এক্সক্লুসিভ

উপেক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

চট্টগ্রামের গণপরিবহনে নেই চালক-হেলপারের তালিকা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২১ এপ্রিল ২০১৯, রবিবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গণপরিবহনে চালক-হেলপারের নাম, ছবি, লাইসেন্স ও মোবাইল নম্বর সংবলিত তালিকা টাঙানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিতই রইলো চট্টগ্রামে। এ নির্দেশনার আট মাস অতিবাহিত হলেও নগরীর কোনো পরিবহনে টাঙানো হয়নি সেই তালিকা। আর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে  কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেই চট্টগ্রাম মহানগর ট্রাফিক পুলিশ ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ)।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, গণপরিবহনে চালকের ছবি সংবলিত তালিকা দর্শনীয় স্থানে টাঙানোর বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের অনুরোধ করেছি নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা গাড়ির দুটি দর্শনীয় স্থানে টাঙানোর পদক্ষেপ নিতে। আর যেসব গাড়ি ফিটনেস হালনাগাদ করার জন্য
আমাদের কার্যালয়ে আসছে সেগুলোতেও তালিকা টাঙানোর বিষয়টি নিশ্চিত করছি। তবে কেউ এই তালিকা না টাঙালে সামনে থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেব।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) হারুনুর রশিদ হাজারী বলেন, যাত্রীবাহী বাসে চালক- হেলপারের ছবি ও পরিচয়সহ তালিকা টাঙানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন গাড়ির মালিকরা। আমরা একাধিক বৈঠকে মালিকদের এ বিষয়ে অনুরোধ করেছি। তারপরও কোনো গাড়িতে এ ধরনের তালিকা পাওয়া না গেলে আইনি ব্যবস্থা নেব।
তিনি স্বীকার করেন, এই তালিকা গাড়িতে টাঙানো থাকলে যাত্রী ভোগান্তি কমবে। যাত্রীরা হয়রানির শিকার হলে ওই চালক-হেলপারের বিরুদ্ধে সহজে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। তাছাড়া কোনো চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেলেও তাকে সহজে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯শে জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় জাবালে নুর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামাল দিতে ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা দিয়ে পুলিশ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযানে নামে।
পুলিশের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনও সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালায়। যে কারণে পরিবহনের নানা ডকুমেন্ট হালনাগাদ করার পাশাপাশি গাড়ির ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য বিআরটিএমুখী হন গাড়ির চালক-মালিকরা।
অন্যদিকে বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে গণপরিবহনে বিশেষ করে বাসে চালক-হেলপারের নাম, ছবি, লাইসেন্স ও মোবাইল নম্বর সংবলিত তালিকা টাঙানোর বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি

 (বিআরটিএ) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়।
পরবর্তীতে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বিআরটিএ সদর কার্যালয় থেকে গত বছরের ২৮শে আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে পত্র দেয়া হয়। পত্র দেয়ার পর আট মাস পার হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি চট্টগ্রামে।
নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে গণপরিবহন চালক ও হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- নাম, ছবি, লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর সংবলিত তালিকা টাঙানোর বিষয়ে প্রশাসনের কেউ কোনোদিন জানতেও চাননি তাদের কাছে।
নগরীর নিউ মার্কেট-অক্সিজেন-ফতেয়াবাদ রুটে যাত্রীসেবা পরিবহনের চট্ট-মেট্রো-জ-১১-১৪৮১ নম্বরের হিউম্যান হলারটি চলাচল করে। গাড়ির কোথাও সেই তালিকা নেই। চালক হাবিবুর রহমান বলেন, নাম ও ছবিসহ তালিকা টাঙানোর কথা শুনেছি। কিন্তু আমার গাড়িতে টাঙায়নি। বিষয়টি কেউ কোনোদিন চেকও করেন নি।
একই কথা বললেন ১০ নং কালুরঘাট-শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়কের চলাচলকারী চট্ট-মেট্রো-জ-১১-২০৩৭ নম্বর বাসের চালক আমিনুর রহমান। অন্যদিকে নিউ মার্কেট-কালুরঘাট ১ নং রুটে চলাচলকারী চট্ট-মেট্রো-ছ-১১-০৮৪৩ নম্বরধারী হিউম্যান হলারের হেলপার মো. শাহেদ এই ধরনের তালিকা টাঙানোর বিষয়টি জানেন না বলে জানান।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, গণপরিবহনগুলোতে কোনো স্থায়ী ড্রাইভার নেই। আজ একজন চালালে কাল আরেকজন চালায়। যে কারণে ছবিসহ তালিকা টাঙানো নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়। সেজন্য ছবিসহ আইডি কার্ড গলায় ঝুলানোর জন্য আমরা চালকদের নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে ৩৯ লাখ গাড়ি থাকলেও লাইসেন্সধারী চালক রয়েছে ২২ লাখ। অবশিষ্ট ১৭ লাখ গাড়ি চলে লাইসেন্সবিহীন চালকদের দিয়ে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিলাম, প্রশিক্ষিত চালকদের পরীক্ষা ব্যতিরেকে তাৎক্ষণিক লাইসেন্স দেয়ার জন্য। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। তাছাড়া বর্তমানে চালকের লাইসেন্স নিতে অষ্টম শ্রেণি পাস সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে গণপরিবহনের চালকদের লাইসেন্স পাওয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status