প্রথম পাতা

ভারতে ভোটে হাঙ্গামা, ইভিএম বিভ্রাট

কলকাতা প্রতিনিধি

১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে বৃহস্পতিবার ইভিএম বিভ্রাটের পাশাপাশি সংঘর্ষ, গুলি ও টিয়ারগ্যাস চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। ছত্তিশগড়ে মাওবাদীরা আইডি বিস্ফোরণ করে ভোট কর্মীদের আটকাতে চেয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এদিনের নির্বাচনে ব্যাপক সংঘর্ষ, রাস্তা অবরোধ, বুথের লাইনে গুলি এবং বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে। বিরোধী প্রার্থীও আক্রান্ত  হয়েছেন শাসক দলের হাতে। এদিন শুরুতেই  বিভিন্ন রাজ্য থেকে ইভিএম বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। ফলে অনেক জায়গাতেই ভোট দেরিতে শুরু হয়েছে।

তামিলনাডুতে ৩৫০টি ইভিএম পরিবর্তন করতে হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। এদিন সকালে ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম বিভ্রাটের মুখে পড়তে হয়েছে রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সিকে। পরে নতুন ইভিএম আসায় ১০ মিনিট পরে ভোট দিয়েছেন তিনি। এদিকে ইসলামপুরে ১৩৫ নম্বর বুথে ভিভিপ্যাট বিকল হয়ে পড়ায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ইভিএম খারাপের অভিযোগ পাওয়া গেছে শিলিগুড়ির বুথেও। ফলে ভোট শুরু হতে ১ ঘণ্টা দেরি হয়েছে সেখানে। ছত্তিশগড়ে বুথের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক পোলিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে।

এদিন নির্বাচনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় দেশের যুবকদের বেশি বেশি করে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।  দ্বিতীয় দফায় ১১টি রাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৫টি লোকসভা আসনে ভোট নেয়া হচ্ছে। তামিলনাড়ুর ভেলোর এবং ত্রিপুরার পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এদিনের নির্বাচনে ১৫৯৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে। যে সব রথি- মহারথির ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে তাদের অন্যতম হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনতা দল এস নেতা এইচ ডি দেবেগৌড়া, বিজেপির হেমামালিনী, কংগ্রেসের রাজ বাব্বর, কার্তিক পি চিদাম্বরম, সুস্মিতা দেব, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লাহ, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, ডিএমকের এ রাজা,  কানিমোঝি, সিপিআইএমের মো. সেলিম প্রমুখ। দ্বিতীয় দফায় তামিলনাডুর ১টি আসন বাদে বাকি ৩৮টি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে। একই সঙ্গে এদিন তামিলনাডু বিধানসভার ১৮টি আসনের উপ-নির্বাচনেরও ভোট নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিহারের ৫টি, আসামের ৫টি, ছত্তিশগড়ের ৩টি, জম্মু ও কাশ্মীরের ২টি, কর্ণাটকের ১৪টি, মহারাষ্ট্রের ১০টি, মণিপুরের ১টি, উত্তরপ্রদেশের ৮টি, পণ্ডিচেরির ১টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৩টি আসনে ভোট নেয়া হচ্ছে। ওড়িশা বিধানসভার ৩৫টি আসনেও ভোট নেয়া চলছে।
ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে ভোট নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও বহু বুথের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি গোলমাল হয়েছে দার্জিলিং কেন্দ্রের চোপড়ায়।  ভোটদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে সেখান থেকে। শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ভোটাররা। একসময় দলীয় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক ও কর্মীরা।  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার  চেষ্টা করেছে পুলিশ। কিন্তু বিক্ষোভ থামানো যায়নি। চার ঘণ্টা পর কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছলে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এদিন বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ঘুঘুডাঙায় একটি বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।  বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরাই এই গুলি চালিয়েছেন। ইসলামপুরে রায়গঞ্জের সিপিআইএম প্রার্থী  মোহাম্মদ সেলিম আক্রান্ত হয়েছেন। দুষ্কৃতকারীরা পালানোর সময় তার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। ছাপ্পা ভোট দেয়ার খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।  ঘটনার খবর পাওয়ার পরই নির্বাচন কমিশন রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, রায়গঞ্জের হেমতাবাদের মহজমপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বাসিন্দারা। পুলিশের সঙ্গে বচসা হয় মানুষদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পৌঁছেছে কুইক রেসপন্স টিম। দার্জিলিং কেন্দ্রের  গোয়ালপোখরের কাটা ফুলবাড়িতে  ভোটারদের বাধা দেয়ার অভিযোগ এসেছে। সেখানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যম।  বাঁশ, লাঠি দিয়ে  মেরে মাথা ফাটানো হলো সাংবাদিকের। তবে গোটা ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন এবং  কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির  চেয়ারম্যান ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিনের ভোট নিয়ে বলেছেন, নির্বাচন নির্বিঘ্নে না করার জন্য রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা উঠেপড়ে লেগেছেন। যেখানে বাহিনী পাঠানোর দরকার ছিল অনেক জায়গাতেই সেখানে বাহিনী  দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status