প্রথম পাতা

ইউরোপজুড়ে আন্দোলনে স্কুল শিক্ষার্থীরা

মানবজমিন ডেস্ক

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

১৬ বছরের সুইডিশ শিক্ষার্থী গ্রেটা থানবার্গ যেন বিশ্বকেই চমকে দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি পদক্ষেপ নেয়ার   আহ্বান জানিয়ে গত আগস্টে তিনি এককভাবে যে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের শতাধিক দেশে। তার ওই একক আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে বৈশ্বিক শিক্ষার্থী ধর্মঘটে। শতাধিক দেশের শিক্ষার্থীরা গ্রেটা থানবার্গের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে ধর্মঘট পালন করেছেন। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও গত শুক্রবার শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট পালন করেন। তারা স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সবচেয়ে বড় ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয় সিডনিতে। সেখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী টাউন হল স্কয়ার থেকে হাইড পার্কের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দেয়ার দাবি সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। এতে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জ্যান্ডার ডি ভ্রাইস বলেন, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। সময় এসেছে আওয়াজ তোলার। আমাদেরকেই পরিবর্তন আনতে হবে।

পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে ডাকা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। যার মাধ্যমে আন্দোলনের সূত্রপাত, সেই গ্রেটা থানবার্গ বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে, পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কেউই ছোট না। আর আপনি যা করছেন, অবশ্যই  সেটি বড় বিষয়।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন  রোধে সবচেয়ে বড় ছাত্র ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে গত শুক্রবার। এদিন বিশ্বের ১২৮টি দেশের ২ হাজার ৩৩টি শহরে শিক্ষার্থীরা জলবায়ু আন্দোলনে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ প্রভাবশালী সব দেশেই শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আন্দোলন করেছেন। তারা আহ্বান জানিয়েছেন,  বিশ্বনেতারা যেন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরবর্তী ধর্মঘটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ই এপ্রিল।

শুক্রবারের শিক্ষার্থী ধর্মঘটে আর্জেন্টিনা থেকে যোগ দেন ১৮ বছর বয়সী আইয়াল ওয়েনট্রব। তিনি বলেন, আমরা ইতিহাসের এমন একপর্যায়ে পৌছেছি, যখন আমাদের কাছে দারিদ্র, অপুষ্টি, অসমতা ও বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। সে সক্ষমতার ব্যবহার করা হবে কিনা, তার নির্ধারণী ভূমিকা পালন করবে আমাদের আন্দোলন ও বৈশ্বিক ঐক্য।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘর নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএনউইমেন গ্রেটা থানবার্গের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে দেয়া এক বার্তায় সংস্থাটি বলেছে, টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের তরুণ প্রজন্মের কথা শোনা দরকার। থানবার্গই তার প্রমাণ। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়ানিয়ামা বলেন,  শিক্ষার্থীদের স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে আসার অর্থ হলো আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

আমাদের এখন এ ধরনের শক্তি ও নির্মলতাই দরকার। তবে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষামন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন রোধের দাবিতে ডাকা এ আন্দোলনের সমালোচনা করেছেন। কোনো কোনো শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক বলছেন, যারা মৌলিকভাবে ভুলপথে আছে, তাদেরকে প্রশংসার বন্যায় ভাসানো ভালো ফল বয়ে আনবে না। থানবার্গ অবশ্য এর জবাবও দিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, সুইডেনসহ সবখানে যে যুক্তিটি বেশি দেখানো হচ্ছে সেটা হলো, আমরা যাই করি, তা কোনো বিষয় না। কেননা আমরা এতই ছোট যে, পরিবর্তন ঘটাতে পারবো না। কিন্তু শুক্রবার আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবচেয়ে বড় আন্দোলন করেছি। মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, জলবায়ু সংকটের সমাধান কী? এটা হাস্যকর। আমাদের পুরোপুরি নতুন করে ভাবতে হবে। আপনারা যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, তার পুরোটাই হলো প্রতিযোগিতার। দরকার হলে আপনারা প্রতারণাও করেন। কেননা জেতার জন্য এর দরকার আছে। এই প্রবণতার সমাপ্তি দরকার।

আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা শুরু করতে হবে। বিশ্বের সম্পদগুলো আমাদের মধ্যে সুষমভাবে ভাগ করে নিতে হবে। আমরা বিজ্ঞানের দাবিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একমাত্র দাবি হলো, আপনারা বিজ্ঞানের কথা শুনুন ও সে অনুযায়ী কাজ করুন।
নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত: জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুব আন্দোলন গড়ে তোলার বিস্ময়কর কৃতিত্ব দেখানোর স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন গ্রেটা থানবার্গ। নরওয়ের এমপি ফ্রেডি আন্দ্রে ওভেস্তটগার্ড বলেন, আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কিছুই না করি, তাহলে এটা বিশ্বে যুদ্ধ, সংঘাত ও শরণার্থী সমস্যার বড় কারণ হিসেবে আবির্ভূত হবে। এজন্যই আমরা গ্রেটা থানবার্গের নাম প্রস্তাব করেছি। সে একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে। যা বিশ্বশান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় অবদান। তার নাম প্রস্তাব করে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status