শেষের পাতা

‘খালেদা অসুস্থ আদালতে আসার আগেও বমি করেছেন’

স্টাফ রিপোর্টার

২০ মার্চ ২০১৯, বুধবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

নাইকো মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জবাবে  বলেছেন, মামলার যাবতীয় নথি পাওয়া গেলে অব্যাহতির আবেদন করা হবে। মঙ্গলবার নাইকো মামলার শুনানি শেষে খালেদা জিয়া তার আইনজীবীকে এ প্রশ্ন করেন। ওদিকে কুমিল্লার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী ২৫শে মার্চ আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার জজ আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে। নাইকো মামলার শুনানি শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, ভীষণ অসুস্থ। আজকেও আদালতে আসার আগে তিনি বমি করেছেন। মাথা সোজা করে রাখতে পারছেন না। মাথা হেলে যাচ্ছে। তার পায়ে ও হাঁটুতে ব্যথা রয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসাই পাচ্ছেন না তিনি। কোনো চিকিৎসকই আসেন নি। তার রক্ত নেয়া হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, উনি তো বলেছেন, পিজি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয় না। উনি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চেয়েছেন। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি মনে করি, যে মেডিকেল বোর্ড আছে সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাঠানো যেতে পারে। রক্ত পরীক্ষার জন্য নিতে পারেন। তিনি চাচ্ছেন রক্ত পরীক্ষা করা হোক। মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির দিন ধার্য ছিল। আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি পিছিয়ে আগামী ১লা এপ্রিল ধার্য করেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার নতুন এ দিন ধার্য করেন।

শুনানির আগে বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে খালেদা জিয়াকে এজলাস কক্ষে হাজির করে কারা কর্তৃপক্ষ।
শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য আছে। খালেদা জিয়া ছাড়া সকল আসামির চার্জ শুনানি শেষ হয়েছে। গত তারিখে তারা চার্জ শুনানি করতে সময় নিয়েছেন। তারা শুরু করলে আমরা মামলাটির কার্যক্রম শেষ করতে পারবো।

এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও জব্দ আলামতের অনুলিপি না থাকায় অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি পেছানোর জন্য আদালতের কাছে সময় চান। তিনি বলেন, আমরা আজ আদালতে দুটি দরখাস্ত দিয়েছি। বার বার আবেদন করেও মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যেভাবেই সম্পৃক্ত করা হোক তার কাগজ আমাদের দেয়া হয়নি। আদালত আদেশ দেয়ার পরও অনুলিপি পাওয়া যায়নি। নথি ছাড়া প্রস্তুতি নিতে পারছি না।  আদালত বলেন, আবেদন তো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, চার্জ শুনানি করতে আলামতের অনুলিপি লাগে? আর যেসব পেপার ছিল তা দিয়েছি। খালেদা জিয়া ছাড়া সবাই শুনানি শেষ করেছেন। চার্জ শুনানি হোক, চার্জ গঠন হওয়ার পর তারা ওই কাগজ পাবেন। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে মামলাটি চলছে। আইন অনুযায়ী চার্জ শুনানির আগে অব্যবহৃত কোনো কাগজপত্র সরবরাহ করা যায় না। মামলার বিচার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা এসব অভিযোগ করছেন।  

তখন বিচারক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চার বছর ধরে চার্জ শুনানি চলছে। এতদিনেও আপনারা আবেদন করেননি কেন? আর যে আবেদন দিয়েছেন তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমি তো দেশের সর্বোচ্চ কোর্ট না, আমি সবকিছু করতে পারি না। মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা তৈরিতে গোঁজামিল আছে। সেজন্য তাদের কাগজপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ সময় বিচারক তার কাছে জানতে চান, তারা খালেদা জিয়ার পক্ষে চার্জ শুনানি করবেন কি-না। তখন মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, কাগজ পেলে আমরা শুনানি করবো। এরপর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা একটা গ্রাউন্ডলেস মামলা। কাগজগুলো পেলে আমরা দেখাবো। এজন্য শুনানি পেছানোর জন্য আবেদন করেন তিনি। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সময় মঞ্জুর করে শেষ বারের মতো আগামী ১লা এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় জব্দ করা আলামতের অনুলিপি চাওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আসামি মওদুদ আহমদের পক্ষে তার আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, জার্মানিতে চিকিৎসাধীন আছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ জন্য সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। মামলার অপর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী তাকে গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার, নারায়ণগঞ্জ অথবা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আদালত এ বিষয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।

শুনানি শেষে খালেদা জিয়া তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চান-মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে কিনা? জবাবে তার আইনজীবীরা জানান, মামলার যাবতীয় কাগজপত্র পাওয়া গেলে অব্যাহতির আবেদন করা হবে।
গতকাল আদালতে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলামসহ অন্য আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন।

আদালত কক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন। এরপর বেলা ১টা ১৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে এজলাস কক্ষ থেকে ফের কারাগারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এক এগারোর  সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৯ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাসচুক্তি করায় রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৫ই মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন-সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

কুমিল্লার হত্যা মামলায় জামিন স্থগিতের আবেদন
ওদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় পেট্রোলবোমা মেরে বাসের আট যাত্রী হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী ২৫শে মার্চ আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার জজ আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করার বিষয়টি জানান।
গত ৬ই মার্চ কুমিল্লার হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ।

২০১৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় আইকন পরিবহনের বাসের আট যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন আরো ২০ জন। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক নুরুজ্জামান বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হুকুমের আসামি করা হয় খালেদা জিয়াকে। পরে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন অধিকতর তদন্ত শেষে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status