বাংলারজমিন

বালু ও মাটিদস্যুদের কবলে গোমতী নদী

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

মাটি ও বালুদস্যুদের কবলে পড়েছে কুমিল্লার ঐতিহ্যের গোমতী নদী। এ নদীর অন্তত দুইশ’ পয়েন্ট দিয়ে ড্রেজার লাগিয়ে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। মাটি ও বালুবাহী ট্রাক-ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে নদীরক্ষা বাঁধ ক্ষত-বিক্ষত হলেও এ নদীকে পুঁজি করে রাতারাতি শূন্য থেকে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি ও অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন অনেকেই। এতে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। নদীর বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার আদর্শ সদর উপজেলার চাঁন্দপুর, পালপাড়া, আলেখারচর, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, টিক্কারচর, সুবর্ণপুর, বুড়িচং উপজেলার কংশনগর, বাবুর বাজার, কামালখাড়া, বালীখাড়া, মিথিলাপুর, বাহেরচর, মালাপাড়া, হাসনাবাদ, রামচন্দনপুর, কুসুমপুর, এবদারপুর, বাজেহুরা, মীরপুর, দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ, কালিকাপুর, খলিলপুর, চরবাকর, লক্ষ্মীপুর, বারেরারচর, হামলাবাড়ি, বালিবাড়ি, পুরাতন বাজার, বড় আলমপুর, মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ, দক্ষিণ ত্রিশ, উত্তর ত্রিশ, মালিশাইল, মুরাদনগর সদর, ধামঘর, ভুবনঘর, সুবিলাচর, তিতাস উপজেলার ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, আসমানিয়া, খানেবাড়ী, কাউরিয়াচর, দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর নিচে, দোনারচর, চেঙ্গাকান্দি, নন্দনপুর, কৃষ্ণপুর, নুরপুর, দৌলতপুর, লালপুর, চর রায়পুর, গৌরীপুর, জিয়ারকান্দিসহ নদীর কমপক্ষে ২০০টি পয়েন্ট দিয়ে বালু ও মাটিদস্যু চক্র বেশ সক্রিয়। তারা নদীর এসব পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে ড্রেজার ও শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরযোগে পুকুর-ডোবা, নিচু জমি ভরাট ও ইটের ভাটাসহ নানা স্থানে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সূত্র জানায়, নদীর দাউদকান্দি উপজেলা এলাকার অন্তত ২৫টি স্পট দিয়ে গোমতীর বালু ও মাটি লুটে নিচ্ছে জনৈক শাহজালাল খন্দকার, আলামিন, ছোট শাহ আলম, রাসেল, জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেট। এ ছাড়া ওই উপজেলার চেঙ্গাকান্দি এলাকায় গোমতী নদীর বিশাল চর ভরাট করে দখলে রেখেছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী। এভাবে বালু ও মাটিদস্যু চক্রের কবলে পড়ে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজগুলোসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বালু ও মাটি বোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। জেলার দাউদকান্দি উপজেলার দোনারচর ও চেঙ্গাকান্দি এলাকার মুন্সী আবুল হাসেম, এনায়েত উল্লাহ, আফাজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্র গোমতী নদীর বিভিন্ন এলাকায় বালু উত্তোলন ও অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে।
বিগত সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে অবৈধভাবে নদীর বালু ও মাটি বিক্রি করে শূন্য থেকে রাতারাতি অঢেল সম্পদ, বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে অনেকে। সরকারদলীয় নেতাকর্মী পরিচয়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অবৈধ বালু ব্যবসায় প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস করে না, এক্ষেত্রে প্রশাসনও অনেকটা নির্লিপ্ত। তাই নির্বিচারে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা চলছেই। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, মাটি ও বালুদস্যুদের কবলে পড়ে গোমতী নদী দিনে দিনে সরু খালের মতো হয়ে পড়ছে। বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে জলজ প্রাণি ও মাছ। জেলেদের জীবন-জীবিকাও হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। এতে পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, নদীর মাটি কাটা ও বাঁধ ধ্বংসের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। লোকবলের অভাবে সব সময় তদারকি করা যাচ্ছে না। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর জানান, গোমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status