ভারত

নায়িকা হলেও মানুষের জন্য কাজ করা যায় বলে মিমির বিশ্বাস

পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে

১৭ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৫:৪২ পূর্বাহ্ন

টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে নির্বাচনে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চমক দিলেও রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখতে গিয়ে মিমিকে প্রথম ক’দিনে বেশ লেজে গোবড়ে হতে হয়েছে। শুটিংয়ের শিডিউল নিয়ে নাস্তানাবুদ মিমিকে নির্বাচনের প্রচারে নামতেই কয়েকদিন সময় নিতে হয়েছে। রবিবার থেকেই তিনি তার কেন্দ্রে প্রচার শুরু করেছেন।

পরনে হলুদ রঙের সুতোর কাজ করা কুর্তি, সঙ্গে মানানসই সাদা রঙের ঢোলা পাজামা। কুর্তিতে লাগানো ঘাসফুল ব্যাচ। চোখে কালো রোদচশমা। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক, কানে ছোট্ট দুল।  প্রথমদিনের পোশাকেই বুঝিয়ে দিয়েছেন ভোট প্রচারে তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্টটা ঠিক কী হতে চলেছে। ভোট জয়ে টার্গেট নিয়ে প্রচারে নেমেও তিনি ভোট চাইছেন না।  নিজেকে 'মেয়ের মতো' বলে দাবি করে 'আশীর্বাদের আবদার' করেছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। এদিকে নির্বচনী প্রচারের কড়া শিডিউলের জন্যপরিচালক বিরসা দাশগুপ্তর ছবি ‘বিবাহ অভিযান’ থেকে সরে দাঁড়াতে হযেছে। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল মিমির।

মার্চেই কথা ছিল সেই ছবির শুটিং শুরুর। কিন্তু ছবি থেকে বাদ পড়ায় মনে খেদ থাকলেও রাজনীতির পাঠ নিতে এখন তার চরম ব্যস্ততা। অভিজ্ঞ দলীয় নেতারাই এ ব্যাপারে তার সহায়। আসলে প্রার্থী হবার জন্য কোনও প্রস্তুতিই মিমির ছিল না। ব্যস্ততা ছিল অভিনয় নিয়েই। মিমি নিজেই জানিয়েছেন, নুসরত মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমি একদমই তৈরি ছিলাম না। অবশ্য আগে একবার তাঁকে প্রার্থী করা  নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে উত্তরবঙ্গের মেয়ে মিমির ধারণা ছিল প্রার্থী করা হলে সেখান থেকেই তাকে প্রার্থী করা হবে। কিন্তু একেবারে কলকাতা শহরের বুকে যাদবপুরের মত শিক্ষিত ও উদ্বাস্তু অধ্যুষিত আসনে প্রার্থী হবার কথা মিমি স্বপ্নেও ভাবেননি। ফলে ঘোষণায় বেশ হতভম্ব হয়েছেন। পরে অবশ্য সামলে নিয়ে বলেছেন, আমার বাবা, ঠাকরুদা ও মামারা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই রাজনীতি করতে তার অসুবিধা হবে না।

টলিউডের সহকর্মী অভিনেত্রী নুসরতের মত আত্মপ্রত্যয়ী না হলেও মিমি মনে করেন, মানুষকে ভালবেসে তাদের উপকারে এলে মানুষ নিশ্চই আমার পাশে থাকবেন। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর আমি তো কাজ পাগল মানুষ। দলের নির্দেশে কাজ করব। মিমি আরও বলেছেন, সিনেমা আমার আইডেনটিটি। অভিনয়ের জন্য, আমার কাজের জন্যই আজ এই সুযোগ আমার কাছে এসেছে। সিনেমা না করলে এটা সম্ভব হত না।

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির মেয়ে মিমির উত্থান টিভিতে গানের ওপারে ধারাবাহিক থেকে। সেটা ২০১০ সালে পুপে চরিত্রের জনপ্রিয়তাই মিমিকে নিয়ে এসেছিল রূপালি পর্দায়। ২০১২ সালে ’বাপি বাড়ি যা’ ছবি দিয়েই মিমি টলিউডে নায়িকার আসনটি পাকা করে নিয়েছিলেন। এর পর গত সাত বছরে বোঝে না সে বোঝে না, শুধু তোমারই জন্য, উমা, ভিলেন, ক্রিশক্রশ, পোস্তর মত অসংখ্য ব্যবসা সফল বাণিজ্যিক ছবি করেছেন। এ মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা তার মন জানে না ছবির।

মমতাদির টানেই তৃণমূল কংগ্রেসের সব অনুষ্ঠানেই দেখা গেছে মিমিকে। তবে রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাননি। আর তাই প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষনার পর মিমি বলেই ফেলেছিরেন, আমি তো কিছুই জানি না। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে ট্রোলড হতে হয়েছে।

কেরিয়ারের মধ্যগগণে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে নেমে কি মনে হয়েছে? সে সম্পর্কে মিমি জানিয়েছেন, আমি সব কাজই মনপ্রাণ দিয়ে করি। জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু করতে চলেছি। সেখানে কোনও ঘাটতি রাখব না। এর পরেই মিমি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেচেন, নায়িকা হলে কি মানুষের জন্য কাজ করা যায় না? মিমি আরও বলেন, রাজনীতিতে অভিনয় জগতের মানুষ এর আগেও এসেছেন। অভিনেতা দেব যে সাংসদ হিসেবে ফাটিয়ে কাজ করছে, আবার অভিনয়ও করছে, মন দিয়ে প্রযোজনার কাজ করছে,  সেটাই মিমির কাছে অনুপ্রেরণা। আর সহকর্মী ও আরেক অভিনেত্রী প্রার্থী নুসরতের সঙ্গে যৌথভাবে প্রচারে নামার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন। দু’জনে মিলে ঠিক করেছেন বসিরহাটে গিয়ে নুসরতের হয়ে মিমি এক সঙ্গে প্রচারে নামবেন। তেমনি যাদবপুরে মিমির সঙ্গে নুসরত প্রচারে নামবেন।

রাজনীতি না জানলেও যে মানুষের জন্য কাজ করা যায় সেই বিশ্বাস মিমির রয়েছে। আর যাদবপুর কেন্দ্রের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এই কেন্দ্রে বাম প্রার্থীকে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম জয়ী হয়েছিলেন। এর পর কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসুর মত প্রার্থীরা এই কেন্দ্র থেকেই জয়ী হয়েছেন। এবার মিমির বিরুদ্ধে বাম প্রার্থী হয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। ওজনদার প্রার্থী হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। সুতরাং মিমিকে বেশ পরিশ্রম করতে হবে মাঠে নেমে। প্রথম দিনের মত আবেগে দেওয়াল লিখনে তুলি ধরলেই চলবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। অবশ্য সকলের মত মিমিরও আশা, দিদির উন্নয়নের জোয়ারে তিনি ঠিক এগিয়ে যাবেন। আর ছোটবেলা থেকে ডানপিটে মিমি রাজনীতিতে নেমে কতটা ডানপিটে হয়ে উঠতে পারেন তা কিছুদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status