প্রথম পাতা

ফেরদৌসের পর নূরকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে

১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

ভিসা নীতি লঙ্ঘন করার অভিযোগে জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা বাংলাদেশের নাগরিক গাজী আবদুন নূরকেও ভারত পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃহস্পতিবারই কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যেতে বলা হয়েছে। কলকাতার টিভিতে প্রচারিত ‘করুণাময়ী রানী রাসমণি” ধারাবাহিকে রাজচন্দ্রের চরিত্রে অভিনয় করে নূর অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এখন অবশ্য ধারাবাহিকে রাজচন্দ্রের মৃত্যু হওয়ায় তিনি আপাতত অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছেন। নূরও বিজনেস ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন। তবে খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেছে, নূরের সেই ভিসার মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল।

তবুও তিনি কীভাবে ভারতে ছিলেন সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আলাদা ভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।  বাংলাদেশের আরেক অভিনেতা ফেরদৌসের মতো নূরও পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। নূরের বিরুদ্ধে বুধবারই  বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পেশ করা হয়েছিল অভিযোগের স্বপক্ষে একটি ভিডিও। নূরের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কলকাতাস্থ বিদেশি নাগরিক পঞ্জিকরণ অফিস (এফআরআরও)’র কাছে গাজী নূরের ভিসা সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেইসব রিপোর্ট পর্যালোচনার পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গাজী নূরকে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন গাজী নূর।

সেই কারণেই ফেরদৌসের মতো তার ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। তবে  ফেরদৌসের মতো তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে কিনা তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে জানা যায়নি। আগেই জানা গিয়েছিল, দমদম  লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী  সৌগত রায়ের প্রচারে উত্তর ২৪ পরগণার কামারহাটিতে একটি রোডশোতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি এই অভিনেতা। তাকে রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের পাশে প্রচার গাড়িতে দেখা গিয়েছিল।  সেখান থেকে তাকে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা গেছে। এ ছাড়া ভবানীপুরে মদন মিত্রের সঙ্গে একটি মিছিলেও নূর অংশ নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর নূর অবশ্য বলেছেন, মদন মিত্রকে তিনি দাদার মতোই শ্রদ্ধা করেন।

বাংলাদেশ থেকে মায়ের পাঠানো মিষ্টি তাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য ফোন করলে তিনি তাকে কামারহাটিতে যেতে বলেছিলেন। যেহেতু তার কোনো গাড়ি ছিল না তাই সেখানেই তিনি গাড়িতে উঠেছিলেন। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কথাই তিনি সেই প্রচার গাড়ি থেকে করেন নি বলে দাবি করেছেন। গত ১৪ ও ১৫ই এপ্রিল রায়গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে রোডশোতে অংশ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তিনি প্রার্থীর সমর্থনে বক্তব্যও রেখেছিলেন। এর পরেই বিজেপি, সিপিএমসহ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিল। সেক্ষেত্রে  কলকাতাস্থ বিদেশি নাগরিক পঞ্জিকরণ অফিস (এফআরআরও)’র কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল।

এর পরেই মঙ্গলবার রাতে ফেরদৌসের বিজনেস ভিসা বাতিল করে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা  হয়েছে। সেই রাতেই অবশ্য ফেরদৌস ঢাকায় ফিরে গিয়েছেন। গত বুধবার তিনি ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন। পরপর দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন। আর তাই  বাংলাদেশের যে সব অভিনেতা ও অভিনেত্রী এবং শিল্পীরা নিয়মিত ভারতে আসেন তাদের নির্বাচনের সময়ে ভারত আসতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ  কোনো বিষয়ে অংশ না নেয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ সিরিয়ালের বদৌলতে কলকাতা ও বাংলাদেশের দশর্কদের কাছে খুব প্রিয় চরিত্র ‘রানি রাসমণির স্বামী রাজচন্দ্র দাস’। এই চরিত্রের অভিনেতার আসল পরিচয় তিনি বাংলাদেশেরই সন্তান। নাম গাজী আবদুন নূর। বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলায় তার বাবার বাড়ি আর নানাবাড়ি গোপালগঞ্জে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন বাগেরহাটে। নূর মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িত হন বাংলাদেশেই। যশোরের ‘বিবতর্ন’ নাট্যদলের সদস্য ছিলেন তিনি। কলাকাতার অনিক থিয়েটার আয়োজিত গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে ‘রাজা প্রতাপাদিত্য’ নাটক নিয়ে ২০১১ সালে কলকাতায় যান এ অভিনেতা। ওই সময় সেখানে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করার আগ্রহ তৈরি হয় তার। ২০১২ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে স্নাতক করার সুযোগ পান তিনি। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। বাবা গাজী আবদুল মান্নান যখন মারা যান, তখন গাজী আবদুন নূর খুব ছোট।

এক সময় সংসার চালানোর ভার চলে আসে তার ওপর। তাই কলকাতায় শুরু থেকেই কাজের সন্ধানে ছিলেন। শুরুতেই ক্যামেরার পেছনের কাজ করার জন্য অরোরা ফিল্মস-এ নিবার্হী প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পান। তবে খুব বেশি দিন ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে হয়নি তাকে। একসময় সিদ্ধান্ত নেন, পেছনে নয়, ক্যামেরার সামনে কাজ করবেন। শুরুতে নূরের ইচ্ছা ছিল বড়পর্দায় কাজ করার। কিন্তু প্রস্তাব পান ছোটপর্দায়। কালারস বাংলার ‘রেশম ঝাঁপি’ আর জি বাংলার ‘বাক্স বদল’ সিরিয়ালের মূল চরিত্র। কিন্তু রাজি হননি। তার মনে হয়েছিল, দুটোই গতানুগতিক গল্প। তবে ‘রেশম ঝাঁপি’ সিরিয়ালটি না করলেও সেই অডিশনেই জি বাংলার একজন তাকে দেখে পছন্দ করেন। তিনি ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’ সিরিয়ালে রাজচন্দ্র দাশের চরিত্রে অডিশন দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। নূরসহ সে অডিশনে অংশ নিয়েছিল ২০০ জন।

সবাইকে হারিয়ে নূর নির্বাচিত হন রাজা রাজচন্দ্র দাশের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। এরপর থেকেই এ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় সুবাদে নূর এখন দুই বাংলার ব্যাপক জনপ্রিয় অভিনেতা। এদিকে এরই মধ্যে তিনি বড়পর্দায়ও নাম লিখিয়েছেন। তবে সেটা বিদেশে নয়, দেশের ছেলে নিজের দেশের ছবি দিয়েই বড়পদার্য় যাত্রা শুরু করেছেন। সেলিম আল দীনের কাহিনী অবলম্বনে নারগিস আক্তারের ‘যৈবতী কন্যার মন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন এই প্রতিভাবান তরুণ অভিনেতা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status