প্রথম পাতা

২৮ বছর পর ডাকসু কার্যকর

প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব নুরের আপত্তি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ আটাশ বছর পর কার্যকর হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। গতকাল ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম সভা হয়েছে। ডাকসু ভবনে কেন্দ্রীয় সংসদের এবং স্ব-স্ব হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে হল সংসদের কার্যকরী পরিষদের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট বলে খ্যাত ডাকসুর প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব তোলা হয়েছে। তবে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে  ডাকসু কমিটি হওয়ায় এ কমিটির মাধ্যমে সদস্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য সম্মানহানির উল্লেখ করে আপত্তি তোলেন ভিপি নুরুল হক নুর।

সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যকরী পরিষদ সভা শুরু হয়। চলে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত। একই সময়ে স্ব-স্ব হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় হল সংসদের কার্যকরী পরিষদ সভা। সভা শেষে ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা ধানমণ্ডি-৩২ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও স্মৃতি চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ডাকসুর নির্বাচিতরা। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ডাকসু থেকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করার দায়িত্ব দেয়া হয় ভিপি, জিএস, এজিএসকে। সিদ্ধান্ত হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে ডাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠানের। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অতিথি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় ক্যাম্পাসে চলাচলকারী রিকশাগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা, ভাড়া নির্ধারণ, ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয় গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতির ইতি টানার।

সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, দীর্ঘ তিন দশক পর গত ১১ই মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের নিয়ে কার্যকরী পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হলো। আজকের সভার মধ্য দিয়ে ডাকসুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। ডাকসুর গঠনতন্ত্র বলে যেদিন কার্যকরী পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন থেকে ৩৬৫ দিন গণ্য হবে। এর মাধ্যমে ডাকসুর শুভ যাত্রা শুরু হলো। আমি আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করি ডাকসুর নবনির্বাচিতদের। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত প্রীতি অনুভব করি এটি দেখে যে, বৈঠকে তাদের আলাপচারিতা দেখলাম, বক্তব্য শুনলাম। সেগুলো এতই আশাপ্রদ যে, তাদের মূল্যবোধ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন বিষয়ে তারা আলোচনা করেছে।

এদিকে ডাকসু ভবনে যখন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সভা চলছে তখন ডাকসু ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেছে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলো। পুনঃনির্বাচন দেয়া, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের পদত্যাগ, সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ ছাত্রদের থেকে নির্বাচিত করার দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ডাকসু ভবনের বাইরে প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ফেডারেশন। একই সময়ে চার দফা দাবিতে মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মৌন মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিক্ষোভ করেছে জাসদ ছাত্রলীগ, টিএসসির রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে লালকার্ড প্রদর্শন করেছে বামজোটের প্রার্থীরা।

প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করা নিয়ে মতবিরোধ
প্রথম সভাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব করা হলেও ভিপির আপত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যেটি আগামী সভায় চূড়ান্ত হবে। গতকাল ডাকসুর কার্যকরী পরিষদ সভায় প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব করেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি। প্রস্তাবে ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন ভেটো দেন। সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হলেও আগামী সভায় চূড়ান্ত করার জন্য রেখে দেয়া হয়। এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। আপনারাও দেখেছেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বলেছে- এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ।

আমরা বলেছি যে, এ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সেরকম একটি জায়গায় থেকে আমি মনে করি যে, প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা উচিত নয়। সে জায়গা থেকে আমিসহ কয়েকজন বিরোধিতা করেছেন। আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। সুতরাং ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ দেয়াটা তার জন্য বড় কিছু নয়। যেখানে এ নির্বাচনকে নিয়ে বিতর্কিত একটি অবস্থান রয়েছে, আমরা যখন দায়িত্ব নিচ্ছি তখন শিক্ষার্থীরা, আমার ভাইয়েরা-বোনেরা পুনঃনির্বাচনের দাবি করে বিক্ষোভ করছেন, মিছিল করছেন।’ সভা শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্বাচনের জন্য সদয় সহযোগিতা করেছেন। তিনি যে আশ্বাস আমাদের দিয়েছেন, তার সফল বাস্তবায়ন করেছেন। সে কারণে আমাদের কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্য তাকে (প্রধানমন্ত্রী) ডাকসুর আজীবন সদস্য করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন। সেটি আইনি ভাষা দেখে করা হবে।

