এক্সক্লুসিভ

সিলেটে লিজায় ‘ক্ষুব্ধ’ শামীমা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৭ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

সিলেটের আলোচিত নারী লিজা আক্তারের ওপর ক্ষুব্ধ সাবেক কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীন। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেত্রীদের ‘ধাক্কাধাক্কি’ করায় ক্ষুব্ধ লিজাকে মারধর করেন শামীমা। এতেও তার রাগ কমেনি। হঠাৎ করে উড়ে এসে নিজেকে ‘মহিলা লীগ’ নেত্রী দাবি করায় লিজাকে এখন তিনি খুঁজছেন। শামীমা বলেছেন- ‘অবাঞ্ছিত কারো জায়গা হবে না মহিলা আওয়ামী লীগে।’ এদিকে মারধরের ঘটনা লিজাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শামীমা স্বাধীন তাকে সবার সামনে মারধর করেছেন। পুলিশ সামনে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল সব  বয়সী মানুষের গন্তব্য ছিল সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান সিলেটের সাবেক এমপি ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা জেবুন্নেছা হকসহ সিনিয়র নেত্রীরা। প্রথমে তারা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় লিজা আক্তার তাদের সঙ্গে ফুল দিতে ধাক্কাধাক্কি করেন। পরে যখন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হচ্ছিল তখন লিজা আক্তার ফের ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এ সময় লাইনের সামনে দাঁড়ানো শামীমা স্বাধীন ধাক্কাধাক্কি না করতে বলেন। পাশাপাশি বহিরাগতদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

শামীমা স্বাধীন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘নিষেধ দেয়ার পরও বারণ শোনেনি লিজা। নিজেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী জাহির করতে সে ধাক্কা দিয়ে সামনে চলে আসে। এসেই আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে আমি ক্ষুব্ধ হই। এবং তাকে ওখান থেকে বের করে দিতে প্রক্রিয়া চালাই। কিন্তু সে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করে। একপর্যায়ে আমিও তাকে মারধর করি। পরে উপস্থিত লোকজন তাকে শহীদ মিনার থেকে বের দেন। ফুল দেয়ার পর বাইরে এসে আর তাকে পাইনি।’ উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন- লিজা আক্তার আওয়ামী লীগের কেউ না। সে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী দাবি করতে ফুলের তোড়া দেয়ার সময় এসে লাইনে দাঁড়ায়। তাকে বার বার বারণ করার পরও কথা মানেনি। উল্টো আওয়ামী লীগের নেত্রীদের ওপর সে হামলা চালায়। এ নিয়ে কিছুটা হট্টগোল হয়েছিল। পরে উপস্থিত লোকজন লিজাকে বের দেন। ঘটনার পর লিজা আক্তার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও নিজেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলে দাবি করেন। বলেন- ‘শামীমা স্বাধীন তাকে মারধর করেছে। তার চুল ধরে টানাটানি করে। এ সময় উপস্থিত লোকজন শামীমাকে আটকান। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেন লিজা আক্তার।’ সিলেটে লিজা আক্তারকে বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা চিনেন।

কয়েক বছর ধরে প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু কোন মাধ্যমে তিনি কাজ করেন সেটি স্পষ্ট করেন না। নিজেকে কখনো পত্রিকা, কখনো অনলাইনের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। প্রায় মাস খানেক আগে তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে সুরমা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে কয়েক দফা অভিযোগ দিয়েছিলেন। লিজাও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এই অভিযোগের পর থেকে আর সুরমা মার্কেটে যান না লিজা আক্তার। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দক্ষিণ সুরমার সংরক্ষিত এলাকা থেকে প্রার্থী হন। এমনকি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হতে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ক্রয় করেন। এরপর থেকে লিজা আক্তার নিজেকে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বলে পরিচয় বলেন। বন্দরবাজারকেন্দ্রিক কিছু ভুয়া সাংবাদিক নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে নানা কাজে জড়িত লিজা। শামীমা স্বাধীনও সিলেটের পরিচিত মহিলা। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের বিগত পরিষদের মহিলা কাউন্সিলর ছিলেন।

বর্তমানে তিনি মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদিকার পদে আছেন। আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে এখন পরিচিত শামীমা স্বাধীন। শামীমা জানালেন- গতকাল শহীদ মিনারে লিজা আক্তার নিজেকে সাংবাদিক হিসেবেও পরিচয় দেয়। সে কোন পত্রিকার সাংবাদিক সেটি নিজেও বলতে পারে না। প্রভাব খাটাতে সে প্রায় সময় নিজেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়। কয়েক দিন তাকে দলে ঢুকাতে আমাকে বলেছিল। কিন্তু আমি এতে সাড়া দেইনি।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status