অনলাইন

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে রিজভী

দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ২:২৮ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন। কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন- খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেছেন- ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে জানা যাবে বিএনপি থাকবে কি থাকবে না। আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই- বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসেবেই জনগণের নিকট প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তিনি কখনোই কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, কোন  স্বৈরাচারের কাছেই আত্মসমর্পণ করেননি। দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এরশাদের নির্বাচনে যে যাবে সে জাতীয় বেঈমান হবে বলে আপনার নেত্রী দরকষাকষি করে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় বেঈমানের মুকুট তিনি নিজেই নিজের মাথায় পরে ক্ষমতার হালুয়া-মোরব্বার ভাগ পেয়েছিলেন। কিভাবে একটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেটিও নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাননি। অগণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি ও দেন-দরবারের ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র নয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে নির্দোষ বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে সেটিই ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আজ গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কারাগারে বন্দী। দেশের প্রতিটি মানুষ জানে এবং বিশ্বাস করে খালেদা জিয়া নির্দোষ। দেশ থেকে আইনের শাসনকে সমাহিত করে পুলিশী শাসন কায়েম করা হয়েছে। আর এই অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভিন্ন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির আশা-ভরসার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যাবে না।

তিনি বলেন, বর্তমানে সমাজে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা ইতিহাসে সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বাসের যাত্রী, গৃহবধু, মা-বোনসহ সমাজে এখন আর কেউ নিরাপদ নয়। ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের কারনে বর্তমানে সামাজিক ভায়োলেন্স এতো তীব্র হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে ‘সোশ্যাল ফ্রেব্রিক’ ভেঙ্গে গেছে। রাজনীতিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নির্বাসনে। এই বিভৎস সামাজিক নৈরাজ্য ভোটারবিহীন সরকার, মধ্যরাতের সরকার, একদলীয় সরকার ও জবাবদিহিহীন সরকারের সর্বব্যাপী গুম-খুন-গুপ্তহত্যা-নির্বিচারের মামলা ও গ্রেপ্তারের কারণেই বিস্তার লাভ করেছে। কারণ সমাজবিরোধীরা সরকারী দলের আনুকুল্যে মানুষের সহায়-সম্পত্তি দখলের ধারাবাহিকতায় নারীদেরকেও দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব অথবা এদের মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে অথবা নিজেরাই অপকর্মে মেতে উঠেছে। গোটা রাষ্ট্রকাঠামোই এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন নৈরাজ্যের এই কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে হেডলাইন হয়ে। আর এজন্য দায়ী অবৈধ মিডনাইট সরকার।

রিজভী বলেন, সোনাগাজীর ঘটনার মতোই ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া নেতাকর্মীরা গোটা দেশকে ধর্ষণ উপত্যকায় পরিণত করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা এখন ইতিহাসে সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী নিপীড়ন ও খুন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ৭২-৭৫ এর চাইতেও এখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিন একটির পর একটি লোম শিউরে ওঠার মতো ঘটনা ঘটলেও গণবিচ্ছিন্ন এই সরকারের কোন বিকার নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা।

ইস্টার সানডের প্রার্থনার সময় শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচতারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলার জঘন্য, নিষ্ঠুর এবং পাশবিক ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুই মসজিদে হামলা এবং রোববার শ্রীলঙ্কায় গির্জায় ও সোমবার পুত্তালুম জেলায় মসজিদে হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়, অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরণের ঘটনা বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তির অন্তরায়। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা শ্রীলঙ্কার জনগণ ও সরকারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। ইতিমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক, নাজমুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির  হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status