির্বাচনের পরদিন ১লা এপ্রিল তাণ্ডব চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি ও হাজীরহাটি গ্রামে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আর কাউসার মোল্লার নির্বাচনী বিরোধে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির জন্যে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করছে।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ভোটের দিন থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে এসব গ্রাম। উত্তর লক্ষ্মীপুর ও থানাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালে সকাল ১০টা ও ১২টার দিকে গোলযোগ হয়। কাউসার মোল্লার পক্ষ লক্ষ্মীপুর কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করে। এরপর নির্বাচনের ফলাফলে চেয়ারম্যান জিল্লুর সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী দোয়াত-কলম প্রতীকের মনিরুজ্জামান জয়ী হলে জিল্লুর ওপর বিরোধী গ্রুপের ক্ষোভ বেড়ে যায়। এর জের ধরেই পরদিন সকালে তাণ্ডব চালানো হয় হাজীরহাটি ও থানাকান্দি গ্রামে। হাজার-পনেরোশ’ লোক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও তার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পুলিশের হিসেবে ১৪০টির মতো ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে ওইদিন। কাউসার মোল্লা গ্রুপের গৌরনগরের লোকজন এ হামলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। গৌরনগর ছাড়াও সাতঘরহাটি, হাজীরহাটি ও থানারকান্দি গ্রামের লোকজনও ছিলো তাদের সঙ্গে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামে হামলা শুরু হলে জিল্লুর রহমান পুলিশকে ফোন দেন। চেয়ারম্যানের জীবন বাঁচানোর জন্যে এলাকার সংসদ সদস্যও থানার ওসিকে ফোন করেন। পুলিশ পৌঁছতে পৌঁছতে হামলাকারীরা চেয়ারম্যানের বাড়ি আক্রমণ করে ফেলে। নবীনগর থানার ওসি রণজিৎ রায়ের নেতৃত্বে ৮ জন পুলিশ সদস্যের একটি দল সেখানে পৌঁছে ১৫৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের হটিয়ে দেয়। এরপর তারা চেয়ারম্যানকে ঘর থেকে উদ্ধার করে। তার আগেই চেয়ারম্যানের দালান ঘরের সবক’টি জানালার গ্লাস ভেঙে ভেতরে ট্যাঁটা ছোড়া হয়। কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা এ সময় বিস্ফোরণও ঘটায়। এ ঘটনার পর জিল্লুর রহমানের পক্ষের লোকজনও পাল্টা হামলা করে কাউসার মোল্লার পক্ষের লোকজনের ঘরবাড়িতে। কাউসার মোল্লার পক্ষটি তাদের ঘরবাড়িতে হামলা এবং এখন জমির ধান কাটায় বাধা দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান ও তার পক্ষের ওপর দোষ চাপালেও চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেছেন- তার নিজের জীবনই নিরাপদ নয়। তিনি নিজের বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছেন না। কাউসার মোল্লা, আব্বাস ও আবু হানিফের নেতৃত্বে তার পক্ষের লোকজনের দেড়-দুশ’ ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। তার লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। এখনো মারধর করা হচ্ছে। লুটপাট করা হচ্ছে। কিন্তু তারা উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের টার্গেট আমি। ভোটের দিন আমাকে হত্যার জন্যে বাইরে থেকে ফাইটার নিয়ে আসা হয়েছিল। ভোট গণনার সময় তার বিপক্ষ দলেরই একজন এ বিষয়টি জানিয়ে তাকে সতর্ক করে দেন। বলেন, আপনি কেন্দ্র থেকে বের হবেন না। ওইদিন ব্যর্থ হয়ে পরদিন সকালে আমাকে মারার জন্য তারা আমার বাড়িতে হামলা করে। চেয়ারম্যানের ভাই আবুল কালামের ঘরেও সে সময় হামলা হয়। তার ঘর-দুয়ার কুপিয়ে ফ্রিজ ও নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সরজমিন গ্রাম দু’টিতে গেলে হামলার শিকার থানাকান্দি গ্রামের নূরু মিয়ার স্ত্রী খালেদা জানান- শুধু দেশের নয়, চেয়ারম্যানরে মারার লাইগ্যা তারা বাইরে থেকেও সন্ত্রাসী আনছে। চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ গ্রুপের অত্যাচারে তারা দিশাহারা। রামদা, বল্লম নিয়ে সবসময় ঘুরে বেড়ায় এরা। বাড়িতে ঢুকে মানুষকে কোপায়। তার স্বামী নূরু মিয়াকে গত এক-দেড় বছরে ৭/৮ বার মারধর করেছে ওই পক্ষটি। নূরু মিয়ার সারা শরীরে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। থানাকান্দি গ্রামের রাহেলা জানান- তার ১০ বছর বয়সী ছেলে মোবারককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আনতে গেলে পুলিশ তাকেও আটক করে। পরে ছেলের সঙ্গে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়। ১০/১৫ দিন আগে টাঙ্গিরপাড়ে জমির ফসল কাটতে গিয়ে কাউসার মোল্লা গ্রুপের কুদ্দুস, কামালসহ ৪/৫ জনের হামলার শিকার হন হাজীরহাটি গ্রামের ফুল মিয়া (৫০)। মারধর করে তার কোমরের হাড় ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ গ্রামের মনোয়ারা বেগম নামের আরেকজন জানান, কোনো কারণ ছাড়াই তাদের বাড়িঘরে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রণজিৎ রায় জানান-থানাকান্দির পরিস্থিতি এখন শান্ত। সেখানে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। ১লা এপ্রিলের ঘটনায় ঘটনায় মোট ১২শ’ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ওইদিনই ঘটনাস্থল থেকে দু’পক্ষের ১০ জন করে মোট ২০ জনকে পুলিশ আটক করে।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status