প্রথম পাতা

বনানী ট্র্যাজেডি

ভাই নেই, তাই থেমে গেছে নেহার পড়াশোনা

মরিয়ম চম্পা

২১ এপ্রিল ২০১৯, রবিবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে রুমকি-মাকসুদুর দম্পতির নির্মম মৃত্যু হয়। আগুন থেকে বাঁচতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত হন মাকসুদুর রহমান (৩২)। আর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান স্ত্রী রুমকি আক্তার (৩০)। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই এফআর টাওয়ারে থাকা একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন। আগুন লাগার পর টাওয়ারের দশম তলায় আটকা পড়েন তারা। বাবার মৃত্যুর পরে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মাকসুদুর। মা, ছোটবোন নেহা আর স্ত্রী রুমকিকে নিয়ে ছিল তাদের সুখের সংসার। কিন্তু নিমিষেই সব শেষ হয়ে যায়। এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বৃদ্ধা মা ও ছোট বোন নেহার ভবিষ্যৎ। মাকসুদুরের খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী দিলারা হোসেন মানবজমিনকে বলেন, নিহত মাকসুদুরের ছোট বোন সুমাইয়া রহমান নেহা পুরান ঢাকার গোপীবাগের একটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। বর্তমানে মা জেসমিন রহমানকে নিয়ে সূত্রাপুরের ১১নং আলমগঞ্জের ভাড়া বাসায় থাকেন। বাবা মিজানুর রহমান ২০১০ সালে মারা যান।

বাবার মৃত্যুর পরে বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরেন মাকসুদুর। ছেলেকে হারিয়ে অনেকটা দিশেহারা ও অসহায় হয়ে পড়েছেন মাকসুদুরের মা। আত্মীয় স্বজন সাধ্যমত অল্পবিস্তর সাহায্য করছে। তবে এভাবে আর কতদিন চলবে সংসার। তাদের নিজস্ব আয়ের উৎস বলতে তেমন কিছুই নেই। নেহার ইচ্ছা ফার্মাসিতে পড়ার। কিন্তু ভাই চলে যাওয়ায় এবং টাকার অভাবে হয়তো নেহার সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। ভর্তির সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয় নেহা। পরীক্ষায় উতরে গেলেও ভর্তি হতে পারবে এমন নিশ্চয়তা নেই। কারন তার পড়ালেখার টাকা পয়সার যোগান দেয়া অথবা দায়ভারটা কে নিবেন? আত্মীয় স্বজন এতো খরচ চালাতে পারবে না। প্রথম সেমিস্টারে কেউ একজন সাহায্য করলেও তারপরে কে চালাবে? এমন নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মাকসুদুরের ভাবী দিলারা। তিনি বলেন, এটা নিয়েই দ্বিধা দ্বন্দে আছেন নেহা ও তার মা। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার হিসেবে মাকসুদুরের অফিস থেকে কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পায় নি তারা। সবমিলিয়ে তাদের পরিবারটা একটি এলোমেলো অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

ব্যক্তি হিসেবে মাকসুদুর সব সময় হাসিখুশি ছিলেন। আত্মীয় স্বজনদের খুব কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতেন। আগামী ২৩শে এপ্রিল মাকসুদুর-রুমকি দম্পতির বিয়ের তিন বছর পূর্ণ হবে। রুমকি ছিলেন অন্তঃসত্তা। নিহত রুমকি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্যাকুড়ি গ্রামের আশরাফ আলীর মেয়ে। তিন ভাই বোনের মধ্যে রুমকি মেজ। রংপুর থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে মহাখালীর তীতুমির কলেজ থেকে ডিগ্রি ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। স্বামী মাকসুদুর আইডিয়াল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তেঁজগাও সরকারি কলেজ থেকে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করেন। তারা দুজন একই অফিসে চাকরি করতেন। সেখান থেকে পরিচয়। অবশেষে উভয় পরিবারের সম্মতিতে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন মাস আগে রুমকির মা মারা যান। বাবা কৃষি কাজ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status