শেষের পাতা

ডাকসু নির্বাচন

পর্যবেক্ষণকারী ৮ শিক্ষকের শাস্তি দাবি করায় ক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২১ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী আট শিক্ষকের শাস্তি চেয়ে প্রভোস্ট কমিটি ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে যে দাবি করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা। গতকাল বিকালে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ১১ই মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সরজমিন পর্যবেক্ষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন সম্মানিত শিক্ষক ব্যাপক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে এ ত্রুটিযুক্ত নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ঢাবি প্রভোস্ট কমিটির সভায় তাদের শাস্তি দাবি করায় আমরা বিস্মিত, হতবাক ও ক্ষুব্ধ। আমরা এ ধরনের ন্যক্কারজনক দাবির তীব্র নিন্দা ও জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারাসহ পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি অভিযোগ সত্য। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমেও এসব অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। ঢাবি সাদা দলের পক্ষ থেকেও এসব অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনের দিনই এ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছিল। এতে আরো বলা হয়, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম যে, কর্তৃপক্ষ এ নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। উল্টো এ নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়ম কারচুপির ব্যাপারে যারা কথা বলেছেন, সোচ্চার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রভোস্ট কমিটি থেকে শাস্তির দাবি করা হচ্ছে। আমরা এ ধরনের হাস্যকর কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রভোস্ট কমিটির সদস্যদের আহ্বান জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে যারা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য নস্যাৎ করেছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, গত ১৮ই মার্চ ভিসির বাসভবনে অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ১৯শে মার্চ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। যেখানে দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়, ‘স্বেচ্ছাসেবী পর্যবেক্ষক দল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক অননুমোদিতভাবে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমে নির্বাচন সম্পর্কে অসত্য তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নিন্দনীয় বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়। তাদেরকে দায়িত্বশীল আচরণের প্রতি যত্নশীল থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাধ্যক্ষবৃন্দ ভিসি মহোদয়ের কাছে জোর দাবি জানান।’

ডাকসুর পুনঃতফসিল চেয়ে ছাত্রদলের মানববন্ধন
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে ও পুনঃতফসিলের দাবিতে গতকালও ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘দে দে আগুন দে, দালাল ভিসির গদিতে’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘আমরা শক্তি আমরা বল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল’, ‘প্রহসনের নির্বাচন, বাতিল কর করতে হবে’, ‘দিবারাত্রির নির্বাচন, ছাত্রদল মানে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী খন্দকার আনিছুর রহমান (অনিক), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী খোরশেদ আলম সোহেলসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। যেটা একটা কলঙ্কের নির্বাচন। এই নির্বাচন ঢাবি’র সকল নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। এই কলঙ্কিত নির্বাচনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জড়িত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই নির্বাচনে ছাত্রলীগ ভোট জালিয়াতি করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ১১ই মার্চ কোনো নির্বাচন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত দেশবাসী দেখেছে যে কি হয়েছে। এই নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স পাঠানো হয়েছে।

ছাত্রলীগ রাতেই ব্যালট বাক্সে সিল মেরেছে। এ ছাড়া হলগুলোতেও অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও ভোট দিতে পারেনি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বলে ঘোষণা দেন তিনি। রাজিব কারচুপির নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের শাস্তির আওতায় এনে বিচার দাবি জানান। এসময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, এই নির্বাচন একমাত্র প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ বৈধতা দিয়েছে। আমরা ছাত্রদলসহ সব প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অনিয়ম এবং কারচুপি হওয়ায় এই নির্বাচন বর্জন করেছি। সবাই পুনরায় নির্বাচনের জন্য পুনঃতফসিল দাবি করেছে। দ্রুত এই নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল দেয়া হোক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status