শেষের পাতা

বাংলাদেশের সিনেমা হল (পর্ব-২)

সিনেমা হলের আধুনিকায়ন

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। আর এই সিনেমা দেখার জন্য চাই প্রেক্ষাগৃহ বা হল। দেশে কেমন ছিল সিনেমা হলের সূচনাকাল? আর তারপর ক্রমে উন্নয়ন, আধুনিকায়নের পথ পেরিয়ে সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাজানো হয়েছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন বাংলাদেশের সিনেমা হল। লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু। আজ প্রকাশ হচ্ছে এর দ্বিতীয় পর্ব ‘সিনেমা হলের আধুনিকায়ন’

দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছে ডিটিএস সাউন্ড সিস্টেম সমৃদ্ধ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ সময় স্বপ্ন ছিল। তবে ধীরে ধীরে দর্শকরা বেশকিছু সিনেমা হলে পেয়েছে এমন সুযোগ সুবিধা। প্রযুক্তির পরিবর্তনের পাশাপাশি সিনেমা হলের আধুনিকায়নের কাজও হয়েছে। অবশ্য সেই সংখ্যা এখনো অনেক কম। দেশের সিনেপ্লেক্সগুলোর পাশাপাশি হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমা হলে রয়েছে ডিটিএস সাউন্ড সিস্টেম। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল রয়েছে বেশকিছু। কিন্তু বেশিরভাগ জেলা শহর বা থানা পর্যায়ে সিনেমা হলে এখনো ছবি দেখার ক্ষেত্রে এমন সুবিধা দর্শকরা পাচ্ছেন না। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজলে দোশানি ঢাকায় চলে আসেন এবং পরে একটি সিনেমা হল নির্মাণ করেন। ১৯৫৩ সালে আগা খান এই সিনেমা হলের উদ্বোধন করেন।

এটি ছিল ঢাকার প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক সিনেমা হল। প্রথমে হলটির নাম ছিল ‘লিবার্টি’। পরে তা ‘গুলিস্তান’ করা হয়। ‘গুলিস্তান’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ফুলের বাগান। ঢাকার এই সিনেমা হল শুরু থেকেই ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। দেশি ছাড়াও বিশ্বের নানা দেশের সিনেমা এখানে দেখানো হতো। একই সময়ে ঢাকার ‘নাজ’ সিনেমা হলও ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এখন সিনেমা হল দুটি আর নেই। এগুলো ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে শপিং মল। এদিকে ঢাকার ‘স্টার’, ‘মধুমিতা’, ‘বলাকা’, ‘সনি’, ‘পূর্ণিমা’, ‘আনন্দ’, ‘মুন’, ‘অভিসার’, ‘জোনাকী’সহ বেশকিছু সিনেমা হলে দর্শকরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধা পেয়েছেন হলগুলোর সূচনা সময় থেকেই। চট্টগ্রামের ‘বনানী কমপ্লেক্স’, ‘আলমাস’, যশোরের ‘মণিহার’, খুলনার ‘স্টার’ এবং রাজশাহীর ‘উপহার’ সিনেমা হলও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তবে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, একটা সময় ১২০০ এর বেশি সিনেমা হল ছিল যা এখন ১৭৪-এ নেমে এসেছে। এখন ঢাকার হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমা হল রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। দর্শকরা একটা সময় অনেক সিনেমা হলে ছবি দেখতে এসে এমন সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। তবে ধীরে ধীরে সিনেমা ব্যবসায় ধ্বস নামার কারণে বেশিরভাগ হলেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। সারা দেশে বর্তমানে ঢাকার ‘মধুমিতা’, ‘অভিসার’, ‘বলাকা’, ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’, ‘যমুনা ব্লকবাস্টার’, চট্টগ্রামের ‘আলমাস’ ও যশোরের ‘মণিহার’ নামে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমা হলেই শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় দর্শক সিনেমা উপভোগ করতে পারছেন। খুলনার ‘শঙ্খ’ সিনেমা হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধা থাকলেও হলটি বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকার আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হলের মধ্যে অন্যতম রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হল।

এটির যাত্রা শুরু ১৯৬৭ সালের ১লা ডিসেম্বর। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই হলের উদ্বোধন করেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আবদুল জব্বার খান। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে ২০১৭ সালে। মতিঝিল এলাকায় তিন বিঘা জায়গায় গড়ে উঠেছে এই প্রেক্ষাগৃহ। পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই হলে ১ হাজার ২২১ জন দর্শক একসঙ্গে বসে ছবি দেখতে পারেন। মধুমিতা সিনেমা হলের বর্তমান কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, দেশের অনেক সিনেমা হল যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা আমাদের হল শুধু চালুই রাখিনি, দিনে দিনে আধুনিক করছি। আমি সব সময়ই চাই বাংলাদেশের সিনেমা যেন এগিয়ে যায়। এজন্য শুধু দেশ-বিদেশের ছবি প্রদর্শনী নয়, এ সিনেমা হলের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান মধুমিতা মুভিজ থেকে ‘আয়না’, ‘মিস লংকা’, ‘আগুন’, ‘গুনাহ’, ‘দূরদেশ’, ‘নিশান’, ‘উৎসর্গ’সহ বেশ কিছু সুপারহিট সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং আধুনিক শব্দ (ম্যাগনেটিক সাউন্ড) সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল মধুমিতা সিনেমা হল। ১৯৯৭ সাল থেকে এ হলে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সিনেমা হলে বসার আসন, বাথরুম থেকে শুরু করে শব্দব্যবস্থা সবকিছুই আধুনিক। তিনি জানান, মধুমিতা কর্তৃপক্ষ কয়েকটি উন্নত মানের সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করারও পরিকল্পনা করেছে।

সেখানে ফুডকোর্টের পাশাপাশি শিশুদের খেলার আয়োজনও রাখা হবে। সবশ্রেণির দর্শক এ সিনেপ্লেক্সগুলোতে যাতে সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন সে লক্ষ্যে আরো নানা আধুনিকায়ন করা হবে এখানে। সিনেমা হলে ব্যবসায়িক বিপর্যয় আর না ঘটলে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের স্বপ্নটা দ্রুত পূরণ করতে চান তিনি। এদিকে দেশের অন্যান্য সিনেমা হলের মালিকরাও নিজ নিজ প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতারও প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। তবে এর আগে দরকার সারা দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের পথ বের করা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status