দেশ বিদেশ

স্বাধীনতা দিবসে বিএনপির ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি মানুষ তার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ মার্চ ২০১৯, সোমবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি তখন মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। গতকাল নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবারকার স্বাধীনতা দিবস অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। ২৬শে মার্চ এই জন্য আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিবসে আমরা স্মরণ করবো মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল। আমরা কেন পাকিস্তানের কাছ থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। বেরিয়ে আসার একটি মাত্র প্রধান কারণ ছিল আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের যে স্বাধীকার তা নস্যাৎ করে দিয়ে হানাদার দখলদার পাকিস্তান বাহিনী জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল। ২৫শে মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার ও স্বাধীকার নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ ২৬শে মার্চের ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানিদের সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছিল। মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে সেই স্বাধীনতা দিবস যখন উৎযাপন করতে চলেছি, তখন মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। যার স্বামী ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তাকে আজ অন্ধকার কারাগারে কারাভোগ করতে হচ্ছে। আজ যখন স্বাধীনতা দিবস পালন করতে যাবো, তখন হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। লক্ষাধিক গায়েবি মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা দিবসটি পালন করছি। দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। গত ১০-১২ বছর ধরে আমরা দেখছি যারা সরকারের অপছন্দনীয় মানুষ তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, প্রয়োজনে তাদেরকে গুম করে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষকে মুক্ত করা ও মামলা প্রত্যাহার করার সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাব। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, আমরা এই দিনটি পালন করতে চাই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এই সংগ্রামে বিজয়ী হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বলেছি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা অযৌক্তিক। এর মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। আবারো বলছি এসব কিছু উপেক্ষা করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে বিএনপি সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন রিপোর্টের বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু মার্কিন রিপোর্ট নয়। বিবিসি, আল জাজিরা, গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের বড় বড় পত্রিকাগুলো বলেছে বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। ভারতের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিষয়টি লেখা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোকে সরকার চরমভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তারা অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারছে না। এত প্রতিকূলতার পরও তারা অনেকেই অনেক কিছু প্রকাশ করছে। এজন্য তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। সুতরাং মার্কিন মানবাধিকার ডিপার্টমেন্ট যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, এর সত্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কর্মসূচিগুলো হলো- ২৬শে মার্চ সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতি সৌধের উদ্দেশ্যে যাত্রা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। একই দিন স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ। ২৫শে মার্চ বিএনপির উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অথবা মহানগর নাট্য মঞ্চে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২৭শে মার্চ রাজধানীতে বিএনপির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এবং সারা দেশে বিএনপি তাদের সুবিধা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড় পত্র প্রকাশ এবং দলেরর পক্ষ থেকে পোস্টার ছাপানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status