শেষের পাতা

বাংলাদেশের মিডিয়ায় কাজ করতে চান নূর

নূর ইসলাম, যশোর থেকে

২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

যশোর ঝুমঝুমপুর বিডিআর মার্কেটের পেছনে গাজী ম্যানসনে সকাল থেকে জনতার ভিড়। তাদের প্রিয় অভিনেতা রাজা রামচন্দ্রকে দেখার সুযোগ হারাতে চাচ্ছে না কেউ। তাই ভোর হতে না হতেই ভিড় জমাচ্ছেন গাজী ম্যানসনে। জনতার ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল একটি ইজি চেয়ারে বসে উৎসুক দর্শকের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন রাজা রামচন্দ্র খ্যাত গাজী আবদুন নূর। নানা বয়সের মানুষের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন অবলীলায়। কেউ কেউ আবার সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কেউ আবার গায়ে হাত দিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। পাশের চেয়ারে বসা তার মামা। নূরের জনপ্রিয়তায় মুগ্ধ তিনিও। বহুদিন পর নূর বাড়ি ফিরেছেন তাই গাজী ম্যানসনে জনতার ভিড়ের কমতি নেই।

পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন, তার স্বপ্নের কথা। ভারত ছেড়ে দেশে ফেরার কথা। বললেন দেশের মিডিয়া জগৎ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা। সুযোগ পেলে তিনি দেশীয় মিডিয়া তথা ছোট পর্দা বা বড় পর্দা দুই মিডিয়াতেই কাজ করতে আগ্রহী রাজা রামচন্দ্র খ্যাত যশোরের ছেলে গাজী আবদুন নূর।

বললেন “আমাকে কেউ বের করে দেয়নি। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কাজের চাপের কারণে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য যাওয়া হয়নি। তাই ভিসার মেয়াদ বাড়াতে এসেছি। ভিসা পেলেই চলে যাবো”।  ভারতের বাংলা টিভি চ্যানেলের দর্শকদের কাছে এখন তিনি রামচন্দ্র নামে খুবই জনপ্রিয়। জি বাংলায় প্রচারিত জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র রাজা রাজচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। বললেন, ‘সেখানে সবাই জানে, আমি বাংলাদেশের ছেলে। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক দর্শকই তা জানতেন না। আমাকে নিয়ে এখানে কোনো পত্রিকায় তেমন কোনো খবর ছাপা হয়নি। কেউ কিন্তু আমাকে নিয়ে গর্ব করেনি। অথচ দেখেন, কলকাতার একটি ঘটনা নিয়ে এখানে খবরে সয়লাব হয়ে গেছে। সবাই লিখেছে, আমাকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।’ আসলে কিন্তু তা নয়। আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই দেশে ফিরে এসেছি। ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে আবার যাবো- বললেন অভিনেতা গাজী আবদুন নূর।

গাজী আবদুন নুর গত সোমবার সন্ধ্যায়  বেনাপোল পোর্ট দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। রাতে জানালেন, সন্ধ্যায় ভারত থেকে সড়কপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তার বাসা যশোর শহরের ঝুমঝুমপুর এলাকায়।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার দমদম কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়ের প্রচার মিছিলে সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে যোগ দেন গাজী আবদুন নূর। এ ঘটনার পর কলকাতার অভিবাসন দপ্তর তার ভিসাসংক্রান্ত তথ্য তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়। এরপর ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে বেআইনিভাবে অবস্থান করার দায়ে তাকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জি বাংলা টিভিতে প্রচারিত মেগা সিরিয়াল ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালে রাণী রাসমণির স্বামী রাজা রামচন্দ্রের চরিত্রে অভিনয়কারী গাজী আবদুন নূর বললেন, ‘আমি বাংলাদেশের নাগরিক। ২০১১ সালে ভারতে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করার জন্য। এরপর সেখানে ছোট পর্দায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই। সেখানে অল্পদিনে দর্শক আমাকে গ্রহণ করেন। গল্প অনুযায়ী আমার চরিত্রটি অনেক দিন আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার ব্যাপারে দর্শকের আগ্রহের কারণে জি বাংলা কর্তৃপক্ষ রাজা রাজচন্দ্রের চরিত্রটি বড় করে। এই সিরিয়ালে রাজা রাজচন্দ্র মারা গেছেন। আমি খুব ভালো করে জানি, সেখানে আমি কী করতে পারবো আর কী পারবো না। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের জন্য আমি কেন যাবো?’

