দেশ বিদেশ

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে মরিয়া প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

২০১৮ সালে নিরপাদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের এই বৈঠকে চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে না তুলতে শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন। একইভাবে বৃহসপতিবার দুপুরে বৈঠক করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানও।

নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষের ওই বৈঠকে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন।
সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের মতো বয়সে আবেগ বেশি থাকে। এটাই স্বাভাবিক। এজন্য তোমাদের মাঠে নামানো সহজ হয়। কিন্তু তোমরা যখন মাঠে নামো, কুচক্রীমহল সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমার অনুরোধ, তোমরা শিক্ষার্থীরা যাতে বিরোধীদলের আন্দোলনের উৎস না হও। আমরা তোমাদের সঙ্গে থাকব। আমাদের সমপর্কটা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এখানে কোনো রাজনীতি যেন স্থান না পায়। সবাই মিলে যাতে সড়ক দুর্ঘটনাটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।

সিএমপি কমিশনার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হয় না, এমন কোনো দেশ নেই। এত উন্নত রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গত বছর ২৪ হাজার লোক সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিয়েছে। পত্রপত্রিকার পরিসংখ্যন অনুযায়ী বাংলাদেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২০০ লোক মারা গেছে। দিনে অন্তত ২০ জন লোক মারা গেছে। এটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, এতে কোনো দ্বিমত নেই।

সিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মূল সমস্যা ফুটপাত দখল। কিন্তু ভোটের রাজনীতির কারণে ফুটপাত দখলমুক্ত হচ্ছে না। এটা আবার সামাজিক সমস্যাও। ৫০ হাজার হকারের সঙ্গে তাদের পরিবার-পরিজন মিলিয়ে ১০ লাখ লোক এর সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভরসা তো এই ফুটপাত। সবাই তো বড় বড় শপিংমলে যেতে পারে না। ৫০ টাকায় শার্ট তো সেখানে পাওয়া যায় না। এর আগে বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়ার কথা তুলে ধরেন। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন সব দাবি ক্রমেই পূরণের আশ্বাস দেন।

ইলিয়াছ হোসেন শিক্ষার্থীদের বলেন, ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের আন্দোলনের মিল নেই। সুতরাং, ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে চট্টগ্রামে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল করে না তুলতে শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১৯শে মার্চ সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সমপর্ক বিভাগে পড়তেন। এই ঘটনার পর দু’দিন ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নেমে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। যার খোঁজ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেন। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চট্টগ্রামের সংগঠক মিরাজ উদ্দিন রিফাত বলেন, বৈঠকে চট্টগ্রামে স্কুল-কলেজের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু, রাস্তার প্রতিটি মোড়ে সংকেত ব্যবহার করা, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং ও সিপডব্রেকার দেওয়ার দাবি তুলে ধরেছি। সিএমপি কমিশনার সড়ক সংকেত করার জন্য দুই মাসের সময় নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। একইসঙ্গে দুই মাসের নগরীর স্কুলগুলোতে ট্রাফিক ভলান্টিয়ার কমিটি করা হবে বলেও ঘোষণা দেন সিএমপি কমিশনার। প্রতিটি কমিটিতে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকবে বলে জানান তিনি। বৈঠকে চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান ও আমেনা বেগম, নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status