এক্সক্লুসিভ

বাংলাদেশে আইসিইউতে ৮০ শতাংশ মৃত্যুর নেপথ্যে ‘সুপারবাগ’

মানবজমিন ডেস্ক

২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ৮০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ‘সুপারবাগ’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ আইসিইউ-তে কর্মরত জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক সায়েদুর রহমানের বরাতে এ খবর দিয়েছে বৃটেনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা। তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালে হাসপাতালটির আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯০০ জন রোগী। এদের ৪০০ জনই মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। এসব ইনফেকশন ছিল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এসব দেশে চিকিৎসকের দেয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, গবাদি পশু মোটাতাজা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া এবং দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কেনার সুযোগকে এক্ষেত্রে দায়ী করা হয়েছে।

ডাক্তার সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এক্ষেত্রে আরো কড়াকড়ি প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক দোকানে কেনাবেচা করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এসব ওষুধ শুধুমাত্র হাসপাতাল থেকে বিতরণ করা যাবে, এমন ব্যবস্থা করা উচিত।’
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সাইয়েন্টিফিক রিসার্চে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে, একটি জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়, এক তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারীই বলেছেন, তাদেরকে এমন ব্যক্তিবিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন, যাদের এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়ার এখতিয়ার ছিল না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ আবু সালেহ ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, ‘১০ বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত আইসিইউতে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৭০ শতাংশের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা যায়। এসব ব্যাকটেরিয়াকেই ‘সুপারবাগ’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
অধ্যাপক আবু সালেহ আরো বলেন, ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য কোনো নতুন অ্যান্টিবায়োটিক নেই। পাশাপাশি, বর্তমানে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

বিশ্বব্যাপী সুপারবাগ সংক্রান্ত সমস্যা আসছে দশকগুলোতে বিপজ্জনক রূপ ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না হলে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার কারণে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ২০১৮ সালে ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়ার কারণেও বিশ্বব্যাপী এত মানুষ মারা যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এই সুপারবাগের বিস্তারের পেছনে মূল দায়ী করা হচ্ছে, অর্থের লোভে অযোগ্য ডাক্তারদের দেয়া অ্যান্টিবায়োটিকে ভুল প্রেসক্রিপশন। অনেক দেশে আবার গবাদি পশুর রোগের জন্য প্রেসক্রিপশন দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধ অনুসরণ করা হয় না। মানুষের জন্য ব্যবহার্য অনেক অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় গবাদি পশুকে, যাতে দ্রুত ওজন বাড়ানো সম্ভব হয়।

চট্টগ্রামে করা একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরটির অর্ধেকেরও বেশি পোল্ট্রি মুরগিতে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। তবে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই সমস্যা কমবেশি দেখা যাচ্ছে। ২০১৭ সালে ল্যান্সেট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ম্যালেরিয়া জীবাণু (প্যারাসিট) এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার্য আর্টেমিসিনিন ওষুধ প্রতিরোধ করতে শিখে গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status