কিন্তু কলকাতার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে নির্বাচনী প্রচারণার মিছিলে সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে আপনাকে দেখা গেছে। এ প্রশ্নে গাজী আবদুন নূর বলেন, ‘এমএলএ মদন মিত্র আমাকে স্নেহ করেন। নিজের প্রয়োজনে সেদিন আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি তখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। আমাকে দেখে তিনি গাড়িতে উঠতে বলেন। তার গাড়িতে কিছুক্ষণ ছিলাম। আমাকে দেখে আশেপাশের সবাই রাজা রামচন্দ্র বলে চিৎকার করে ওঠেন। মদন মিত্র বললেন, দেখ দেখ, তোকে দেখে সবাই কী খুশি হয়েছে। ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হাতটা নেড়ে দে। আমি যদি তৃণমূলের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতাম, তাহলে তো সেই দলের উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু আমি কি তা করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সেখানেও তা বলেছি।’

ভারত ছাড়ার নির্দেশের ব্যাপারে গাজী আবদুন নূর বলেন, ‘এ সময় আমি এমনিতেই দেশে আসার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। কয়েক মাস একটু বিরতি নেবো। কারণ, অনেক দিন ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালে রাজা রাজচন্দ্রের চরিত্রে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম। এবার সেই চরিত্র থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি। নিজের লুকটাও পরিবর্তন করবো। আর এই সিরিয়ালে কাজ করার ফলে অনেক দিন দেশে আসতে পারি নি। এবার কিছুদিন দেশে থাকবো।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে গাজী আবদুন নূর বললেন, হয়তো কলকাতায়ই কাজ করবো। ১৫-২০টা কাজ করবো না। আমার অনেক টাকার লোভ নেই। বাড়ি-গাড়ি হবে, তাও চাই না। আমি শুধু কিছু ভালো কাজ করতে চাই। সেখানে ভালো কাজের যে স্বাদ পেয়েছি, তা অসাধারণ!’

‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালের জন্য শুধু ভারতের বাংলা টিভি চ্যানেলের দর্শকদের কাছেই নয়, বাংলাদেশের টিভির দর্শকদের কাছেও এখন সমান জনপ্রিয় গাজী আবদুন নূর। তিনি বাংলাদেশের বাগেরহাটের ছেলে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন সেখানেই। পিতা গাজী আবদুল মান্নান বিডিআরে কর্মরত ছিলেন। পিতার কর্মসূত্রে যশোরে আগমন। যোগ দেন নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরে। শুরু করেন অভিনয় জীবন। বিবর্তন যশোরের প্রবাদ পুরুষ সানোয়ার আলম খান দুলুর হাত ধরে তার মঞ্চ নাটকে হাতে খড়ি। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। বিবর্তন যশোরের সদস্য হিসেবেই তিনি কলকাতায় যান ২০১১ সালে। অনিক থিয়েটার আয়োজিত গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে ‘রাজা প্রতাপাদিত্য’ নাটক নিয়ে অংশ নেয় বিবর্তন যশোর। এই নাটকে রাজা প্রতাপাদিত্যের চরিত্রে অভিনয় করেন সানোয়ার আলম খান দুলু। তার পার্শ্ব অভিনেতা ছিলেন গাজী আবদুন নূর। ওই সময় সেখানে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়। যোগাযোগ করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটক নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে যান। পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা বিভাগে ভর্তি হন। সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক শেষ করার পর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভারত সরকারের আইসিসিআর বৃত্তি পান। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

এবার জানালেন, ঊনবিংশ শতকের থিয়েটার নিয়ে তিনি পিএইচডি করছেন। এমন কয়েকজনকে নিয়ে কাজ করছেন, থিয়েটারে যাদের অসামান্য অবদান রয়েছে, কিন্তু তাদের কথা অনেকেই জানেন না।

বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী আবদুন নূর। নাম ‘যুবতী কন্যার মন’। সেলিম-আল-দীনের কাহিনী থেকে ছবিটি তৈরি করেছেন নারগিস আক্তার। ছবিটি শিগগিরই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা আছে বলে জানান তিনি।

দেশের নাট্যাঙ্গন নিয়েও তিনি তার ভাবনার কথা জানান। বলেন, সুযোগ পেলে তিনি তার অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে চান দেশীয় মিডিয়াতেও। ছোট পর্দার পাশাপাশি তিনি বড় পর্দাতেও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status