শেষের পাতা

পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৮ মার্চ ২০১৯, সোমবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণে গণভবনে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিজের কনসেনট্রেশন নষ্ট করেছে বলে দাবি করেছেন ডাকসুর নব নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। গতকাল মধুর ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে এমন দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, গণভবনে আমরা শুনেছিলাম যে কেবল ডাকসুর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও হল সংসদের নেতৃবৃন্দকে চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখি এর বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। ফলে সেখানে যাওয়ার পর আমি নিজেই একটু অস্বস্তিতে পরেছি, ভুল হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই একবার যদি মানুষের কনসেনট্রেশন (মনোযোগ) নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কথা বলার মুডটা থাকে না। সেকারণে আমি অনেক কথা বলতে পারিনি। এদিকে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলো আজ ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নির্বাচন বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ভিপি নুরের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই সংবাদ সম্মেলনের পরেই একই স্থানে পাঁচ প্যানেলের ব্যানারে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ভোট বর্জন করা স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে দাবি তুলেছে, আমরা দেখেছি এই নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপি হয়েছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কালিমা লেপন করা হয়েছে। সেজন্য আমরা বলেছি এই নির্বাচন পুনরায় দিতে হবে। এবং এর সঙ্গে জড়িতদের পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, ভিপি পদপ্রার্থী হয়ে আমি রোকেয়া হলে শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কলঙ্কিত নির্বাচন চাই না। আমরা সকলের স্বতঃস্ফূর্থ অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

এ সময় তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে দেশের মানুষ যখন ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়েছে, তখন সমগ্র জাতির যখন আস্থা ছিল এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা জাতি দেখতে পাবে, যেটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করলাম, সে ধরনের কোনো উদ্যোগ আমরা এই নির্বাচনে দেখিনি। শিক্ষকরাই এই নির্বাচনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল, সেই ধরনের প্রমাণ আমরা দেখিয়েছি। ভিপি হিসেবে কার্যক্রম চালানোর পর পুনঃনির্বাচন চান কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কার্যক্রম চালাইনি বা দায়িত্ব নিইনি। আর সেটা পরিবেশ পরিস্থিতি এবং আমরা যারা একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব দায়িত্ব নিব কিনা।

অভিষেক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অভিষেক অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু শুনিনি। আপনারা জানেন আমি গণভবনে গিয়েছিলাম। সেটিও আমরা আন্দোলনকারী ভাই-বোনদের সঙ্গে আলোচনা করেই গিয়েছি। সহযোদ্ধারা যে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সেটি আমারও দাবি। তারা যদি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নিতে বলে তাহলে নেব, না বললে নেব না। তিনি আরো বলেন, ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কিছু করার নাই। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমি কেবল প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছি যে, এই নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, ছাত্ররা সেটির সমাধান চাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তিনি যেন প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেন- আমি সেটি বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে নুর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে আমি গণভবনে গিয়েছি। কারণ তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী ব্যক্তি, রাষ্ট্রের অভিভাবক।

আমরা বারবার যেটা বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। সেজন্য পুনঃনির্বাচনের দাবিটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেই। এই দাবিটা আগেও জানিয়েছি, এখনও জানাচ্ছি। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ১১ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যে কলঙ্কিত নির্বাচন হয়েছে তার বিরুদ্ধে ৫ প্যানেল একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চলবে। এরপরই একই স্থানে নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলগুলো সংবাদ সম্মেলন করে।

এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য। বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান বলেন, আগামীকাল পাঁচদফা দাবিতে আমরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করছি। এদিন সবাই রাজু ভাস্কর্যে জমায়েত হয়ে ভিসি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। এ সময় অরণি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরনে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল ঘোষণা, ভিসির পদত্যাগ, নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের পদত্যাগ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহার। এর আগে দুপুরে প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন থেকে লিটন নন্দী বলেন, ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে সামান্যতম ত্রুটিও মেনে নেয়া যায় না।

১১ই মার্চের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে। এই নির্বাচন আমরা মানি না। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে আমরা বৈধতা দিতে পারি না। এই ডাকসু আমাদের ডাকসু না। এ কারণে ছাত্রলীগ ব্যতীত পাঁচ প্যানেল এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্য প্যানেলের কেউ নেই কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যরা এখনও অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। তারা এখনো সাংগঠনিকভাবে এক হতে পারেননি। এ বিষয়ে আলোচনা তারা করছেন। সবার সামনে তারাও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলে আমরা আশা করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status