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রস্তাবনাটি ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করা হলো। এটি একেবারেই আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী সভায় গঠনতন্ত্র দেখে আমরা এই কাজটি, মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করবো। এটি আমাদের আজকের কার্যকর পরিষদের সিদ্ধান্ত। জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। ইতিপূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন সদস্য পদ দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নামটি এসেছে। কেন্দ্রীয় ডাকসু বডির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করে আমাদের ডাকসুর সভাপতি বরাবর প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি বলেছেন, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী মিটিংয়ে সেভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এ সময় নুরুল হক নুরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ডাকসুর ২৫ সদস্যের যে বডি রয়েছে, সেখানে ২৩ জন সরাসরি সমর্থন করেছেন। একমাত্র ভিপি নুর দ্বিমত পোষণ করেছেন। সুতরাং ডেমোক্রেটিক ওয়েতে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে সদস্য পদ দেয়ার সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়ে গেছে। এটি সলভ ইস্যু।’

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ডাকসুর অভিষেক
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের অভিষেককে স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণাঢ্য অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন হতে যাচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও  প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অতিথি করা হবে। গতকাল ডাকসুর কার্যকরী পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বড় আকারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তারা করবে। সেখানে মহামান্য প্রেসিডেন্ট অথবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন। একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করার দায়িত্ব দিয়েছি কার্যকর পরিষদকে। ভিপি, জিএস, এজিএসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা বিভিন্ন কমিটি করে আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এটি আমাদের বড় দাগের আজকের সিদ্ধান্ত। ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আমাদের সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা একটি অভিষেক অনুষ্ঠান করতে চাই। সেটা সম্ভবত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। সেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মানিত আচার্যকে দাওয়াত করা হবে।

সিনেটে পাঁচ প্রতিনিধি ঠিক করাসহ অন্য যেসব বিষয়ে আলোচনা
এদিকে প্রথম সভায় সিনেটে ডাকসুর পক্ষ থেকে পাঁচ প্রতিনিধির মধ্যে কে কে থাকবে তা ঠিক করতে ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ বিষয়ে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকে, সেটা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। ভিসি স্যার ডাকসুর ভিপি, জিএস এবং এজিএসকে দায়িত্ব দিয়েছেন এ পাঁচজনকে বাছাই করার জন্য। এদিকে সভায় গণরুম ও গেস্টরুম কালচার বন্ধের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ভিপি নুরুল হক নুর। সভায় ক্যাম্পাস এলাকায় রিকশা ও সাইকেলের জন্য পৃথক লেন তৈরি, ক্যাম্পাসে চলাচলকারী রিকশাগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এনে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করাসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার বিষয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, আজকের সভাটি ছিল আমাদের দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে নতুন দিনের শুভ সূচনা।

সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করা, আমাদের অভিষেক অনুষ্ঠান, ক্যাম্পাসে রিকশাভাড়া নির্ধারণ, ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত আজকের সভা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে আগামী দিনে কাজ করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। যেগুলো নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে কাজ করবো। আশা করি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ডাকসু কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে ভিপি বলেন, রিকশা এবং সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা, রিকশা ভাড়া নির্ধারণ এবং বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০-৩৫০ রিকশার রেজিস্ট্রেশন দেয়া, তাদের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড এবং ভারী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সভায় প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের সকল প্যানেলেরই দাবি ছিল হল থেকে গণরুম, গেস্টরুম এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় সিট দেয়া বন্ধ করা। সেটা নিয়ে আজকে আলোচনা করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে এটা নিয়ে বিভিন্ন হলে নোটিশ দিয়ে অছাত্র এবং বহিরাগতদের হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

ভেতরে সভা, বাইরে বিক্ষোভ, লালকার্ড প্রদর্শন:
এদিকে দুপুরে ডাকসু ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সভা চলছে ঠিক তখন বাইরে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে নির্বাচন বর্জনকারী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে। ডাকসু ভবনের সামনে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ছাত্র ফেডারেশন, মৌন মিছিল করে ছাত্রদল, বিক্ষোভ করে জাসদ ছাত্রলীগ আর বামজোট টিএসসির রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে লাল কার্ড প্রদর্শন করে। ডাকসু ভবনের সামনে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। এ সময় অভিষেক অনুষ্ঠান থেকেই পুনঃনির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার দাবি করেন তারা। পদত্যাগ দাবি করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের। দাবি জানানো হয়, ডাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদেও ছাত্রদের থেকে নির্বাচন করার।

