প্রথম পাতা

ছাত্রদলের কেন এই পরিণতি?

কাফি কামাল

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

পড়াশোনা শেষে যে বয়সে মানুষ সংসার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বয়সেই ছাত্রদল নেতাদের হাতে আসে নেতৃত্বের ব্যাটন। শীর্ষস্থানীয়  
 পদে থেকে যখন কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বয়স তখন একটি পদের জন্য হন্যে হয়ে দলের প্রভাবশালীদের দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দেন ছাত্রদল নেতারা। যখন ভাগনে-ভাতিজাদের অভিভাবক হিসেবে ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা তখন তারা সাংগঠনিক নেতৃত্ব পান ক্যাম্পাসের। এমন চালশেদের হাতেই ছাত্রদল। আগামী কমিটিতে শীর্ষস্থানীয় পদের প্রত্যাশীরাও বয়সে চল্লিশ ছুঁইছুঁই। অথচ এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ৪৫ বছরের জীবনে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে দ্রুতবর্ধনশীল, জনপ্রিয় সংগঠনটি বর্তমানে চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। যে সংগঠনে কর্মী-সমর্থকের চেয়ে নেতার সংখ্যা বেশি। এক একটি শাখার কমিটির বহর দাঁড়ায় হাজারের কাছাকাছি কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে মিছিলে আসে না একশ’জন। এককালের গতিশীল ছাত্রসংগঠনটি কেন এমন নিষ্ক্রিয় ও অকার্যকর হয়ে পড়লো? ছাত্রদল ও বিএনপির একাধিক নেতার মতে- প্রশ্ন যেমন আছে, উত্তরও আছে; নেই কেবল উপলব্ধি। না ছাত্রদল নেতাদের, না বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ও বিকাশের ইতিহাসে একজন মানুষ নিজের নামটি অঙ্কিত করেছেন ৪৫ বছরের জীবনে। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। সতের বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ঊনিশ বছরে কমিশন পান। ঊনত্রিশ বছর বয়সে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে সাহসী ভূমিকার জন্য পাকিস্তান সরকারের সামরিক উপাধি হিলাল-ই-জুরাত অর্জন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথমে সেক্টর ও পরে ফোর্স কমান্ডারের ভূমিকা পালন করেন। ছত্রিশ বছরে উপসেনাপ্রধান, ঊনচল্লিশে সেনাপ্রধান এবং চল্লিশে প্রধান সামরিক প্রশাসকের দায়িত্ব পান। এক চল্লিশ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে পরের বছর গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।

১৯৭৯ সালের পহেলা জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির সহযোগী সংগঠন হিসেবে এ ছাত্রসংগঠনটি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে দেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রদল এখন কার্যত নিষ্ক্রিয়। না ক্যাম্পাসে, না রাজপথে কোথাও নামতে পারছে না পুরনো ভূমিকায়। গতিশীল নেতৃত্ব ও ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব না থাকার কারণে এ সংগঠনটি ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে দিন দিন। জিয়াউর রহমান বিএনপির ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করলে তার প্রথম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান কাজী আসাদুজ্জামান।

তখন তার বয়স ছিল ত্রিশের কম। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ছাত্রদলের বেশিরভাগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন অনূর্ধ্ব ৩২ বছর বয়সে। শামসুজ্জামান দুদু ২৭ বছর বয়সে সভাপতি, আসাদুজ্জামান রিপন ২৭ বছর বয়সে সভাপতি, আমান উল্লাহ আমান ২৮ বছর বয়সে আহ্বায়ক, ইলিয়াস আলী ৩১ বছর বয়সে সাধারণ সম্পাদক, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ২৮ বছর বয়সে সভাপতি ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল ৩০ বছর বয়সে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। বলা হয়, তখন ছিল ছাত্রদলের সোনালী সময়। তখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদল নেতারা নিজেদের বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমনকি নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্য হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অঙ্গসংগঠন ছাড়াও বিএনপির মাঝারি সারি ও জেলা-মহানগর শাখার শীর্ষ নেতাদের বড় অংশই ছাত্রদলের সোনালী সময়ের ফসল। কিন্তু এসব এখন পরিণত হয়েছে একটি সংগঠনের অতীত ইতিহাসে। ধীরে ধীরে পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে বাস্তবতা এখন অন্যরকম।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যে বয়সে নিজের নামকে ইতিহাসে অমর করেছেন সে বয়সে তার প্রতিষ্ঠিত ছাত্রদলের নেতারা নেতৃত্ব পান। কেন তৈরি হয়েছে এমন পরিস্থিতি? ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের অনেকেই বলছেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা যেকোনো সংগঠনের গতিশীলতার লক্ষণ। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে এটা অন্যরকম। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এ সংগঠনের নেতৃত্ব বিকাশের ধারাকেই থমকে দেয়। একই নেতাকে পরপর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব দেয়া এবং বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অবহেলার কারণে কমিটি গঠন বারবার অনিয়মিত হয়ে পড়ে ছাত্রদলে। আর তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স পেরিয়েছে চল্লিশের ঘর। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সহসভাপতি পদে রয়েছেন এবং আগামী কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্ব পেতে চান এমন নেতাদের কারও চল্লিশ পেরিয়েছে আর কারও বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কিন্তু বয়স ৩৫ এর কম এমন নেতার সংখ্যা হাতেগোনা। কেন্দ্রীয় কমিটির মতো এই কমিটিজটের শিকার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও জেলা-মহানগর শাখাগুলো। ছাত্রদলের জেলা কমিটির অনেক নেতাই রয়েছেন যারা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও বয়সী। বিগত কয়েক কমিটি বহন করছে এ পরিস্থিতি। দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন আবার প্রকাশ করে দিয়েছে ছাত্রদলের কঙ্কালসার শরীর। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটি গঠনে গাফিলতির কারণে তাদের অবস্থান নাজুক হয়ে পড়েছে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সূতিকাগার ক্যাম্পাসে। ডাকসু নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার নেতাদের বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে কমসে কম অর্ধযুগ আগে। তাদের কেউ কেউ নানা কোর্সে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব ধরে রেখেছেন।

কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থী না হওয়ায় তাদের সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম সম্পর্ক-সংশ্লেষ নেই। ডাকসু নির্বাচনে যখন বয়সসীমা ৩০ করে দেয়া হয় তখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেননি ছাত্রদলের মুখচেনা কোনো নেতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক যেখানে ভিপি-জিএস-এজিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন, সেখানে কেন্দ্রীয় তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয় বা হল শাখার শীর্ষ নেতারাও তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে শীর্ষ তিনটি পদে যারা নির্বাচন করেছেন হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়কই হচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ পদ। ছাত্রদল নেতারা জানান, ২৮ বছর আগে সর্বশেষ যে ডাকসু নির্বাচনটি হয়েছিল সেবার ভিপি-জিএসসহ বেশিরভাগ পদেই বিজয়ী হয়েছিল ছাত্রদলের প্যানেল। হল সংসদগুলোতেও ছাত্রদলের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। আটাশ বছর পর আরেকটি ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেল যেখানে ছাত্রদলকে প্যানেল দিতে হয়েছে অপরিচিত মুখের সমন্বয়ে। কয়েকটি হল সংসদের প্যানেলই দিতে পারেনি ছাত্রদল। ভোটের পরিবেশ এবং পদ্ধতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেও ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থীদের ভোটের হিসাব তাদের লজ্জা পাওয়ার মতো। ভিপি-জিএসরা তিনশ’র কোটা পেরুতে পারেননি। অথচ এ প্যানেলের একটি মেয়ে প্রার্থী সাড়ে সাত হাজারের মতো ভোট পেয়ে হয়েছেন দ্বিতীয়। অবশ্যই ছাত্রদল নেতারা ভোটের প্রকাশিত অঙ্ককে মনগড়া সংখ্যা হিসেবেই বিবেচনা করছেন। অথচ ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভ-ক্ষতি কি হলো- ছাত্রদলের তরফে তার সুনির্দিষ্ট পর্যালোচনা আসেনি।  

ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বলছেন, নেতৃত্ব নির্বাচনে মেধাবী ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষদেরই প্রাধান্য পাওয়ার কথা। কিন্তু ছাত্রদলকে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন বিএনপির কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতা। তারা নিজেদের অনুগত ও অনুসারীদের পদপদবিতে বসিয়ে নিজের প্রভাব বাড়াতে প্রতিটি কমিটি গঠনের আগে আদাজল খেয়ে নামেন লবিং-তদবির করেন। কখনো একক, কখনো গ্রুপভিত্তিতে তাদের লবিং-তদবিরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও বিভ্রান্ত এবং অসহায় হয়ে পড়েন। বিএনপির নীতিনির্ধারক থেকে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কয়েকজনের এমন তৎপরতা দলে বেশ প্রতিষ্ঠিত। যার কারণে ছাত্রদল একটি বৃহত্তর ছাত্রসংগঠন হলেও প্রতিটি কমিটিতেই শীর্ষ পদগুলোতে প্রাধান্য পায় কয়েকটি নির্দিষ্ট জেলার নেতারা। কেবল লবিং-তদবিরই নয়, প্রতিটি কমিটিতে পদপদবি দেয়া-নেয়ায় চলে নানা কারসাজি। বিশেষ করে বর্তমান কমিটির আমলে বিভিন্ন অঙ্কে এ কারসাজির ঘটনা সামনে এসেছে বারবার। আর কারসাজির মাধ্যমে পদপদবি হাসিল করায় নেতাদের একাংশ নিষ্ক্রিয় থাকলেও সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের জবাবদিহি আদায় করতে পারে না।

