অনলাইন

‘জৈশ-ই-মোহাম্মদ’ নিয়ে চীনের আগ্রহ কোথায়?

অনলাইন ডেস্ক

২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ৫:১৭ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানভিত্তিক উগ্র ইসলামপন্থি দল জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার৷ যেখানে ভারত চাইছে, জাতিসংঘের মাধ্যমে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে, চীন সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ কিন্তু কেন?
কাশ্মীর অঞ্চলকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার সূচনা করে জৈশ-ই-মোহাম্মদ নামের পাকিস্তানভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন৷ কাশ্মীরে বোমা হামলা করে ভারতের ৪০ সেনা হত্যার পর এর দায় স্বীকার করে সংগঠনটি৷ এর আগেও ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা ও পাঠানকোট হামলায় এই সংগঠনটির জড়িত থাকার কথা আলোচিত হয়েছে৷ হামলার পর ভারত আবারো দাবি তুলেছে, পাকিস্তান যেন সে দেশের অভ্যন্তরের এমন সন্ত্রাসকে দমন করতে তৎপর হয়৷ একইসঙ্গে জৈশ-ই-মোহাম্মদের নেতা মাসুদ আজহারকে তাদের কাছে সোপর্দ করার দাবিও জানিয়েছে ভারত৷      

মাসুদ আজহারকে যেন সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেজন্য তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বার বার আবেদন জানায়৷ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আজহারকে সন্ত্রাসী ঘোষণা দেবার বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আকারে নিয়ে যায় ফ্রান্স৷ নিরাপত্তা পরিষদের সব স্থায়ী সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও ভেটো দেয় চীন। ভারতের কাছে চীনের এই আচরণ সে দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের মিত্র সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ হলেও চীন বলেছে যে, আজহারের বিরুদ্ধে আরো তদন্তের প্রয়োজন আছে৷

বেইজিং সবসময়ই বলে এসেছে যে, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু আজহারের বিষয়টিকে তারা ‘প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা' বলছে। এ বিষয়ে  চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের ভারত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লিউ জিয়াওজু বলেন, যখনই কোনো আ্ক্রমণ হয়, ভারত আজহারের সংগঠনের ওপর দোষ চাপায়, কিন্তু কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে না৷ যখনই এমন কোনো ঘটনা ঘটে, ভারত দোষারোপ করে পাকিস্তানকে, অথচ প্রমাণ দেয় না৷

তবে ইসলামাবাদের প্রতি বেইজিংয়ের এমন আগ্রহের কারণ অর্থনৈতিক বলেও মনে করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ভাগনার৷তিনি বলেন, চীনের জন্য নির্বাচিত সরকারের চেয়ে সেনাবাহিনী অনেক ভালো। আজহারের বিরুদ্ধে ভোট দিলে পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে তাদের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিতে পারে বলে তাঁর ধারণা। তবে ভাগনার মনে করেন, চীন তার অবস্থান পালটানোর আগেই পাকিস্তান সেনাকে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে৷ তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবরোধ সামলাবার উপায় নেই৷

পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাঈদ সালমান শাহ বলেন, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে৷ যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া পাকিস্তানের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।  তবে অর্থনীতিবিদ আজরা তালাত সাঈদ বলেন যে, নিরাপত্তা পরিষদে চীনের আপত্তির কারণ পাকিস্তান নয়, বরং ভারত৷ মাসুদ আজহারের বিষয়ে চীনের এমন অবস্থানের কারণ ভারতের সঙ্গে তাদের বিরোধ, ইসলামাবাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা এবং তিব্বতের নেতা দালাই লামাকে দেশটির সহযোগিতা, এ সব কারণেও ভারতকে কখনো সমর্থন করে না চীন৷

ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার ফেলো ধ্রুব জয়শঙ্কর বলেন, বিষয়টি প্রতীকী হলেও আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা ভারতের জন্য জরুরি৷ পাকিস্তান আগে কখনো চিহ্নিত গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি৷ আর জৈশ-ই-মোহাম্মদ তো এর মধ্যেই তালিকাভূক্ত। আজহারের ওপর সন্ত্রাসী তকমা থাকলে তাকে গ্রেফতার করা ভারতের জন্য সহজ হবে, তবে তাকে বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসী ঘোষণা করা হলে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছে বলে প্রতীয়মান হবে৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status