মানববন্ধনে বহন করা প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, ‘আনিশা অক্সফোর্ড ছাত্র সংসদের সভাপতি, তবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে কেন ভিসি!’, ‘ডাকসুতে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে ছাত্র প্রতিনিধি চাই’ প্রভৃতি। একই সময়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে মৌন মিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক। এসময় আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এটা স্পষ্ট। এর দায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। এছাড়া যারা এই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির সঙ্গে জড়িত ছিল সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফের ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পুনরায় নির্বাচন দেয়ার পাশাপাশি নিরপেক্ষ শিক্ষকদেরকে এ দায়িত্ব দিতে হবে। এছাড়া হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে নির্বাচনের কেন্দ্র করারও আহ্বান জানান তিনি।

একই সময়ে টিএসসির সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে নবনির্বাচিত ডাকসু নেতাদের লালকার্ড দেখিয়েছে বামজোট। বামজোট থেকে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীর নেতৃত্বে এ লালকার্ড দেখানো হয়। কর্মসূচিতে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাসদ ছাত্রলীগ। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পদক্ষিণ করে। এদিকে বিভিন্ন সংগঠন ও প্যানেলের এসব কর্মসূচির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মত প্রকাশ করার অধিকার সবার আছে। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। সেখানে আপনারা সকলেই দেখলেন, নবনির্বাচিত সদস্যরা সবাই যোগদান করলেন। এর মধ্যদিয়েই কমিটির কার্যকালের শুভ সূচনা হলো। আশা করি বাকি সময়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখতে তারা ভূমিকা রাখবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে। সে প্রত্যাশাই আমরা করি।

সচল হল সংসদও: এদিকে কেন্দ্রীয় সংসদের পাশাপাশি হল সংসদও সচল হয়েছে। ১৮টি হলের ১৩টি পদের মোট ২৩৪ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গতকাল নিজ নিজ হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে প্রথম কার্যকরী পরিষদ সভা করেছেন। এসব হলগুলোর মধ্যে ১২টিতে জয়ী হয় ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীরা। বাকি হলগুলোর ভিপি, জিএসসহ বেশ কিছু পদে জয়ী হয় স্বতন্ত্ররা। সভায় দায়িত্ব পেয়ে প্রতিনিধিরা তাদের হলের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। হলের প্রাধ্যক্ষরাও এসব সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন। জানতে চাইলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ভিপি রিকি হায়দার আশা বলেন, আজ আমাদের কার্যকরী পরিষদের প্রথম সভা ছিল। মূলত এটি ছিল আমাদের পরিচয় পর্ব।

প্রাধ্যক্ষ আমাদের নতুন নেতৃত্বকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। সভায় হলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সামগ্রিকভাবে আলোচনা হয়েছে। গেস্টরুম গণরুম বন্ধসহ হলে ঢোকার সময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাধ্যক্ষ ম্যাম অতীতের মতো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কবি সুফিয়া কামাল হলের জিএস মুনিরা শারমিন বলেন, আমরা হলের ক্যান্টিনের বিষয়ে কথা বলেছি। হল প্রাধ্যক্ষ আমাদের আগামী মাসের মধ্যে এই বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া, আমরা বলেছি, আমাদের হলের গেইট রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত করতে। কিন্তু হল প্রাধ্যক্ষ এতে রাজি হননি। তিনি জানান, এটা আমাদের বিষয় না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। তারা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই।

মুনিরা বলেন, আমরা মেয়েদের হলের যেসব প্রতিনিধি আছি সবাই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। মেয়েদের সব হলগুলোতেই যেন রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয় সে বিষয়ে দাবি জানাব। শামসুন নাহার হলের ভিপি আফরোজা ইমি বলেন, আমরা প্রথম দিনের সভায় দায়িত্ব পেয়েই ক্যান্টিনে উন্নত মানের খাবার, সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে খাবার ব্যবস্থা, জিনিসপত্রের দাম হ্রাস, অভিভাবকদের হলে আসার অনুমতি, আবাসিক-অনাবাসিক সবাই যেন আইডিকার্ড জমা দিয়ে চলাফেরা করতে পারে তার অনুমতি এবং তারা রাতে থাকলে অ্যাপলিকেশন করে থাকার ব্যবস্থা, বহিরাগতদের হলে অবস্থান যাতে না করতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এছাড়া এ বিষয়ে আগামীকাল (আজ) প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ, প্রত্যেক রুমের সামনে আবর্জনা ফেলার জন্য ঝুড়ির ব্যবস্থা, ডাইনিং ক্যান্টিনে পলিথিন নিষিদ্ধ করা এবং রিডিংরুম সারা রাত খোলা রাখার দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন এসব দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এজিএস সুরাপ মিয়া সোহাগ বলেন, আজকের সভাটি ছিল মূলত আমাদের পরিচয়-পর্ব। সভায় আমরা হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে হল প্রশাসনকে অবহিত করেছি। হল প্রশাসনও সেসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status