শেষের পাতা

‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ ছাড়া বহুতল ভবন ব্যবহার করা যাবে না

দীন ইসলাম

২১ এপ্রিল ২০১৯, রবিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

এখন থেকে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় অকুপেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যবহারের সনদ) ছাড়া বহুতল ভবন ব্যবহার করা যাবে না। রাজউকের কাছ থেকে সনদ নেয়ার পর তা দেখালেই মিলবে পানি ও বিদ্যুৎ লাইন। এসব সনদ রাজউক থেকে যাচাই করে নিতে পারবেন সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়ার বাধ্যবাধকতা ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ এ উল্লেখ রয়েছে। এতদিন এ নিয়মটি কঠোরভাবে মানা হতো না। আলোচিত বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের পর এ বিষয়ে কঠোর হয়েছে রাজউক। এরই মধ্যে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরন করার জন্য জোনাল ডিরেক্টর ও অথরাইজড অফিসারদের বলা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট নিতে বাধ্য করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ইমারত বিধিমালা কার্যকরের পর রাজধানীতে গত ১০ বছরে ৪০ হাজারেরও বেশি ভবন নির্মিত হয়েছে।

তবে রাজউক থেকে ব্যবহার বা বসবাসের সনদ সংগ্রহ করেছেন ২০০টির কমসংখ্যক ভবনের মালিক। ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা, ২০০৮-এর ১৮ ধারায় ইমারত আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মিত হওয়ার পর তা ব্যবহার অথবা সেখানে বসবাসের জন্য বসবাস বা ব্যবহার সনদ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ১৯ (১) ধারায়ও এর পুনরাবৃত্তি করে বলা হয়েছে, আংশিক বা সম্পূর্ণ বসবাস বা ব্যবহার সনদ পাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণ কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবে না। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মিত হয়েছে কিনা, তা পরিদর্শন করে ১৫ দিনের মাথায় এ সনদ পাওয়া যাবে বলে বিধিমালার ১৯-এর (৫) ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে। বিধিমালায় ব্যবহার বা বসবাস সনদের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হয়েছে পাঁচ বছর। এ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই এটি নবায়ন করার বিষয়টিও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সনদ ছাড়া নির্মিত ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পয়োনিষ্কাশনসহ কোনো ধরনের পরিসেবার সংযোগ না দেয়ার বিধান রয়েছে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ভবন মালিকরা নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ করেন। এজন্য তাদের মধ্যে সনদ গ্রহণে আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ বসবাসযোগ্যতার সনদ গ্রহণের আবেদনের সঙ্গে কয়েকটি তথ্য জমা দিতে হয়।

এগুলো হলো ভবন নির্মাণের সমাপ্তি প্রতিবেদন, কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত স্থাপত্য নকশার ভিত্তিতে নির্মিত ইমারতের নির্মাণ নকশা, ইমারতের কাঠামো নকশা ও ইমারত সেবা সংক্রান্ত সব ধরনের নকশা। অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটলে এ সনদ পাওয়া যায় না বলে ভবন মালিকরা এটি গ্রহণ করেন না। যদিও এ সনদ গ্রহণ বা নবায়ন না করা ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক। এর আগে ব্যবহার সনদ ছাড়াই ভবন ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় এক সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এক নির্দেশিকা জারি করে রাজউক। এর পরও খোদ সংস্থাটিকেই বিধানটি প্রয়োগে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। রাজধানীর পূর্বাচল ও উত্তরা জোনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জানুয়ারিতে পরিচালিত এক অভিযানেও রাজউকের অকুপেন্সি সনদ ছাড়াই বিভিন্ন ভবনে পরিষেবা সংযোগ দেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, আগের বিধিমালায় অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়ার বিষয়টি ছিল না।

নতুন বিধিমালায় বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। বহুতল ভবন মালিকদের এ সার্টিফিকেট নিতে বাধ্য করা হবে। সার্টিফিকেট ছাড়া পরিষেবা সংযোগ না দেয়ার বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। এদিকে অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের কারণে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতিরও ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বহুতল ভবনগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আরো বেশি। নির্মিত ভবনের সঙ্গে অনুমোদিত ভবনের নকশার মিল না থাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যানুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৯০ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৭৮ জন। এতে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকার বেশি। শুধু ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এসব ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে ১৩০ জনের। ২০১৮ সালে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৬ হাজার ২০৮টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status