এক্সক্লুসিভ

আবেগময়ী ভাষণে ক্রাইস্টচার্চের ইমাম

হৃদয় ভেঙেছে কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি

শাহিদুল ইসলাম

২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ৮:১৪ পূর্বাহ্ন

ঠিক এক সপ্তাহ আগে শুক্রবারে জুমার নামাজের সময়ই ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হন ৫০ জন মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশু। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে সেই মসজিদ ঘিরে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। শুধু মুসলিমরা নন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে নানা জাতি-ধর্মের মানুষের ঢল নেমেছিল সেখানে। ক্রাইস্টচার্চের  দু’টি মসজিদে হামলায় নিহতদের স্মরণে নিউজিল্যান্ড জুড়েই দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
আল-নূর মসজিদে হাজার হাজার মানুষের সামনে ইমাম জামাল ফাওদা যে বক্তৃতা দেন, সেটি আলোড়িত করেছে সব মানুষকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে তার বক্তব্যের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। ইমাম জামাল ফাওদার বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ:

গত শুক্রবার আমি এ মসজিদটিতে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সন্ত্রাসীর চোখে মুখে ঘৃণা ও ক্ষোভ দেখেছি। এতে ৫০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪২ জন আর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের মন ভেঙে গেছে। আজ সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যখন চারপাশে তাকিয়েছি, তখন নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত  থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের চোখে ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখেছি। এতে আরও লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ভরে গেছে, যারা আমাদের সঙ্গে এখানে শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তাদের আত্মা আমাদের সঙ্গেই আছে।
সন্ত্রাসী আমাদের দেশকে তার অশুভ মতাদর্শ দিয়ে বিভক্ত করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বদলে আমরা তাকে দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে, নিউজিল্যান্ড ভেঙে টুকরো হয়ে যায়নি। বরং বিশ্ব আমাদের ভালোবাসা আর ঐক্যের উদাহরণ হিসেবে দেখছে। আমাদের মন ভেঙে গেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে কেউ আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের অশুভ এই মতাদর্শের প্রথম শিকার আমরা হইনি, কিন্তু তবু তা আমাদের ভীষণভাবে আঘাত করেছে। নিহত মানুষের সংখ্যা হয়তো অসাধারণ নয় বরং নিউজিল্যান্ডের মানুষের যে সংহতি আমাদের সঙ্গে তা অসাধারণ।
এই হামলায় যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে বলছি আপনাদের স্বজনের মৃত্যু বৃথা যায়নি। আশার বীজে জল সঞ্চার করেছে তাদের রক্ত। তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী ইসলাম এবং আমাদের ঐক্যের সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। আল্লাহ্‌র রাস্তায় গিয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, দয়া করে বলবেন না তারা মৃত, তারা বেঁচে আছে, তাদের প্রভুর কাছে আনন্দে আছে।
আপনাদের হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের ঐক্য ও শক্তি জোরদার হয়েছে। কিন্তু আপনাদের চলে যাওয়াটা যেন নিউজিল্যান্ড এবং বিশ্ব মানবতার জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল।
ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষ হন্তারক। মুসলমানেরা আগেও এর শিকার হয়েছে। কানাডা, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইসলাম বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন অনেক মানুষ।
কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষ খুবই বাস্তব। এ মতাদর্শ মানুষের মানবতা ভুলে অযৌক্তিকভাবে মুসলমানদের সম্পর্কে ভীতি ছড়ায়। আমরা কী কাপড় পরি, কোন ধরনের খাবার খাই, যেভাবে আমরা নামাজ পড়ি আর যেভাবে নিজেদের বিশ্বাস আমরা লালন করি, তা সম্পর্কে ভীতি ছড়ায়। আমরা নিউজিল্যান্ডের সরকার এবং আশপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানাই হেটস্পিচ বা হিংসাত্মক বক্তৃতা ও ভয়ের রাজনীতির ইতি টানার জন্য যেন উদ্যোগ নেয়া হয়।
শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের উত্থান এবং ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলতা বিশ্ব মানবতার জন্য বিরাট এক হুমকি এবং এর অবসান এক্ষুনি হতে হবে।
ইমাম তার বক্তব্যে গত শুক্রবারের ঘটনায় হতাহতদের প্রতি নিউজিল্যান্ডের মুসলমান ও অমুসলমানদের ভালোবাসা এবং চোখের জলের জন্য ধন্যবাদ জানান। নিউজিল্যান্ডের মানুষ মুসলমানদের সাথে সংহতি জানিয়ে যে ঐতিহ্যবাহী হাঁকা নৃত্যের আয়োজন করেছে সেজন্য ধন্যবাদ জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status