প্রথম পাতা

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

অ্যাকশন দেখতে চান শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীতে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে প্রধান প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। দিনভর বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পর বিকালে ঢাকার উত্তর সিটি মেয়র ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে একটি প্রতিনিধি দল আন্দোলন স্থগিতে রাজি হলেও তা মানতে রাজি হননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

তারা জানিয়েছেন, সড়ক নিরাপদ করতে উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে বৈঠকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীসহ কিছু শিক্ষার্থী আন্দোল স্থগিতের অবস্থানে থেকে সেখান থেকে চলে যান। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী বাস চাপায় নিহত হন। ঘটনার পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিইউপি’র শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে আন্দোলনে যোগ দেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়ক বন্ধ করে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। কোথাও কোথাও সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা যায়।

গতকাল সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করলে পুরো ঢাকায় এর তীব্র প্রভাব পড়ে। শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরাতে চেষ্টা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দসহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অতীতের উদাহরণ দিয়ে জানিয়ে দেন তারা আশ্বাসে বিশ্বাসী না। তাদের দাবির বাস্তবায়ন চান। এদিকে ঘটনায় জড়িত সুপ্রভাত বাসের চালককে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

গতকাল সকাল সাড়ে ন’টা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিইউপি’র শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই যমুনা ফিউচার পার্কের ফটক থেকে বসুন্ধরার ফটক পর্যন্ত পুরো সড়কটি দখলে নিয়ে নেন বিইউপিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ফুট ওভারব্রিজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়র ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় নিহত আবরার আহমেদ চৌধুরীর নামে ফুট ওভারব্রিজ। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর মেয়র ও ডিএমপি কমিশনার যান আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের কাছে। এ সময় তারা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলেও তা শুনতে নারাজ ছিলেন শিক্ষার্থীরা।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, সুপ্রভাত বাসের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে এই বাস আর চলাচল করবে না। অন্যদিকে জাবালে নূর পরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে। এ সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কমিশনারকে বক্তব্য থামাতে বলেন। তারা বলেন, আপনারা এর আগেও কথা দিয়েছিলেন। সেই কথা রাখেননি। যার কারণে আবারও আমাদের প্রাণ দিতে হলো, আবারও মাঠে নামতে হলো। এ সময় কমিশনার বলেন, আপনারা আমাদের দমাতে পারবেন, গালিও দিতে পারবেন, কিন্তু আজ যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার শেষ হবে না। আসুন আমরা সবাই মিলে, সমস্যার সমাধান করি। একই সময় বিইউপি’র ভিসি মেজর জেনারেল এমদাদুল বারীও শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নিতে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও সাড়া দেয়নি তারা। পরে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি তোমাদের ভাই, তোমাদের নগরপিতা, তোমাদেরই একজন। আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি। বলেন, তোমরা যে সমস্যায় পড়েছো, সেই সমস্যার সমাধানে আমরাও একমত। কাজেই জনগণের দুর্ভোগ না করে আমরা সড়ক ছেড়ে দিই। আর সমস্যা সমাধানে মন দিই। এ সময় শিক্ষার্থীরা মাইক ছেড়ে দিয়ে মেয়রকে নেমে যেতে আহ্বান জানান। এরপরও তিনি কথা বলতে চাইলে পারেননি। পরে ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।    

এরপর দুপুরে বিইউপি’র শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে মেয়র ও ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। টানা তিনঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের সাতদিনের জন্য বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।

এ সময় বৈঠকে অংশ নেয়া বিইউপি’র শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হবে মেয়রের এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। বৈঠকের পর প্রতিনিধি দলে থাকা বিইউপি শিক্ষার্থী ফয়সাল এনায়েত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শিক্ষার্থী, ভিসিসহ ডিএমপি কমিশনার ও মেয়রের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আটটি দাবির মধ্যে তিনটি দাবির কথা পুনরায় তুলে ধরছি। ফয়সাল বলেন, এর মধ্যে যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার চার্জশিট যত দ্রুতসম্ভব দিতে হবে, সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে এ চার্জশিট দিতে হবে।

জবাবে কমিশনার বলেছেন, তার আগেই যদি সম্ভব হয়, তাহলে আগেই দেয়া হবে। চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিইউপি’র এই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনের সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা কী পরিকল্পনা নিলেন, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে ঠিক করতে হবে। সুপ্রভাত পরিবহনের যে বাসটির রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে, তা স্থায়ী কার্যকর করতে হবে। বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মানার আশ্বাস দেয়া হয়েছে জানিয়ে ফয়সাল এনায়েত বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২৮শে মার্চ) সকাল ১১টায় আমরা সবাই আবারও মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে বসবো। গৃহীত দাবিগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, সেটা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানে গৃহীত পদক্ষেপগুলো শুনে আমরা সন্তুষ্ট না হলে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আবারো রাজপথে নামব।

এর মধ্যে আন্দোলনে না নেমে ২৮শে মার্চের বৈঠকের পর করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি। বিউইপি’র শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ফয়সাল আরো বলেন, একটি স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা কত হবে, সেটা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হলো, স্টুডেন্ট কাউন্সিল তা পর্যবেক্ষণ করবে।

