শেষের পাতা

ফের ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করা হয়েছে। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচ প্যানেল।

তবে দীর্ঘ এসময়েও ভিসি কথা বলেন নি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। বিকালে আন্দোলনকারীরা নিজেদের কর্মসূচি স্থগিত করে। এর আগে সকালে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ভিসি কার্যালয়ের সামনে আসে আন্দোলনকারীরা। একই দাবিতে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলোর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি তেমন একটা সাড়া ফেলেনি।

প্রায় সব বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে গতকাল ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে অনশন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা নির্বাচনে অনিয়মের বিভিন্ন প্রমাণ ভিসির কাছে উত্থাপন করেন। ভিসি সেগুলো তদন্ত কমিটির মাধ্যমে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও অতীতে ডাকসু নির্বাচন যেকোনো নির্বাচন থেকে এবারের নির্বাচনে অনিয়মগুলো নরমাল বলে দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, ‘ভিসি বলেছেন- ডাকসুর আগের নির্বাচনগুলোতে বেশি অনিয়ম হয়েছে। সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাও ঘটেছে। সেই তুলনায় এই নির্বাচনের অনিয়মগুলো ‘নরমাল’।’ অন্যদিকে ডাকসু ও হল সংসদে বিজয়ীদের অভিষেক অনুষ্ঠান কবে হবে সে বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈঠকে বসেছে প্রভোস্ট কমিটি। ভিসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক থেকে ঠিক করা হবে অভিষেক অনুষ্ঠান কখন কীভাবে হবে।

পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকেও দেখা দেননি ভিসি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয় পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করেছে নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচ প্যানেল। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ কর্মসূচি। তবে এ দীর্ঘ সময়েও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নি ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

পাঁচ দফা দাবিতে নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচ প্যানেল হলো- প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। তাদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জালিয়াতির ডাকসু নির্বাচন বাতিল; পুনঃতফসিল ঘোষণা; ভিসির পদত্যাগ; মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং  হামলাকারীদের বিচার। এর আগে সকালে টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।

সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভিসি কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নেন। এরপর পাঁচ প্যানেলের প্রতিনিধিরা ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর তারা গেটের বাইরেই বসে পড়েন। এসময় স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এআরএম আসিফুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থায় এই নির্বাচন হয়েছে। আমরা বার বার মিডিয়াকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার কথা বললেও তা করা হয়নি। ভোটকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এখন তারা প্রমাণ দেয়ার কথা বলছে।

কিন্তু প্রমাণ দেয়ার রাস্তা আগেই বন্ধ করে রেখেছে। জিএস পদপ্রার্থী ও ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, সব শিক্ষার্থীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১১ই মার্চের জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলতে থাকবে।

জিএস পদে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রার্থী রাশেদ খান বলেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির পরেও অনেক ভোট পড়ায় দুটি পদে আমাদের হারাতে পারেনি। মেয়েদের হলগুলোর পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে আমি জিতেছি। কারণ সেখানে ছাত্রীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ছেলেদের হলগুলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় এই নির্বাচন অসম্পূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ। ডাকসুর ভিপি পদে স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান বলেন, আমরা যখনই ভিসির কাছে যাই, তিনি শুধু বলেন লিখিত অভিযোগ দাও। নির্বাচনের আগেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। নির্বাচনের পরেও অনেক লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এই নির্লজ্জ ভিসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। এই ভিসি আমাদের দাবি মানতে বাধ্য।

অনশনকারীদের সঙ্গে বৈঠক: এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এসময় তিনি নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন। শিক্ষার্থীরা অনিয়মের বিভিন্ন প্রমাণ ভিসির হাতে তুলে দেন। ভিসি সেগুলো তদন্তের আশ্বাস দেন অনশনকারীদের। অনশনকারীরা জানান, সেই বৈঠকে ভিসি বলেছেন, ডাকসুর আগের নির্বাচনগুলোতে বেশি অনিয়ম হয়েছে।

সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাও ঘটেছে। সেই তুলনায় এই নির্বাচনের অনিয়মগুলো ‘নরমাল’। গত শুক্রবার রাতে ভিসির সঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কথা বলার আশ্বাসে অনশন ভাঙেন সাত শিক্ষার্থী। অনশনের চতুর্থ দিনে অনশনকারীদের ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ভিসির সঙ্গে বৈঠকে বসেন অনশনকারীদের মধ্যে তাওহীদ তানজিম, শোয়েব মাহমুদ, রাফিয়া তামান্না ও রবিউল ইসলাম। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে শোয়েব মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট কারচুপি, ভোট প্রদানে বাধা ও প্রার্থীদের ওপর হামলার বিষয়গুলো ভিসিকে জানানো হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন হলে ভোটের অনিয়ম, ভোটারদের লিখিত অভিযোগ ও হামলার ভিডিও ফুটেজ দেয়া হয়েছে।

ভিসি স্যার বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১৩ই মার্চ যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের কাছে এই ডকুমেন্টগুলো সরবরাহ করা হবে। শোয়েব বলেন, এসব অনিয়ম নিয়ে আলোচনার সময় ভিসি স্যার বলেছেন, ‘আগের ডাকসু নির্বাচনগুলোয় অনেক বেশি অনিয়ম হয়েছে। সেগুলোর চেয়ে এই নির্বাচনে অনেক নরমাল অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’ অনশনকারী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘এই বৈঠক নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট না।

যেহেতু আমাদের উত্থাপিত অনিয়মগুলো নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে ভিসি জানিয়েছেন, সেহেতু আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করবো। দ্রুত তদন্তের ফল প্রকাশ না করলে আমরা চলমান আন্দোলনে যোগ দেবো।’ ভিসি, চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অপসারণ, পুনঃনির্বাচন ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশনে বসেছিলেন সাত শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন ডাকসু ও হল সংসদে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।

ধিক্‌ জানিয়ে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা:
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরও ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ না পেয়ে বিকালে নিজেদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে আন্দোলনকারীরা। বিকাল ৫টায় স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এসময় এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ডাকসুর জিএস প্রার্থী রাশেদ খান, ছাত্র ফেডারেশনের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান। অরণি সেমন্তি খান বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক।

আমরা পাঁচ ঘণ্টা ধরে অবস্থান করছি। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা কারচুপির প্রমাণ জমা দিয়েছে। ভিসির আমাদের সামনে এসে কথা বলার সৎ সাহসটুকুও নেই। বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস টাইম হিসেবে আমরা ধিক্‌ জানিয়ে আজকের কর্মসূচি স্থগিত করছি। পাঁচ প্যানেল সম্মিলিতভাবে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে জানান রাশেদ খান। তিনি বলেন, ২৮ বছর পরে হওয়া নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। প্রশাসন সরাসরি কারচুপির সাথে জড়িত। একটি ছাত্র সংগঠনকে জিতিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নৈতিকভাবে এমন দুর্বল হয়ে গেছে যে, আমরা শিক্ষার্থীদের সামনে আসার সৎ সাহসটা পর্যন্ত তাদের নেই। আমরা হতাশ হয়েছি। ভিসি প্রক্টর আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। ছেলেদের হলে অনিয়মের কোনো তদন্ত করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মান যা ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে এ নির্লজ্জ প্রশাসনের কারণে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status