খেলা

‘উপমহাদেশে আমিই সেরা’

সামন হোসেন, বিরাটনগর (নেপাল) থেকে

১৯ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

সাবিত্রা ভাণ্ডারি

তাকে একবার দেখে বোঝার উপায় নেই ছেলে না মেয়ে। চুলের স্টাইল ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমারের মতো। ড্রিবলিং পাসিংয়েও রয়েছে নেইমারের ছাপ। দৌড়ের স্টাইল, খেলার ধরন, গোলের উদযাপনটা আবার পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। এই দুইয়ের মিশ্রণে নিজেকে তৈরি করছেন নেপাল জাতীয় মহিলা দলের ফরোয়ার্ড সাবিত্রা ভাণ্ডারী। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুই ম্যাচে করেছেন দুই গোল। ২৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ২৪। স্কিল,  টেকনিক, স্পিরিট, গোল করার ক্ষমতা সবকিছু বিবেচনা করেই ২২ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলারের খেতাব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। সাবিত্রাও বললেন ‘আমি সেরা’।
মূলত শিলিগুড়ি সাফ থেকেই আলোচনায় আসেন সাবিত্রা ভাণ্ডারী। সাফের ওই আসরে ১২ গোল করেছিলেন এই নেপালি ফরোয়ার্ড। তার একমাত্র গোলেই ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে মালয়েশিয়াকে হারায় নেপাল। অলিম্পিক বাছাই পর্বে মিয়ানমারকে টেক্কা দিয়ে জায়গা করে নেয় দ্বিতীয় রাউন্ডে। তাকে ঘিরে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের স্বপ্ন দেখছে দেশটি। সাবিত্রার সঙ্গে কথা হয় তাদের টিম হোটেলে। নেপালি সাংবাদিকদের সহযোগিতায় হোটেল রত্নায় সাবিত্রা শোনান তার ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প। সেখানে উঠে আসে তার শৈশব-কৈশোর।  নেপালের লামঞ্জুং প্রদেশে জন্ম সাবিত্রার। সেখানেই ফুটবলের হাতিখড়ি। আমাদের দেশের মতোই পরিবার থেকে খুব একটা সাপোর্ট পাননি সাবিত্রা। তিনি বলেন, ‘আমার খেলাধুলায় পরিবার থেকে কোনো সাপোর্ট ছিল না। ওই সময় কেডস কেনার পয়সা ছিল না। আমাদের সংসার অনেক বড়, বাবাকে সব খরচ সামাল দিতে হতো। তাই আমি কখনো বলতে পারিনি যে, আমাকে এক জোড়া কেডস কিনে দাও। আমি খালি পায়ে ছেলেদের সঙ্গে খেলেছি। সেটা খুব কঠিন সময় ছিল আমার জন্য’।
আর্মড পুলিশ ফোর্সে যোগ দেয়ার গল্প বলতে গিয়ে সাবিত্রা বলেন, ছোট শহরে আমি ছোট ছোট অনেক টুর্নামেন্ট খেলতাম। সেখান থেকে এক রাষ্ট্রীয় রেফারি আমাকে দেখে কাঠমান্ডু নিয়ে আসেন। আর্মড পুলিশ ফোর্সে আসার পর আমি কেডস পেলাম, ট্রেনিং পেলাম। তিন মাস ট্রেনিংয়ের পর আমার খেলা বদলে যায়। আমি কঠিন পরিশ্রম করেছি, সেটারই ফল পাচ্ছি’। জাতীয় দলের শুরু নিয়ে নেপালি এই ফরোয়ার্ড বলেন, আর্মড পুলিশ ফোর্সে যোগ দেয়ার পরই আমার স্বপ্ন তৈরি হয় জাতীয় দলে খেলার। তবে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে অনেক সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আমার সামনে দেখছি ভারতের সঙ্গে বারবার হারছে নেপাল অথচ আমি একাদশে খেলার সুযোগ পাচ্ছি না। ২০১৪ সালে জাতীয় দলে আসার পর আমি বদলি হিসেবে খেলার সুযোগ পেতাম ১০/১৫ মিনিট করে। তখনকার কোচ শুধু সিনিয়র খেলোয়াড়দের খেলাতেন, জুনিয়রদের সুযোগ দিতেন না। তবে এখন ওই সমস্যা দলে নেই। রোনালদো, নেইমারের এই ভক্ত জানান, রোনালদোর স্কোরিং আমার খুব ভালো লাগে। নেইমারের স্কিল খুব ভালো। মেসিকে আমি শ্রদ্ধা করি তবে আমি রোনালদোকে পছন্দ করি। তাই আমি মাঠে এই দু’জনকে ফলো করি। ইউরোপে খেলার স্বপ্নের কথা জানিয়ে সাবিত্রা বলেন, গত দুই বছর মালদ্বীপের লীগে খেলেছি। ওখানে থাইল্যান্ড, তাজিকিস্তান এমনকি ব্রাজিলের মেয়ে ফুটবলার খেলেছে। ব্রাজিলিয়ানদের সঙ্গে খেলে আমি স্কিলে উন্নতি করেছি। আমি ইউরোপে খেলতে চাই। আক্রমণভাগের আরেক সতীর্থ নিরু থাপার সঙ্গে তার ভালো বোঝাপড়া আছে জানিয়ে সাবিত্রা বলেন, নিরু থাপা সিনিয়র ফুটবলার। তার নলেজ অনেক। আমরা বুঝি ও জায়গা নিলে আমি বক্সে ঘুরতে থাকি। তখন সে মার্কিং ফ্রি হয়ে যায়। আমি জানি সে কী করতে চায়। সেও আমাকে বোঝে’। নিজেকের সেরা দাবি করে সাবিত্রা বলেন, আগে ভারতের বালা দেবির খেলা আমার পছন্দ হতো। এখন কাউকে দেখি না আমার মতো খেলে। এই উপমহাদেশে আমিই সেরা। এটা আমি বিশ্বাস করি এবং উপভোগও করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status