দেশ বিদেশ

মুসলিম ডেটিং অ্যাপ বাংলাদেশে যেভাবে বেড়ে উঠলো মুজম্যাচ

মানবজমিন ডেস্ক

২৭ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

মুসলিমদের জন্য বৃটেনের জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপ মুজম্যাচ এবার বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্তত ৯০টি দেশে এই অ্যাপ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। কিন্তু রক্ষণশীল সমপ্রদায়ের জন্য তৈরি এই ডেটিং অ্যাপ কীভাবে উঠে আসলো তা নিয়ে সমপ্রতি মুজম্যাচের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শাহজাদ ইউনাস বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি এই অ্যাপ তৈরি ও এর বেড়ে ওঠা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
আজ থেকে ২ বছর আগের কথা। শাহজাদ ইউনাস তখন ৩২ বছর বয়সের বৃটিশ উদ্যোক্তা। তিনি গিয়েছিলেন তার অ্যাপে বিনিয়োগকারী খুঁজতে। তাকে তখন বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছিল। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সামনে ইউনাস বলেছিলেন, মুসলমানরা ডেট করে না, তারা বিয়ে করে। শাহজাদ যখন তার বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মাঝেমধ্যেই বিনিয়োগকারীরা হাসিতে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তিনি একেবারে খোলামেলা কথা বলছিলেন। তবে এতে কাজ হয়েছিল। সেখান থেকে মুজম্যাচ পেলো ১৫ লাখ ডলার।
কিন্তু ২০১৩ সালে ফিরে গেলে এক ভিন্নচিত্র পাওয়া যায়। সে বছর বিনিয়োগকারী নয়, শাহজাদকে বরং নিজেকেই রাজি করাতে হয়েছিলো। ওই সময়ে তিনি লন্ডনে একটি ব্যাংকে কাজ করতেন। তিনি কাজটিকে ভালোবাসতেন। তবে ইউনাস অন্য কিছু ভাবছিলেন। তার মনে হয়েছে, যেসব মুসলমান বিয়ের জন্য আরেকজন মুসলমান সঙ্গী খুঁজে থাকেন তাদের জন্য ভালো কোনো ডেটিং অ্যাপ বাজারে নেই। বিবিসিকে ইউনাস বলেন, সে সময়ে মুসলমানদের জন্য হয় খুব সাধারণ ধরনের ওয়েবসাইট ছিল। এ ছাড়া বেশ বড় কিছু ডেটিং অ্যাপ ছিল কিন্তু সেগুলো আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ার মতো ছিল না। সেখান থেকেই এই ডেটিং অ্যাপ তৈরির ধারণা আসে ইউনাসের মাথায়। তিনি যুক্ত করেন, মুসলিম সমপ্রদায়ের স্ত্রী বা স্বামী খুঁজতে ঘটকদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এখনো অনেকে তাই করেন। তারা এক বাড়ির ছেলের সঙ্গে আরেক বাড়ির মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু ইউনাস তৈরি করেছিলেন এক ডিজিটাল ম্যাচমেকার অ্যাপ। এটি সেই সব মুসলমানদের জন্য, যারা বিয়ে করতে মুসলমান পাত্রপাত্রী খুঁজছে।
