শেষের পাতা

চীনে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের শীর্ষ সম্মেলন

যোগদান প্রশ্নে বিভক্ত দক্ষিণ এশিয়া

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

চীনের আলোচিত ড্রিম প্রজেক্ট বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ- এর আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। ভারত গোড়া থেকেই ওই উদ্যোগ-প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। সম্মেলনে যোগদান দূরের কথা। অবশ্য বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। ওই ৪ দেশ আগে থেকেই বহুল আলোচিত প্রকল্পটির সঙ্গে রয়েছে। বাকি ছিল ভুটান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি এলামনাই ডা. লোটে শেরিংয়ের সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সফরের পর মনে করা হয়েছিল দেশটি অবস্থানে কোন  পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু না, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বিমান ওঠার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে দিল্লির পথেই হাঁটছে থিম্পু। ভুটান ওই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না এমন ধারণাই দিয়েছে দিল্লির সংবাদ মাধ্যম।

আগামী ২৬ এবং ২৭শে এপ্রিল বেইজিংয়ে শীর্ষ সম্মেলনটি হওয়ার কথা। চীনের বেল্ট এন্ড রোড উদ্যোগ-প্রকল্প একটি মেগা আন্তর্জাতিক প্রকল্প যা বিশ্বের সকল মহাদেশকে সড়ক পথে যুক্ত করবে। ২০১৭ সালের মে মাসে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য সামনে রেখে বেইজিংয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা মিলিত হয়েছিলেন। এর পর থেকে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতিতে চীনকে একটি বিশেষ সক্রিয় কূটনীতিতে অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। চীনা রাষ্ট্রদূতরা এর আগে সার্ক রাজধানীগুলোতে যে কোন ধরনের সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের পুরনো ভাবমূর্তি ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর গত ২৩শে জানুয়ারি বলেন, বেল্ট এন্ড রোড উদ্যোগ নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বরং সকল দেশের স্বার্থে ভারত তাতে অংশ নিতে পারে। সোমবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মানবজমিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বলেন, বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। চীন সরকারের তরফে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একাধিক মন্ত্রীর সেখানে বিশেষ আমন্ত্রণ রয়েছে। সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের এক বা একাধিক প্রতিনিধি যোগ দিতে পারেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে কোন মন্ত্রী নেতৃত্ব দেবেন তার নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ভারত ও ভূটানের অবস্থান সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের একাধিক লোককে তারা দাওয়াত দিয়েছে। তাই আমরা যাচ্ছি এটা নিশ্চিত।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণ: এদিকে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বেল্ট এন্ড রোডে ইনিশিয়েটিভ বিষয়ক সর্বশেষ যে রিপোর্ট করেছে তাতে জানিয়েছে, আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান প্রশ্নে ভারত ‘না’ বলার পর এখন ভুটানও সেই ‘না’-এর পথ অনুসরণ করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও ভুটান একদিকে, অন্যদিকে রয়েছে নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশ। শেষের চারটি দেশ ‘হ্যা’ বোধ অবস্থানে। অর্থাৎ ওই ৪ দেশ চীন সম্মেলনে যোগ দেবে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত প্রতিবেদনে চীন ও ভারতের টানাপোড়েনের মধ্যে দুটি দেশের প্রতিবেশীদের দ্বারা একটি নতুন ধরনের মেরুকরণের ইঙ্গিত মিলেছে। রিপোর্ট বলছে, ১৪ই এপ্রিল ভারত যখন চীনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে তখন তার বেশিরভাগ প্রতিবেশী মালদ্বীপ শ্রীলংকা নেপাল ও বাংলাদেশ ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে।

ওই সম্মেলনে চল্লিশটির মতো দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান অংশ নিচ্ছেন। এত বড় ওই আয়োজনে ভুটানের অংশ না নেয়ার বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণ হচ্ছে- চীনের সঙ্গে ভুটানের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তার পরেও চীন দেশটিকে তার একটি সম্ভাবনাময় অংশীদার হিসেবে দেখছে। এবং তার এটাও ভালো জানা আছে যে, ভারতীয় স্টাবলিশমেন্ট তাদের সঙ্গে কোনো রকমের বোঝাপড়া মেনে নাও নিতে পারে। ২০১৭ সালে ভুটান বেল্ট অ্যান্ড রোডের উদ্যোগ নাকচ করে দেয়। কারণ জম্মু এবং কাশ্মীরের পাকিস্তন নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান চীন ইনোমিক করিডোর যাওয়ার অর্থই হবে ভারতের সার্বভৌমত্বকে খাটো করা। গত ১২ মাস ধরে চীন ভুটানের নতুন সরকারের সঙ্গে নতুন করে একটা সম্পর্ক তৈরি করতে কোন চেষ্টাই বাকি রাখেনি। চীনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভুটানকে ভারতীয় প্রভাব বলয় থেকে যতটা সম্ভব বের করে আনা। কিন্তু তা হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status