দেশ বিদেশ

কন্ট্রোল ডিমোলেশিং প্রক্রিয়ায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙার চিন্তা

দীন ইসলাম

১৮ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

আগামী তিন মাসের মধ্যে বহুল আলোচিত ‘বিজিএমইএ ভবন’ ভাঙতে চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তাই দুইটি বেজমেন্টসহ ১৫তলা ভবনটি ভাঙতে কোটেশন পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করেছে তারা। ভবনটি ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালমাল কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আগামী ২৪ এপ্রিল বিকাল চারটার মধ্যে সীলমোহর করা খামে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবরে কোটেশন আবেদন করতে বলা হয়েছে। কোটেশন দরপত্রের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহুতল ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত কাগজপত্র দাখিল করতে হবে, তিন মাসের মধ্যে ভবন ভেঙে মালামাল অপসারণ করতে হবে, ভবন ভাঙার জন্য কোনো আলাদা অর্থ দেয়া হবে না। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভবন ভাঙবেন তারাই মালামাল কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করতে পারবেন। মালামাল কেনার ক্ষেত্রে যারা সর্বোচ্চ মূল্য উল্লেখ করবেন তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে এবং কোটেশন মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসাবে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাংগস ভবন অপসারণ নিয়ে তৈরি হওয়া ক্যাজুয়ালিটি মনে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য কোন ধরনের ঝুঁকি নেয়া হবে না। সঠিকভাবে অপসারনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিজিএমইএ ভবন সিলগালা করে দেয়ায় ভবনটি এখন রাজউকের অধীনে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গতে রাজউকের প্রকৌশলীরা চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথম পর্যায়ে চিন্তা ছিল চাইনিজ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কন্ট্রোলড ডিমোলেশিং পদ্ধতিতে এটি অপসারণ করার। অপসারণের অংশ হিসেবে এ ভবনটির ইউটিলিটি সার্ভিস বিচ্ছিন্ন করে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে কোটেশনের মাধ্যমে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা যাচাই করা হবে। রাজউকের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, কন্ট্রোলড ডিমোলেশিং একটি প্রসেসের বিষয়। এটি একটি বিশাল ভবন। এখানকার গ্লাসগুলো আগে খুলে ফেলতে হবে। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় আছে, যা সম্পন্ন করার পরই অপসারণ করা হবে। এরই মধ্যে ভবন অপসারণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এটি শেষ করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিজিএমইএ ভবন সিলগালা করে দেয় রাজউক। এদিকে গতকাল নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে। তবে কী পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, এই ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে আগ্রহীদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আগ্রহীদের প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ২৫ এপ্রিলের পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে এবং তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই স্থানটি সম্পূর্ণ খালি করে দেয়া হবে। এদিকে প্রায় দুই দশক আগে জলাধারের ক্ষতি করে বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হয় ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন। হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয়। এরপর ওই রায় আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। হাই কোর্ট রায়ে বলেছিল, বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে। ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫  কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরই বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৮ নভেম্বর শুরু হয় ভবন তৈরির কাজ। ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন। পরিবেশের ক্ষতিসহ নিয়ম না মেনে বহুতল এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে এমন অভিযোগে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ১৫ তলা ভবনটি ৬ মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলার চূড়ান্ত নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর কয়েক দফা সময় চেয়ে নেয় বিজিএমইএ। মানবিক বিবেচনায় কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে মঙ্গলবার থেকে ভবনটি রাজউকের অধীনে রয়েছে। সহসাই এটি ভাঙ্গার কাজ শুরু হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status