শেষের পাতা
ঢাবিতে অচলাবস্থা দুই পক্ষই অনড়
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
১৬ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে অনড় প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলো। দাবি আদায়ে দেয়া তিন দিনের আল্টিমেটাম আরো ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়েছে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিলে ফের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী। এদিকে অনশনের তৃতীয় দিনে এসে আট শিক্ষার্থীর চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বিকালে ক্যাম্পাসে ভুখা মিছিল করেছেন অনশনকারীরা। তাদের সঙ্গে এ মিছিলে যোগ দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।
এদিকে অনশনের ৭২ ঘণ্টা পার হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অনশনকারীদের দেখতে যাননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ। গতকাল সন্ধ্যায় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছি। তারা সায় দিলে আমরা যাবো। আমরা চাই তারা নিজেদের কষ্ট না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুক। এদিকে ডাকসু ও হল সংসদে নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বিকাল ৪টায় ডাকসু নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকসুর নির্বাচিতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি মনে করি আমাদের যাওয়া উচিত। আমরা আগামীকাল গণভবনে যাচ্ছি।’
তিনদিনেও অনশনকারীদের দেখতে যায়নি প্রশাসন: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে গত ১২ই মার্চ থেকে অনশন করতে থাকা শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতকাল অনশন চলাকালে আট শিক্ষার্থীর চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিকালে অনশনকারীরা ক্যাম্পাসে ভুখা মিছিল করেছে। মিছিলটি সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, মল চত্বর, এফবিএস বিল্ডিং, মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। ভুখা মিছিল শেষে বিক্ষোভকারীরা পুনঃতফসিল ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ মেনে কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন। অনশনরত শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ বলেন, তথাকথিত এই নির্বাচন আমরা মানি না।
এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই ডাকসুর পুনঃনির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আরেক শিক্ষার্থী তাহা আল মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ আমাদের দেখতে আসেননি। হয়তো তাদের আমাদেরকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। অনশনকারী মীম আরাফাত মানব বলেন, চারদিন হয়ে গেল, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আমাদের দেখতে আসেনি। আমরা মরে গেলেও হয়তো প্রশাসনের কেউ দেখতে আসবে না। অনশনকারী শিক্ষার্থীদের দেখতে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা তাদের আলোচনার বিষয়ে আহ্বান জানাবো। তারা আলোচনায় ডাকলে যাবো। কিন্তু আলোচনা করতে গেলে আমাদের হেনস্তা করা হবে, এমন আলোচনা হলে আমরা যাবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার অনশন করার অধিকার রয়েছে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের সুবিধা প্রশাসন দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের লোকজন আছে। আমরা অনশনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি খেয়াল রাখছি। আমরা সব সময় আহ্বান করছি। যদি তারা আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে আমরা অবশ্যই আসবো। ওদের থেকে কোনো ধরনের আশ্বাস ফেলে আমি অবশ্যই যাবো। তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেই সমাধান করবো। ডাকসু চলে এসেছে এখন ডাকসুর মাধ্যমেও আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারি। এভাবে নিজেদের কষ্ট না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করবে বলে আমি আশা করি। এদিকে গতকাল অনশনকারী শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমি অবাক হলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তান ও শিক্ষার্থীরা অনশনরত। অথচ তাদের দেখতে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা আমাদের শিক্ষকদের কেউ আসেননি।
অসুস্থ চার অনশনকারী: ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনশনে থাকা আট শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি অনশন চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার মনোবল ও দৃঢ় ইচ্ছার কারণে তাকে আবার রাজু ভাস্কর্যে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে, বিকালে ভুখা মিছিলের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শোয়েব মাহমুদ। মিছিলের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিম আরাফাত মানব ও আল মাহমুদ তাহা।
অনশনকারীদের সহপাঠীরা জানান, বিকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। ভিসি ভবনের সামনে এলে অনশনকারী শোয়েব মাহমুদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে অনশনকারী শিক্ষার্থী মীম আরাফত মানব ও আল মাহমুদ তাহাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের সহপাঠীরা শিক্ষার্থীদের রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিন্দ্য মণ্ডল। চিকিৎসা নিয়ে তিনি হলে ফিরে যান। তবে, দাবি আদায়ে বাকি ছয় শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অনশনে ছাত্রদল, বাম জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট একাত্মতা প্রকাশ করে।
এছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও একাত্মতা ঘোষণা করেন অনশনকারীদের সঙ্গে। এর আগে গত ১২ই মার্চ সন্ধ্যা থেকে ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের জন্য অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। এরা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, পপুলেশন্স সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন, দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডল, সিইসি’র চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম। ১৩ই মার্চ তাদের সঙ্গে যোগ দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রাফিয়া তামান্না, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মিম আরাফাত মানব, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ তাহা।
ভিপির নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণে যাচ্ছেন নবনির্বাচিতরা: ডাকসু ও হল সংসদে নবনির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নবনির্বাচিত নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা আজ বিকাল ৪টায় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে যাবেন। এ বিষয়ে গতরাতে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকসুর নির্বাচিতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি মনে করি আমাদের যাওয়া উচিত।
আমরা আগামীকাল গণভবনে যাচ্ছি। এর আগে দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমি আন্দোলনকারী ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলে এবং যারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে ফাইনাল ডিসিশন নেবো। কারণ তারা যদি সম্মতি না দেয় তাহলে তো আমি যেতে পারবো না। আশা করি, তারা হয়তো সম্মতি দেবে। ডাকসুর নবনির্বাচিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী গতরাতে মানবজমিনকে বলেন, ডাকসু ও হল সংসদে আমরা যারা নির্বাচিত হয়েছি তাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগামীকাল বিকাল ৪টায় আমরা গণভবনে যাবো। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করি আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যার সমাধানে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পাবো।
আমার ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে: এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাত্রলীগে ফিরছেন নুর এমন শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট করার জন্য ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কিছু ছড়ানো হচ্ছে। আমি আগেও বলছি এখনো বলছি, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তবে আমি এখন কোনোভাবেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ পরিষদের পক্ষ হতে আমি ডাকসুতে নির্বাচন করেছি। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে অনশনের ৭২ ঘণ্টা পার হলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অনশনকারীদের দেখতে যাননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ। গতকাল সন্ধ্যায় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছি। তারা সায় দিলে আমরা যাবো। আমরা চাই তারা নিজেদের কষ্ট না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুক। এদিকে ডাকসু ও হল সংসদে নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বিকাল ৪টায় ডাকসু নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকসুর নির্বাচিতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি মনে করি আমাদের যাওয়া উচিত। আমরা আগামীকাল গণভবনে যাচ্ছি।’
তিনদিনেও অনশনকারীদের দেখতে যায়নি প্রশাসন: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে গত ১২ই মার্চ থেকে অনশন করতে থাকা শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতকাল অনশন চলাকালে আট শিক্ষার্থীর চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিকালে অনশনকারীরা ক্যাম্পাসে ভুখা মিছিল করেছে। মিছিলটি সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, মল চত্বর, এফবিএস বিল্ডিং, মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। ভুখা মিছিল শেষে বিক্ষোভকারীরা পুনঃতফসিল ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ মেনে কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন। অনশনরত শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ বলেন, তথাকথিত এই নির্বাচন আমরা মানি না।
এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই ডাকসুর পুনঃনির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আরেক শিক্ষার্থী তাহা আল মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ আমাদের দেখতে আসেননি। হয়তো তাদের আমাদেরকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। অনশনকারী মীম আরাফাত মানব বলেন, চারদিন হয়ে গেল, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আমাদের দেখতে আসেনি। আমরা মরে গেলেও হয়তো প্রশাসনের কেউ দেখতে আসবে না। অনশনকারী শিক্ষার্থীদের দেখতে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা তাদের আলোচনার বিষয়ে আহ্বান জানাবো। তারা আলোচনায় ডাকলে যাবো। কিন্তু আলোচনা করতে গেলে আমাদের হেনস্তা করা হবে, এমন আলোচনা হলে আমরা যাবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার অনশন করার অধিকার রয়েছে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের সুবিধা প্রশাসন দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের লোকজন আছে। আমরা অনশনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি খেয়াল রাখছি। আমরা সব সময় আহ্বান করছি। যদি তারা আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে আমরা অবশ্যই আসবো। ওদের থেকে কোনো ধরনের আশ্বাস ফেলে আমি অবশ্যই যাবো। তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেই সমাধান করবো। ডাকসু চলে এসেছে এখন ডাকসুর মাধ্যমেও আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারি। এভাবে নিজেদের কষ্ট না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করবে বলে আমি আশা করি। এদিকে গতকাল অনশনকারী শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমি অবাক হলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তান ও শিক্ষার্থীরা অনশনরত। অথচ তাদের দেখতে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা আমাদের শিক্ষকদের কেউ আসেননি।
অসুস্থ চার অনশনকারী: ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনশনে থাকা আট শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি অনশন চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার মনোবল ও দৃঢ় ইচ্ছার কারণে তাকে আবার রাজু ভাস্কর্যে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে, বিকালে ভুখা মিছিলের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শোয়েব মাহমুদ। মিছিলের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিম আরাফাত মানব ও আল মাহমুদ তাহা।
অনশনকারীদের সহপাঠীরা জানান, বিকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। ভিসি ভবনের সামনে এলে অনশনকারী শোয়েব মাহমুদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে অনশনকারী শিক্ষার্থী মীম আরাফত মানব ও আল মাহমুদ তাহাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের সহপাঠীরা শিক্ষার্থীদের রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিন্দ্য মণ্ডল। চিকিৎসা নিয়ে তিনি হলে ফিরে যান। তবে, দাবি আদায়ে বাকি ছয় শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অনশনে ছাত্রদল, বাম জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট একাত্মতা প্রকাশ করে।
এছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও একাত্মতা ঘোষণা করেন অনশনকারীদের সঙ্গে। এর আগে গত ১২ই মার্চ সন্ধ্যা থেকে ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের জন্য অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। এরা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, পপুলেশন্স সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন, দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডল, সিইসি’র চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম। ১৩ই মার্চ তাদের সঙ্গে যোগ দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রাফিয়া তামান্না, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মিম আরাফাত মানব, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ তাহা।
ভিপির নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণে যাচ্ছেন নবনির্বাচিতরা: ডাকসু ও হল সংসদে নবনির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নবনির্বাচিত নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা আজ বিকাল ৪টায় ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে যাবেন। এ বিষয়ে গতরাতে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকসুর নির্বাচিতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি মনে করি আমাদের যাওয়া উচিত।
আমরা আগামীকাল গণভবনে যাচ্ছি। এর আগে দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আমি আন্দোলনকারী ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলে এবং যারা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে ফাইনাল ডিসিশন নেবো। কারণ তারা যদি সম্মতি না দেয় তাহলে তো আমি যেতে পারবো না। আশা করি, তারা হয়তো সম্মতি দেবে। ডাকসুর নবনির্বাচিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী গতরাতে মানবজমিনকে বলেন, ডাকসু ও হল সংসদে আমরা যারা নির্বাচিত হয়েছি তাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগামীকাল বিকাল ৪টায় আমরা গণভবনে যাবো। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করি আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যার সমাধানে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পাবো।
আমার ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে: এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাত্রলীগে ফিরছেন নুর এমন শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট করার জন্য ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কিছু ছড়ানো হচ্ছে। আমি আগেও বলছি এখনো বলছি, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তবে আমি এখন কোনোভাবেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ পরিষদের পক্ষ হতে আমি ডাকসুতে নির্বাচন করেছি। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।