প্রথম পাতা

ওয়াশিংটনে মোমেন-পম্পেও বৈঠক ১০ই এপ্রিল

মিজানুর রহমান

২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

তাৎপর্যপূর্ণ এক সফরে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র আমন্ত্রণে মন্ত্রী মোমেনের সফরটি হচ্ছে। আগামী ১০ই এপ্রিল সেক্রেটারি অব স্টেটের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সূচি নির্ধারিত হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি এবং দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পৃথক বৈঠক হতে পারে। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা ও ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র মতে, ৩০শে ডিসেম্বরের বহুল আলোচিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর মন্ত্রীপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম ওয়াশিংটন সফর। নিউ ইয়র্কস্থ জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হিসাবে প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালনকারী ড. মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর এটাই হবে তার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা। অবশ্য নির্বাচনের পরপরই ওয়াশিংটন সফর করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। রাজনৈতিক ওই সফরে সচিব সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নবগঠিত সরকারের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে ব্রিফ করেন। মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ফেব্রুয়ারিতে ভারত যান ড. মোমেন।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে তিনি জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। বর্তমানে একটি বহুপক্ষীয় আয়োজনে অংশ নিতে আর্জেন্টিনা সফরে রয়েছেন। তবে ভারতের পর যুক্তরাষ্ট্রই হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় সফর। রাজনীতিসহ নানা কারণে সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ঢাকা। পেশাদার কূটনীতিকরা বলছেন, মন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরটি সময়ের বিবেচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যখন ‘লুক ইস্ট পলিসি’ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে ঠিক সেই সময়ে পশ্চিমা দুনিয়া বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সম্পর্ক ঝালাই’ করতে যাচ্ছেন দেশটিতে দীর্ঘ সময় বসবাস এবং পেশাগত দায়িত্বপালনকারী শিক্ষক কাম কূটনীতিক ড. মোমেন। তার ওয়াশিংটন সফরটির আরেকটি দিক রয়েছে। তা হলো- বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে চলতি মাসে প্রকাশিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের  বাৎসরিক রিপোর্ট ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে সংবাদ সম্মেলন করে ওই রিপোর্টের বিস্তর সমালোচনা করেন।

বলেন, রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত স্থান পেয়েছে তা বাংলাদেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। ওই রিপোর্টের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন বরাবর একটি প্রটেস্ট নোট বা প্রতিবাদও পাঠিয়েছে সেগুনবাগিচা। যদিও প্রতিবাদে মোটা দাগে মার্কিন রিপোর্টের কড়া সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের রিজারভেশন দূর করতে চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন যথাযথ প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধী বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বের দুর্বলতা, ভোটের মাঠের প্রস্তুতির ঘাটতি, জনগণকে আকৃষ্ট করার মতো ইস্যুও ম্যানিফেস্টুতে যুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার বিপরীতে আওয়ামী লীগের উন্নয়নমুখী নির্বাচনী ইশতেহার, তরুণ ও নারীদের আকৃষ্ট করার মতো ইস্যু থাকা তথা আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই বিপুল বিজয় এনে দিয়েছে।

কোনো নির্বাচনই ত্রুটিমুক্ত নয় উল্লেখ করে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে বলা হয়- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগে পরের কোনো বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়লে তা খতিয়ে দেখা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এবং ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার মূল্যায়ন এমন- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কিছু ইস্যুতে ভিন্নমত থাকলেও সম্পর্ক ভঙ্গুর বা খারাপ নয় বরং অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সুদৃঢ়, বিস্তৃত এবং গভীর। রোহিঙ্গা সংকট, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে দেশটি বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান সম্পর্ক শুধু বাড়ানোই নয়, সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করা এবং যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে তা দূর করতে উভয়ের আগ্রহেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সফর এবং আলোচনার আয়োজন হচ্ছে।

রাজনীতি, অর্থনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা, মেরিটাইম ও সামরিক সহযোগিতা, সমুদ্র সম্পদের আহরণ ও সুরক্ষা, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সংকট মোকাবিলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবাধ তথ্য আদান-প্রদান ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা এবং সর্বপরি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য মেগা প্রকল্পে বাংলাদেশের অবস্থা এবং অবস্থানসহ সামগ্রিকভাবে কমবেশি সব বিষয় নিয়েই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা কথা হবে বলে আশাবাদী ঢাকা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রধান গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সিঙ্গেল কান্ট্রি যুক্তরাষ্ট্র বহু দিন ধরে এ অবস্থানে রয়েছে। দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে মোট ১৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে, যার  এক চতুর্থাংশ (প্রায় ২৫ভাগ) যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায়। আরো অধিক বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চায়। ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা এফডিআই বাড়ানো ঢাকার অন্যতম অগ্রাধিকার উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রকেও বাংলাদেশে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের স্বতন্ত্র স্থান এবং প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেখানে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারে। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য এদেশেও বিক্রি করতে পারে বা তৃতীয় দেশে রপ্তানির সুযোগ পাবে। জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, শেভরনের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। সিমিটার, অক্সিডেন্টাল ও কনোকোফিলিপস-এর বাংলাদেশে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওইসব কোম্পানিসহ অন্যদেরও বিনিয়োগও চায় বাংলাদেশ। সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিষয়ক একটি প্রতিনিধি দল এ নিয়ে আলোচনায় ঢাকা সফর করেছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status