দেশ বিদেশ

ভারতে তৃতীয় দফার ভোটের বলি ১

কলকাতা প্রতিনিধি

২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটে রক্ত ঝরেছে। লোকসভার ভোটে এই প্রথম ১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায়। পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলার ৫ কেন্দ্রের নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত গোলমাল, সংঘর্ষ, ভোটারদের বাধাদান, এমনকি গুলি চালনা ও বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কেন্দ্রেীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, মালদহ দক্ষিণ এবং বালুরঘাটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ভোটারদের বিজেপিকে ভোট দিতে প্রভাবিত করেছে। এদিন সকালে ছত্তিশগড়ে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন মাওবাদীরা আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তবে ঘটনায় কেউ হতাহত হন নি। দেশের অন্যত্র ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারা দেশে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের কিছু বেশি। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বিহার ও উত্তর প্রদেশে। এ দিনের নির্বাচনেও ইভিএম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে নানা জায়গায়। এর ফলে রুষ্ট হয়ে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু সুপ্রিম কোর্টে যাবার হুমকি দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, অর্থের বিনিময়ে রুশিরা  ইভিএমে হ্যাক করছে। কেরলের একটি বুথের একটি ভিভিপ্যাট মেশিনের মধ্যে সাপ থাকায় ভোট বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ১৩টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১১৭টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভারতে এবার সাত দফায় ভোট হচ্ছে। প্রথম দুই দফায় মোট ১৮৬টি আসনে ভোট নেয়া হয়েছে। এই দফায় ১৬৪২ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে। এদিন গুজরাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ ভোট দিয়েছেন। মোদি ভোট দেবার আগে আমেদাবাদে মায়ের সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ নিয়েছেন। ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র আইইডি, আর গণতন্ত্রের শক্তি ভোটার আইডি। এই ভোটার আইডির শক্তি অনেক বেশি। তাই সবাই ভোট দিন। এদিন ভোট হয়েছে গুজরাটের সবক’টি অর্থাৎ ২৬টি আসনেই। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ৫টি আসনে, আসামের ৪টি আসনে, উত্তর প্রদেশের ১০টি আসনে, ওড়িশার ৬টি লোকসভা আসনে, ছত্তিশগড়ের ৭টি আসনে, কর্ণাটকের ১৪টি আসনে, কেরলের ২০টি আসনে, মহারাষ্ট্রের ১৪টি আসনে, গোয়ার ২টি লোকসভা এবং ৩টি বিধানসভা আসনে, বিহারের ৫টি আসনে, জম্মু ও কশ্মীরের ১টি আসনে, দাদরা নগর হাভেলির ১টি কেন্দ্রে এবং দমন দিউয়ের ১টি আসনে ভোট হয়েছে। গত দফায় ভোট নেয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তার অভাবের জন্য ত্রিপুরা পূর্ব কেন্দ্রের ভোট পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই কেন্দ্রেও কড়া সতর্কতায় ভোট নেয়া হয়েছে। এদিন দুই প্রতিপক্ষ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ’র ভাগ্য ইভিএমে নির্ধারিত হয়েছে। রাহুল আমেথির পাশাপাশি দাঁড়িয়েছেন কেরলের ওয়েনাদ কেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্রের সাতবারের সংসদ সদস্য লালকৃষ্ণ আদভানীকে সরিয়ে এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন অমিত শাহ। এ ছাড়া আর যাদের ভাগ্য এদিন নির্ধারিত হয়েছে তাদের অন্যতম হলেন, সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে, কংগ্রেসের শশী থারুর, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, বিজেপির বরুন গান্ধী, পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির মেহবুবা মুফতি প্রমুখ। অন্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের ৫টি আসনে কড়া আধাসামরিক বাহিনীর নিরাপত্তায় ভোট হয়েছে। যেসব আসনে ভোট হয়েছে সেগুলো হলো মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, বালুরঘাট, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ। এই দফায় রাজ্যে ভোট হয়েছে ৩২৪ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে। নির্বাচনের ঠিক আগে ৮ জন পুলিশ আধিকারিককে নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আগেই সরানো হয়েছে মালদহের পুলিশ সুপারকেও। এদিন নির্বাচনে শুরু থেকে বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর পাওয়া গেছে। তবে শেষ বেলায় রক্ত ঝরেছে। এবারের লোকসভা ভোটে প্রথম প্রাণহানি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। জানা গেছে, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নিরীহ ভোটারের। জেলা শাসকের কাছে সঙ্গে সঙ্গেই রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। নিহতের নাম টিয়ারুল আবুল কালাম। জানা গেছে, রানিতলা বালিগ্রামে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন টিয়ারুল। সেই সময়ই সংঘর্ষ বাঁধে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। লাঠি ও বাঁশ নিয়ে দু’পক্ষ একে অপরের ওপর চড়াও হয়েছিল। সেই সময় বাঁশ-লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম টিয়ারুলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, ভোট দিয়ে বাড়ির পথে ঘটনাটি ঘটে। বুথের বাইরে ঝামেলা শুরু হলেও, মৃত্যুর ঘটনা বুথে ঘটেনি। দূরে ঘটেছে। এই ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওদিকে এদিন সকালে ভোটে সাহায্য করার অভিযোগে উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের রতুয়ার একটি বুথের প্রিজাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় বিরোধী এজেন্টদের ভয় দেখাতে শূন্যে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলির ঘটনায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে কংগ্রেস। যদিও গুলি চলার ঘটনা এখনও স্বীকার করেনি পুলিশ। ভোটকে কেন্দ্র করে দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তপ্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি এলাকা। ভোট দিতে গেলে লাইন থেকে বের করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে দা নিয়ে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে। অভিযোগ, তৃণমূল কাউন্সিলের স্বামী বাধা দিচ্ছিলেন। তখনই তার ওপর লাঠি, বাঁশ দিয়ে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। তার মাথায় আঘাত লাগে। সঙ্গে থাকা এক সহকর্মীও হামলায় জখম হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status