বাংলারজমিন

এমন নির্বাচনেও অভিযোগ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলায় সোমবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। এর মধ্যে শুধুমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ হয়। রাউজান উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় ভোটগ্রহণ হয়নি। রাঙ্গুনিয়ায় ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকে আকতার হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় শুধুমাত্র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কয়েকঘণ্টা পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনিও।
আর হাটহাজারী ও সন্দ্বীপ উপজেলায় শুধুমাত্র ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যাদের মধ্যে প্রার্থীরা একে অপরের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, জাল ভোট প্রদান, রাতে সিল মেরে ব্যালটে বাক্সভর্তির অভিযোগ তুলেন।
আর সকাল থেকে প্রার্থীর অনুসারী নেতাকর্মীরা ভোট দেয়ার জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে ধরে আনার ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। এরপরও ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম হওয়া নিয়ে হাসাহাসির সৃষ্টি হয়েছে।
ভোটার, প্রার্থী, দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারাও ভোটার উপস্থিতি হম হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি কোনো কোনো কেন্দ্রে ৫ ঘণ্টায়ও একটি ভোট না পড়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার নুরনাহার (৪৫) বলেন, চেয়ারম্যান তো হয়ে গেছে। তবুও ভাইস চেয়ারম্যানরা বাড়িতে টিকতে দিচ্ছে না। জোর করে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তবে ভোটার কম হওয়ায় ভোট দিতে সময় লাগেনি। এমন ভোট জন্মের পর আর দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমাদের হাটহাজারী প্রতিনিধি আবু শাহেদ জানান, সকাল থেকে উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। সাড়ে ১০টা নাগাদ উপজেলার চারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই হাজারেরও বেশি ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭০-৭৫ জনে ভোট দেয়। চারিয়া সরকারি বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই অবস্থা। ভোট যারা দিয়েছেন তাদেরকেও প্রার্থীর পক্ষ থেকে ধরে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আর দুপুর হতে না হতে ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র।
এ ছাড়া হাটহাজারী কলেজ কেন্দ্রে জাল ভোট দিতে গিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উদয় সেনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন।
তিনি জানান, ওই প্রার্থী নিজেই জাল ভোট দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেই ১০০টির মতো জাল ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। হাটহাজারী কলেজ কেন্দ্র ছাড়া উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব মেখল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গড়দুয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মনজুরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসা কেন্দ্র থেকে আরো ৭০০ জাল ব্যালট জব্দ করেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদে পূর্ণ পেনেলে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটারদের মাঝে তেমন তোড়জোড় ছিল না। সকাল থেকে প্রার্থীদের অনুসারী নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান করলেও ভোটার উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না। যারা ভোট দিয়েছেন তাদেরকেও ধরে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।   
উপজেলার জাহানপুর আমজাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হোসেন রেজা বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। শেষ পর্যন্ত এ ভোট কেন্দ্রে ১৭ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে বলে জানান তিনি।
ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর রুস্তুমিয়া মুনিরুল ইসলাম দাখিল মাদরাসা ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আলমগীর কবির জানান, সকাল ৮টা থেকে এ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো ভোটার কেন্দ্রে আসেনি। ফলে পাঁচ ঘণ্টায়ও একটি ভোট কাস্ট হয়নি।  
তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬৫০ জন। দুপুরের পর বিকাল ৪টার মধ্যে ১৬৫ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটার না আসায় সকাল থেকে পোলিং এজেন্টরা অলস সময় কাটিয়েছেন।  
একইভাবে ফটিকছড়ি উপজেলার শাহনগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার মো. ইব্রাহিম বলেন, সকাল ৮টা থেকে পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের অপেক্ষায় থাকলে ভোটার নেই। দুপুর একটা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে আসেনি। ফলে এখানে কোনো সমস্যা হয়নি। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৭১০ জন বলে জানান তিনি।  
এ কেন্দ্রের ভোটার পার্শ্ববর্তী গ্রামের মুন্নুজান বেগম বলেন, এমপি নির্বাচনে আমরা ভোট দিতে পারিনি। উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিয়ে কি লাভ। তাই এবারও ভোট দিতে কেন্দ্রে যাইনি।
ফটিকছড়ি উপজেলায় নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরি বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ির পাশের কেন্দ্রে রাতে সিল মেরে ব্যালটে বাক্সভর্তি করা হয়েছে। সকাল থেকে অসংখ্য জাল ভোট দেয়া হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম আবু তৈয়ব বলেন, নৌকার প্রার্থী অনেক কেন্দ্রে এজেন্টও খুঁজে পায়নি। বরং বাগান বাজার ইউনিয়নে আমার কর্মীদেরও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
এ উপজেলার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জুবায়ের বলেন, সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ভোটার সংখ্যা খুবই কম। কেন কম সে বিষয়ে জানি না, কারণ সেটি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, পাঁচ উপজেলায় ১৩ লাখ ৬২ হাজার ১২২ ভোটার রয়েছে। এসব উপজেলায় ৪৯৫টি ভোটকেন্দ্রে ৪৯৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, তিন হাজার ৪৪১ জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ছয় হাজার ৮৮২ জন পোলিং কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে (ঝুঁকিপূর্ণ) দু’জন করে পুলিশ সদস্য, সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্য এবং প্রতিকেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি র‌্যাব-পুলিশের একাধিক টিম নির্বাচনী এলাকায় টহলে ছিল। ফলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status