বৈঠকের পর ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একজন চালকের হাতে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হবে এটা কারও কাম্য নয়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সেখানে (বসুন্ধরা গেট) একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। সুপ্রভাত ও জাবালে নূর বাস যেন ঢাকায় চলতে না পারে, সেজন্য ডিএমপি, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মেয়র বলেন, শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবিই যৌক্তিক। সেই দাবি অনুযায়ী, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় যেসব জায়গায় জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভারব্রিজ নেই, আগামী সাতদিনের মধ্যে সেগুলো চিহ্নিত করে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হবে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এসব জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভারব্রিজ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে।  

এদিকে বৈঠকের পর বিকালে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের পক্ষে ফয়সাল এনায়েত বসুন্ধরায় বিক্ষোভ স্থলে এসে আলোচনা বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বিক্ষোভ স্থগিতের ঘোষণা দেন। তবে এ সময় বিইউপির শিক্ষার্থী ও সেখানে থাকা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মেনে নেননি। বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। বলেন, দাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অনড় অবস্থানে থাকার কথা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরেক প্রতিনিধি কাওসার হাবিব সন্ধ্যায় বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে আবার তারা আন্দোলন শুরু করবেন।

এদিকে সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রামপুরা ব্রিজ, বাড্ডা এলাকার সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নেন। তাদের হাতে ছিলো বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা। ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে  ‘লেগেছেরে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, জেগেছেরে জেগেছেরে ছাত্রসমাজ জেগেছে,’ ‘আবরার স্মরণে ভয় করি না মরণে,’ ‘আমার ভাই মরবে কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছিলো তারা। এ সময় আশপাশে পুলিশ মোতায়েন ছিলো। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে দেয়নি শিক্ষার্থীরা। অ্যাম্বুলন্সেগুলোকে বিশেষ দায়িত্বে যেতে দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এ সময় পথচারীদের ফুটপাথ ব্যবহার করতে অনুরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন চলাকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর এম এম শহিদুল হাসানসহ শিক্ষকবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে কথা বলতে চায়। তারা জানায়, গত বছর ২৯শে জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম নিহত হয়। তখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস দিলেও তা পূরণ হয়নি। তাই এবার আশ্বাস না, বাস্তবায়ন চান তারা।

একপর্যায়ে ভিসি নিরাশ হয়ে ফিরে যান। ওই এলাকায় আন্দোলনে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়াল কলেজ, আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এবং ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আন্দোলনের কর্মী হিমাদ্রি শেখর নন্দী বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আমরা কেউ বাসের নিচের পড়ে জীবন দিতে চাই না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলন। এই আন্দোলনে সকল শ্রেণির মানুষের সমর্থন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সকাল সাড়ে দশটা। ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বন্ধ করে জড়ো হতে থাকে কলেজের সামনে।  প্রথমে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। উই ওয়ান্ট জাস্টিজ, নিরাপদ সড়ক চাইসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান লিখে রাস্তায় নামেন তারা।

গতকাল পুরো রাজধানীর অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ধানমণ্ডি তিন নাম্বার মিরপুর রোডে অবস্থান কর্মসূচি নেয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আবির হাসান বলেন, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো যতদিন না আমাদের দাবিগুলো মানা না হবে। সরজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় অবস্থানের শুরু থেকেই অ্যাম্বুলেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন চলাচলে কোনো বাধা ছিল না। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এসব যানবাহন চলতে সহযোগিতা করেছেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুরো রাস্তাজুড়ে অবস্থান নেন। তখন মিরপুর রোডে কোনো ধরনের যানবাহন চলতে পারেনি। এ সময় বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগানে মিছিল বের করেন। মিছিলগুলো কলেজ থেকে বের হয়ে সাইন্সল্যাব হয়ে ল্যাবএইডের সামনে এসে অবস্থান করে। পরে শিক্ষার্থীরা রাস্তার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেও কাজ করেন। এ সময় বিভিন্ন বাস, মোটরসাইকেলসহ সকল ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন তারা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলনে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। মিরপুরের যাত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা শাওন হাসনাত বলেন, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অফিসে যেতে পারিনি। থেমে থেমে বাস চলছে। অনেক কষ্টে বাসে, হেঁটে অফিসে যেতে হয়েছে তাকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শান্তা ইসলাম বলেন, মানুষের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরাও বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের উপায় নেই। রাস্তায় যে হারে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে সেই তুলনায় এ কষ্ট কিছুই না। এভাবে আন্দোলন না করলে সরকারের টনক নড়বে না।

শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান: বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে বিইউপি’র ছাত্র নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমাদের দাবি একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘প্রশাসন, ভুয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। পরে শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি মিছিল শাহবাগে গিয়ে অবরোধ করে। এতে ব্যস্ততম এ মোড়ের আশপাশে যানজট শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর।

এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী এই যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে। শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্টের দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা এ রাষ্ট্রের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। তখন প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করা হলেও এ আন্দোলন দমনের জন্য রাষ্ট্র হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিল। তিনি শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম বিশৃঙ্খলা রয়েছে, এগুলোর প্রত্যেকটি সমাধান করতে হবে। যদি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ব্যর্থ হন, তাহলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে সমস্যার সমাধান করবে। এদিকে বিকাল ৪টার দিকে শাহবাগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানান ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status