বিশ্বজমিন

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলা: যেসব শ্বেতাঙ্গ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

১৬ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার ঘটনা ফেসবুকে লাইভস্ট্রীমিং করেছিলেন ব্রেন্টন টারান্ট। আল নুর মসজিদে নির্বিচারে পুরুষ-নারী-শিশুদের ওপর তার গুলি চালানোর দৃশ্য এতটাই ভয়ংকর যে তা বেশিক্ষণ দেখা যায় না।

ব্রেন্টন টারান্ট এর আগে এক তথাকথিত ইশতেহার প্রকাশ করেন যেখানে তিনি তার সহিংস কট্টর দক্ষিণপন্থী মতাদর্শ তুলে ধরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ভাষায়, ব্রেন্টন টারান্ট আসলে একজন 'উগ্র দক্ষিণপন্থী সন্ত্রাসবাদী।'

হামলার ঘটনার যে ১৭ মিনিটের ভিডিও এবং তার আগে যে সুদীর্ঘ ইশতেহার ব্রেন্টন টারান্ট প্রকাশ করেছেন, তা থেকে তার চিন্তা ও মতাদর্শ সম্পর্কে কী ধারণা পাওয়া যায়?

ব্রেন্টন টারান্ট যখন অস্ত্র বোঝাই গাড়ি নিয়ে আল নুর মসজিদের দিকে যাচ্ছেন, তখন তার গাড়িতে যে গানটি বাজছিল, সেটি একটি সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদী রণসঙ্গীত। 'চেটনিকস' নামে পরিচিত সার্বিয়ান প্যারামিলিটারি ইউনিট ১৯৯২-৯৫ সালের বসনিয়ান যুদ্ধের সময় এটিকে তাদের কুচকাওয়াজ সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করতো।এই সঙ্গীতে বসনিয়ান সার্ব নেতা রাদোভান কারাদযিচের প্রশংসা রয়েছে। গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাদোভান কারাদযিচ দোষী সাব্যস্ত হন।

মুসলিমদের এবং অভিবাসীদের হত্যার কারণে যেসব লোকের সাজা হয়েছে, তাদের অনেকের নাম লেখা আছে ব্রেটন টারান্টের আগ্নেয়াস্ত্রগুলিতে।

একটি বন্দুকের গায়ে লেখা 'ফর রদারহ্যাম।' যুক্তরাজ্যের রদারহ্যামে শিশুদের ওপর এশিয়ান মুসলিম পুরুষদের যৌন নিপীড়নের যে কেলেংকারির ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল, সেই ঘটনাকেই এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া অটোম্যান সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর ঐতিহাসিক অনেক লড়াইয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বিভিন্ন শব্দ লেখা ছিল তার অস্ত্রশস্ত্রে।

অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম খবর দিচ্ছে, ব্রেন্টন টারান্ট সিডনি থেকে প্রায় ছয়শো কিলোমিটার উত্তরের একটি শহর গ্রাফটনের লোক। তার সাবেক বস ট্রেসি গ্রে দাবি করছেন, ব্রেন্টনের মধ্যে তিনি কখনো কোন চরমপন্থী চিন্তাভাবনা বা পাগলামি আচরণ দেখেননি।

দীর্ঘ ইশতেহারে ব্রেন্টন টারান্ট লিখেছেন, ২০১৭ সালে ইউরোপ ঘুরে আসার পর তিনি এই হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেছেন সুইডেনে একটি লরি চালিয়ে ইসলামিক স্টেটের সমর্থক এক ব্যক্তির চালানো একহামলার কথা। এছাড়াও আছে ফ্রান্সে ইমানুয়েল ম্যাক্রর মতো লোকের প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং ফ্রান্সে যে জাতিগত বৈচিত্র, তা নিয়ে ক্ষোভ-হতাশার কথা।ব্রেন্টন টারান্টের দীর্ঘ ইশতেহারটির শিরোণাম হচ্ছে 'দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট'।এতে যে ধরণের 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' তুলে ধরা হয়েছে, তা সাম্প্রতিককালে অনলাইনে দ্রুত প্রসার লাভ করছে। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীদের একটি ব্যাপক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীও তৈরি হচ্ছে।

এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মূল কথা হলো, ইউরোপীয়রা ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের তুলনায় নিকৃষ্ট এবং বিপদজনক জাতি ও সংস্কৃতির দাপটে। মূলত মুসলিমদের নিয়ে ঘৃণা এবং ভীতি ছড়ানোর সাংকেতিক আলোচনা বলে মনে করা হয় এসব আলোচনাকে।

এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে আরও বলা হচ্ছে, পশ্চিমা দুনিয়ায় যে অভিবাসীদের আসার হার বেড়েই চলেছে, এর পেছনেও রয়েছে ষড়যন্ত্র। বিশ্ব পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখতে বড় বড় রাষ্ট্র এবং কর্পোরেশনগুলো 'হোয়াইট জেনোসাইড' বা 'শ্বেতা্ঙ্গ গণহত্যায়' উৎসাহ যোগানোর নীতি নিয়েছে। এই ইশতেহারে এন্টি সেমিটিক (ইহুদী বিদ্বেষী) এবং নব্য নাৎসীবাদী কথাবার্তাও আছে।

পশ্চিমা দুনিয়ায় যে উগ্র ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটছে, তার পেছনে এ ধরণের 'ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্বের' বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নানা ধরণের গোপন গোষ্ঠী ফেসবুকে এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব প্রচারণা চালাচ্ছে জোরে-শোরে।

সূত্রঃ বিবিসি
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status