শেষের পাতা

বাংলাদেশ থেকে বৃটেন অবকাঠামো খাতে আগ্রাসীভাবে যুক্ত হচ্ছে চীন

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে বৃটেন পর্যন্ত অবকাঠামোগত প্রকল্পে আগ্রাসীভাবে যুক্ত হচ্ছে চীন। উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) অথবা নিউ সিল্ক রোড প্রকল্পের অংশ হিসেবে তারা শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ 
করে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্পে। এতে ক্রমবর্ধমান হারে যুক্ত হয়ে পড়ছে কিছু ইউরোপীয় দেশও। তবে অন্যরা বেইজিংয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান। এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র ইয়াহু ফাইন্যান্সকে বলেছেন, একই সঙ্গে চীন হলো উন্নয়ন অংশীদার এবং ‘সিস্টেমিক রিভাল’। ওদিকে এ মাসের শেষের দিকে বেইজিংয়ে হতে যাচ্ছে বিআরআই বিষয়ক সামিট।

তাতে ভারত যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধি পাঠাবে না সেখানে। এ খবর দিয়েছে ইয়াহু ও ভারতের ইকোনমিক টাইমস । ইয়াহু ফাইন্যান্স লিখেছে, গত মাসে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ইতালি। এর মধ্য দিয়ে বিআরআই প্রকল্পে জি-৭ অর্থনীতির এমন প্রথম দেশে পরিণত হলো তারা। এই জি-৭ অর্থনীতির আওতাভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র। ওই চুক্তির ফলে সহযোগিতার ব্যাপক ক্ষেত্র বিস্তৃত হবে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হবে। চীনের একটি নির্মাণ কোম্পানি, ইতালির বন্দরগুলো এবং ইতালির কৃষি খাতও এই সহযোগিতায় যুক্ত হবে।


চীনের সঙ্গে ইতালির কাজ করার এমন ইচ্ছার কারণে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওই চুক্তিটি উচ্চমাত্রায় বিতর্কিত। ওই চুক্তিতে রয়েছে অস্বচ্ছ অর্থনৈতিক প্র্যাকটিসের কথা এ বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সমালোচকরা।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মুখপাত্র ইয়াহু ফাইন্যান্সকে বলেছেন, চীন একই সঙ্গে একটি সহযোগিতার অংশীদার, যার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রয়েছে অনেক লক্ষ্যে নিবিড়তা। চীন একটি সমঝোতামূলক অংশীদার, যার সঙ্গে স্বার্থের সমতা খোঁজার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। পাশাপাশি চীন হলো প্রযুক্তিগত নেতৃত্বের দিক দিয়ে একটি অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে চীন একটি সিস্টেমিক রিভাল।

জার্মান থিংক ট্যাংক মারকেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের রিসার্চ সহযোগী থমাস ইডার এর আগে বলেছেন, দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে চীনের। সেখান থেকেই বিআরআই-এর উত্থান। তিনি বলেছেন, এটা একটা ধারণায় পরিণত হয়েছে যে, যতদিন শতকরা ৭.৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি থাকবে ততদিন চীনা সরকারের বৈধতা থাকবে। আসলে ঘটনা সেটা নয়। তাই তারা পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বব্যাপী সফলতা, আভিজাত্য ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বৈধতার দ্বিতীয় ভিত্তিটি রচনা করছে।

তবে এরই মধ্যে চীনের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। হোয়াইট হাউসের শীর্ষস্থানীয় একজন মুখপাত্র বলেছেন, চীনের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোকে বৈধতা ধার দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না ইতালি সরকারের। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি জোনাথন কোহেন মার্চে বলেছেন, আফগানিস্তান সমস্যার সমাধানের জন্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সামনে আনার চেষ্টা করেছে চীন। তারা মনে করছে তারা আফগানিস্তানের দুর্নীতি, ঋণের ভারে নুয়ে পড়া, পরিবেশগত ক্ষতি ও স্বচ্ছতার অভাবের বিষয় জানে। তিনি এজন্য চীনের কড়া সমালোচনা করেছেন।

এ মাসের শেষের দিকে বেইজিংয়ে হতে যাচ্ছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিষয়ক সামিট। সেই সামিটে উচ্চ পর্যায়ের কর্তকর্তাদের পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র। এ কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

ওদিকে অনলাইন ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের বৈঠকে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। তবে তার প্রতিবেশী বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল এতে যোগ দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। এই সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন ৪০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। তবে এতে যোগ দিচ্ছে না ভুটান। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছেন, বিআরআই ফোরামে যোগ না দেয়ার সম্ভাবনা বেশি ভুটানের। গত ১২ মাসে থিম্পুর নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ খুব বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। উদ্দেশ্য, দেশটি ভারত প্রভাবিত বলয়ে। সেখান থেকে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়া। চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই ভুটানের। তবে তারা চীনকে অর্থনৈতিক বিস্তারে একটি শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে দেখে। তারা এটা জানে যে, ওই ফোরামে তারা যোগ দিলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি হতে পারে।

২০১৭ সালের ফোরামে যোগ দেয়া থেকে বিরত ছিল ভুটান। এর মধ্যদিয়ে তারা নিজেদের ভারতের কাছের করে দেখাতে চেষ্টা করে। ভারত মনে করে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর, যা পাস করবে জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলের ভিতর দিয়ে, সেই করিডোর ভারতের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করবে। তাই ভারত ওই সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status