শেষের পাতা

রাবি শিক্ষক হত্যা

৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

আসলাম-উদ-দৌলা/জহিরুল ইসলাম জাহিদ, রাজশাহী থেকে

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলায় তিন জনের ফাঁসি এবং বাকি আট আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। গতকাল  এই রায় ঘোষণা করেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার। রায় ঘোষণার পর আদালতের পর্যবেক্ষণে রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে রাবি শিক্ষক শফিউলকে খুন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক শফিউলের ছেলে সৌমিন শাহরিদ।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাজশাহীর কাটাখালি পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সামাদ পিন্টু ও যুবদল কর্মী সবুজ। এরমধ্যে সবুজ শেখ পলাতক রয়েছেন। অন্য দুজন রায়ের সময় আদালতে ছিলেন।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, সিরাজুল ইসলাম, আল মামুন, আরিফ হোসেন, সাগর হোসেন, জিন্নাত আলী ও ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, পিন্টুর স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে কোনো কারণে খারাপ আচরণ করেন অধ্যাপক শফিউল। বিষয়টি রেশমা তার স্বামী পিন্টুকে বলেন। পরে পিন্টু এ হত্যার পরিকল্পনা করে এবং সাজাপ্রাপ্তরা তিনজন মিলে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মর্তুজা বলেন, কোনো সাক্ষী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আদালতে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। আদালত শুধু পুলিশ তদন্ত ও রেশমার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির ওপর রায় দিয়েছেন। যে তিনজনের সাজা হয়েছে তাদের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।

২০১৪ সালের ১৫ই নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে অধ্যাপক শফিউলকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহের তীর ছিল ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দিকে। এমনকি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপককে ক্যাম্পাসের পাশে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়ির সামনে হত্যার পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের বার্তাও আসে। পুলিশের তদন্তও সেদিকে এগোচ্ছিল। পরে র‌্যাবের মাধ্যমে তদন্তের বাঁক বদল ঘটে। র‌্যাব যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করে, বিভাগের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের প্রতিশোধ নিতে শফিউলকে হত্যা করা হয়।

নাসরিন আক্তার রেশমা নামে ওই সেকশন অফিসারের স্বামী হলেন দণ্ডিত পিন্টু। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি। আর বেকার যুবক সবুজকে এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মানিক কাটাখালি এলাকার চোরাচালান, বালুমহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে ভাড়াটিয়া হিসেবে কাজ করতেন বলে পুলিশের ভাষ্য। পিন্টুর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত হন তিনি।

র‌্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ই নভেম্বর অধ্যাপক শফিউল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলে পিন্টু তাকে অনুসরণ করেন এবং মোবাইল ফোনে তার গতিবিধি অন্যদের জানান। সেদিন মোটরসাইকেলে এক সহকর্মীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছিলেন শফিউল। ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরে সহকর্মীকে নামিয়ে দিয়ে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। মহাসড়ক থেকে ২০০ গজ দূরে বাড়িতে যেতে কাঁচা রাস্তায় নামার পর তিনি হামলার মুখে পড়েন।

২০১৫ সালের ৩০শে নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে অধ্যাপক শফিউলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে দেয়া দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের স্ট্যাটাসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, পিন্টুর স্ত্রী রেশমার নামও ছিল। তখন আটক হওয়ার পর রেশমা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। তবে রায়ে তিনি খালাস পেয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রারের করা এই মামলায় গত ১৩ই মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছিল। এ মামলায় ৩৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় দিলো।
হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে সন্দেহ ছেলের: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লালনভক্ত অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তার একমাত্র ছেলে সৌমিন শাহরিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে এত ঠুনকো কারণে হত্যা করা হতে পারে না উল্লেখ করে আরো গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।

রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সৌমিন শাহরিদ বলেন, ‘রায় নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশা ছিল না। বিজ্ঞ আদালত তদন্তের মাধ্যমে যতটুকু সঠিক মনে করেছেন তার ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। রায় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু আমার তদন্ত নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তদন্তে খুনের সঠিক উদ্দেশ্য বা কারণ উঠে আসে নি; যৌক্তিকভাবে উঠে আসে নি। সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ রয়েছে। খুনের ঘটনাটি আসলে ব্যক্তিগত না, রাজনৈতিক না প্রাতিষ্ঠানিক; না অন্যকোনো ব্যাপার জড়িত। আমার কাছে মনে হয়েছে এতটা অগভীর না এ খুনের কারণ; এতটা স্থূল না।’
শাহরিদ বলেন, ‘এ ধরনের একটি স্থূল কাজের জন্য একজন অধ্যাপককে খুন করা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। সেদিক থেকে আমি তদন্তকে প্রশ্ন করবো। রায়কে নয়।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status