প্রতিবার সমন্বয়ের মাধ্যমে গঠনের কথা বলা হলেও কমিটি গঠন হয় গ্রুপিংয়ে। একটি গ্রুপের হাতে বেশিরভাগ পদপদবি দিয়ে অন্য এক বা একাধিক গ্রুপকে বঞ্চিত করা হয়। বঞ্চিতরা পরবর্তী কয়েক বছর বিদ্রোহ, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করলেই নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি সামনে আসে। সর্বশেষ কয়েকটি কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় আগের কমিটির বঞ্চিত ও নানা কারণে বহিষ্কৃতদের হাতেই যায় পরের কমিটির নেতৃত্ব। ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নানা সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের নিরাপদে রাখেন। ফলে নেতৃত্বের জন্য পড়াশোনা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করতে হয় নেতানেত্রীদের মন জয় ও নির্দেশ পালনে। ক্যাম্পাসের চেয়ে বেশি সময় কাটাতে হয় বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়সহ প্রভাবশালী নেতাদের বাসা ও অফিসে। নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দেশে ও বিদেশে কিছু নেতা এবং বিশেষ চরিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় ছাত্রনেতাদের। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের মাত্রা এবং তাদেরই বিবেচনাবোধের ভিত্তিতে গঠিত হয় পরের কমিটি।

একটির পর একটি কমিটিতে এমন দৃশ্য দেখে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা বাধ্য হয়েই ধর্না দেন গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে কুয়ালালামপুর। যেকোনো সভা-সমাবেশে দলের প্রতিষ্ঠাতার নামের চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় বিভিন্ন নেতার নাম ও নিজ নিজ শাখা বা এলাকার নাম। ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা বলছেন- কমিটি গঠনে বিলম্ব, অবহেলা ও মনগড়া যুক্তিগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে হাজার হাজার ছাত্রনেতার জীবন এখন অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। বছরের পর বছর ছাত্রদল করেও একটি পদ না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়েছেন বা এখনো টিকে আছেন হাজারো নেতা। নানা ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বে যেতে দেড়-দুই দশক ধরে ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন শত শত নেতা। তারা আশায় আছেন, নতুন কমিটি হবে এবং কাঙ্ক্ষিত পদপদবি হাসিল করতে পারবেন। রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবেন একটি সামাজিক সম্মান নিয়ে। কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থী ও তরুণদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিলে বঞ্চিত হবেন হাজারো কেন্দ্রীয় ও মাঝারি সারির নেতা। ছাত্রদলের সাবেক একাধিক নেতার মতে, সিদ্ধান্ত নেয়াটি কঠিন। কিন্তু সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাংগঠনিক পুনর্জন্মের জন্য একটি প্রজন্মকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে। আর কেন্দ্রীয় কমিটির মাঝারি সারির নেতাদের প্রশ্ন- ‘রাজনীতি করতে গিয়ে জীবনকে অনিশ্চিত করেছি, কমিটি গঠনে বিলম্বের কারণে বয়স বেড়েছে; আমাদের অপরাধটি কোথায়?’ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের জন্য বিকল্প উদ্যোগ যেমন নিচ্ছেন না, তেমনি তাদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে না উপলব্ধি।

নিয়মিত শিক্ষার্থী ও তুলনামূলক তরুণদের নিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে ফের। তবে এ আলোচনা নতুন নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অতীতে বারবার এ ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সেটা কখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টিকে নেতারা একটি বিশেষ যুক্তিতে আটকে দেন। যুক্তিটি হচ্ছে- যারা সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই, যারা তরুণ তাদের দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি করা হলে সংগঠন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। এমন বিবেচনা থেকেই এবার প্রথমে ডাকসু নির্বাচনেও যেতে চায়নি ছাত্রদল। কিন্তু বয়স্ক ও অভিজ্ঞরা কী এমন ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারছেন- তাদের কাছে সে প্রশ্নের উত্তর নেই।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের হৃদয় জয় করা কোটা আন্দোলনের অনূর্ধ্ব ত্রিশ বয়সী শীর্ষ নেতারা ছাত্র রাজনীতিতে চেনামুখ ছিলেন না। কিন্তু এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থেকেও উপলব্ধি করতে ইচ্ছুক নয় ছাত্রদল। তাদের যুক্তি বিবেচনায় নিলে ছাত্রদলের নেতৃত্ব কখনো নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছে নেয়া কতটুকু সম্ভব সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হাতে ক্যাম্পাস কমিটি ও তরুণদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন না করলে সংগঠনটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায় ও গতিশীল করা সম্ভব হবে কিনা- সেটা এখন ভেবে দেখার সময়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status