২০১৩ সালে চাকরি হারালেন শাহজাদ। আর তখনই তিনি ঠিক করলেন এই অ্যাপ নিয়ে তিনি এবারে মাঠে নামবেন। তিনি জানান, আমি প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতাম আর ঘুমাতে যেতাম রাত ২টায়। আমি বাড়িতে শোবার ঘরে বসেই কাজ করতাম। কীভাবে অ্যাপ বানাতে হয়, তা আমি একেবারে শূন্য থেকে শিখেছি। কিন্তু আমি জানতাম আমাকে ভালো একটি অ্যাপ বানাতে হবে। পুরো দুনিয়াতে ১৮০ কোটি মুসলমান রয়েছে, বিশাল বাজার। এরপর, ২০১৪ সালে খুব অনাড়ম্বরভাবে অ্যাপটি শুরু করেন। শুরু করেন মার্কেটিংও। প্রতি শুক্রবার নামাজ পড়ার দিনে সে মসজিদে মসজিদে যেতেন আর সবাইকে অ্যাপটির কার্ড দিতেন। এ ছাড়া যেকোনো মুসলিম পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়ে গাড়ির কাঁচে কার্ড আটকে দিতেন।
কিন্তু দুই মাসের মাথায় তিনি দেখলেন মাত্র ১০ জন মুজম্যাচ ব্যবহার করছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। তিনি দেখেছেন হাজার হাজার মানুষ এটি ব্যবহার করেছে, কারণ মানুষের মুখে মুখে কথা ছড়িয়েছে। লোকজন একটা সময় শাহজাদকে বলা শুরু করলো যে ঠিক কীভাবে তারা তাদের ভবিষ্যৎ স্ত্রী বা স্বামীকে খুঁজে পেয়েছে। আর এভাবেই আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো এই অ্যাপ।
তিনি বলেন, আমি যখন এসব সাফল্যের কথা শুনতে পেলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম আমি ঠিক পথে আছি। আমি নিশ্চিত হলাম অ্যাপটি দাঁড়িয়ে যাবে। ব্যবসায়ের অংশীদার রায়ান যোগ দিলেন ২০১৬ সালে। বয়স মাত্র ২৫ হলেও অ্যাপ বানাতে তিনি ছিলেন একজন ঝানু লোক। দু’জনে মিলে তারা ‘মুজম্যাচ’কে নতুন করে সাজালেন। আরো ২২টি প্রোফাইল প্রশ্ন তারা যোগ করলেন- যেমন একজন ব্যবহারকারী কতটা ধার্মিক, অথবা দিনে কয়বার নামাজ পড়েন। এসব প্রশ্ন মুসলিমদের কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুজম্যাচ এমন সুযোগ দিয়েছিলো যে, ব্যবহারকারীরা চাইলে প্রোফাইল ছবি নাও দিতে পারতেন, অথবা খানিকটা অস্পষ্ট করে দিতে পারতেন।
অ্যাপে যে চ্যাট হতো, তা তাদের সম্মতিতে বাবা-মায়ের যেকোনো একজন কিংবা একজন অভিভাবকের কাছে পাঠানোর অপশনও এতে ছিল। শাহজাদ বলছেন, একজন মুসলমান না হলেও রায়ান বুঝতে পেরেছিলেন অ্যাপটি ঠিক কেমন হবে। ‘উড লাইক টু মেট’ ডেটিং অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা ইডেন ব্ল্যাকম্যান বলছেন, বিশেষ ধরনের ডেটিং অ্যাপগুলোর সামনের কাতারেই রয়েছে মুজম্যাচ।

মুজম্যাচ তাদের দ্বিতীয় অফিসটি খুলেছে বাংলাদেশে। তাদের বিজনেস মডেলটিকে বলা হচ্ছে ‘ফ্রিমিয়াম’ - অর্থাৎ বেসিক সার্ভিসটি পাওয়া যাবে বিনামূল্যে, কিন্তু এরচেয়ে বেশি চাইলে মাসে ১০ পাউন্ড করে দিতে হবে। অতিরিক্ত সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে যত খুশি সংখ্যক প্রোফাইল দেখা ও আপনার নিজের প্রোফাইল আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো।  কোম্পানিটি বলছে, তাদের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ৪৫ লাখ পাউন্ড। শাহজাদ চাইছেন ৪০ কোটি মুসলিমের কাছে অ্যাপটি পৌঁছে দিতে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে হাজার হাজার বিয়ে এবং বাচ্চা হয়েছে। তাদের কথা ভাবলেই মনে হয় আমাদের শুরুর কষ্ট সার্থক হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status