দেশ বিদেশ

চা উৎপাদনে আবারো রেকর্ডের সম্ভাবনা

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আবারো বাংলার চা বিশ্ববাজার দখলে নিতে পারবে। চা-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের চা শিল্পে আবারো সুদিন ফিরে এসেছে। চা চাষের ইতিহাসে এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও। অন্যদিকে চলতি বছরে মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চা উৎপাদনে আবারো রেকর্ডের সম্ভাবনা দেখছেন চা-সংশ্লিষ্টরা। গত বছরে মৌসুমের শুরুতে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ২০১৮) অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে বেশ শঙ্কিত ছিলেন চা ব্যবসায়ীরা। এবার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টিপাত হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ চা-বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি বাগানে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। গত বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়। যা চা শিল্পের জন্য সু-খবর। এর আগে ২০১৬ সালে ১৫০ বছরের চায়ের ইতিহাসে প্রথম সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। তখন বছরজুড়ে চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় ছিল। তবে এই উৎপাদনের ধারা ধরে রাখতে না পারায় ২০১৭ সালে চা উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজিতে। গত তিন বছর চায়ের গড় উৎপাদন ছিল আট কোটি ২০ লাখ কেজি।
২০১৮ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাত কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৯ মাসে) দেশে সব মিলিয়ে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। যার কারণ সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চা চাষের উপযোগী সুষম বৃষ্টি হওয়ায় বছর শেষে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়। চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। ২০১২ সালে হয়েছিল ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন নবম স্থানে অবস্থান করছে। ২০১৭ সালে ছিল দশম স্থানে। আর ২০১৫ সালে ছিল ১২তম স্থানে। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করায় গত তিন বছরে দেশে গড়ে প্রতি বছরে ১২ হাজার মিলিয়ন কেজি চা বেশি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জিএম শিবলী বলেন, ‘বাগান মালিকরা এখন পুরনো চাগাছ তুলে নতুন চারা লাগাচ্ছেন। একই ভাবে নতুন করে বাগানের চা চাষের পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে। যে কারণে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। তিনি বলেন, সত্তরের দশকে দেশে চায়ের উৎপাদন হতো ৩০ মিলিয়ন কেজি। আর অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন কেজি। তখন চা রপ্তানি করা যেত। আর এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৮৫ মিলিয়ন আর উৎপাদন হচ্ছে ৮২ মিলিয়ন তা হলে রপ্তানি করবো কিভাবে। তবে এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদার সঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এভাবে বাড়তে থাকলে এক সময় আবার বিশ্ব চায়ের বাজার বাংলাদেশের দখলে আসবে। একই সঙ্গে দেশের চা শিল্পের স্বার্থে আমদানিকৃত চায়ের ওপর সরকারি করারোপ বাড়িয়ে রাখতে হবে।’ ফিনলে টি কোম্পানির ডিজিএম জি এম শিবলী আরো বলেন,‘এই বছর আমরা সময়মতো বৃষ্টি পেয়েছি। আশা করি আগামী মাসগুলোতে ঠিকমতো বৃষ্টি পেলে চা উৎপাদনে আরেকটি রেকর্ড হবে। আমাদের চা পানে দেশে চাহিদা রয়েছে ৮৫-৯০ মিলিয়ন কেজি। আশা করি, তা পূরণ করতে পারবো।’ চা আমদানি নিয়ে গোলাম শিবলী বলেন, ‘ভারত থেকে নিম্নমানের চা আমদানি করায় দেশে চায়ের বাজারে বাংলাদেশি চায়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেদিকে সরকারের সু-নজর থাকলে আমাদের চায়ের গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব হবে।’
এম আর খান চা বাগানের মালিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চা শিল্পে আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই আমরা আবার বিদেশে চা রপ্তানি করতে পারবো।’
এম রহমান টি ল্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ফলন ভালো হরে উৎপাদনে আরেকটি রেকর্ড সৃষ্টি করবে। গত বছর চায়ের যেভাবে মূল্য ছিল এবারও যদি একই মূল্য পাওয়া যায়, তাহলে চা বাগানের ডেভেলপমেন্ট কাজ করতে সুবিধা হবে। চায়ের মূল্যে সন্তোষজনক হলে প্রফিট মার্জিন ভালো থাকে।’ নতুন প্লান্টেশন বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবছর  চা বোর্ডের মেন্ডেটরি হচ্ছে ২.৫ পারসেন্ট। এটার পরও আমরা অতিরিক্ত করার চেষ্টা করি।’ এম আর খান চা বাগানের শ্রমিক কানু লাল ও ভাড়াউড়া চা বাগানের সুনিতা বাড়ই বলেন, অন্য বছর এই সময়ে দুই কেজি চা উত্তোলন করা কঠিন হতো। বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আমরা পাঁচ ছয় কেজি চা পাতা উত্তোলন করতে পারছি।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status