শেষের পাতা

১৫ দিন ধরে নিখোঁজ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

শুভ্র দেব

১৬ মার্চ ২০১৯, শনিবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ এক শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ওই শিক্ষার্থীর নাম রুহুল আমিন সরকার। ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার কোনো সন্ধান দিতে পারছেন না। রুহুল আমিনকে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। রুহুল আমিন সরকার কুমিল্লার দাউদকান্দির চন্দ্র শেখরদি গ্রামের রহমত উল্লাহ সরকারের ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। দুই ভাই, ভাবী , বড় বোন ও দাদীর সঙ্গে ঢাকার পূর্ব শেওড়া পাড়ার ১৩৪৩ নম্বর বাড়িতে থাকত। সে ডাইস ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া করত। পহেলা মার্চ রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন হয়তো রাতের খাবারের আগে ফিরে আসবে। কিন্তু রাত পার হয়ে সকাল, তারপর আরো ১৫ দিন চলে গেছে। রুহুল আমিন আর ফিরে আসেনি।

নিখোঁজের ভাই রাইসুল হাসান বলেন, সে যখন বাসা থেকে বের হয়ে যায় তখন বাসায় ভাবি শারমিন রহমান ও পঁচানব্বই উর্ধ্বো বয়সী দাদি খুদেজা বেগম ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। বিছানায় শোয়ে থাকা দাদিকে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে বের হয়। দাদি শোয়া থেকে উঠে বসার আগেই সে চলে যায়। কোন বন্ধুর বাসায় এত রাতে যাচ্ছে সেটা জানার সুযোগ আর হয়ে উঠেনি দাদির। আর আমরাও তখন বাসার বাইরে ছিলাম। বেসরকারি অফিসে কর্মরত বড় ভাই রুবেল সরকার রাতে ঘরে ফিরে জানতে পারেন রুহুল আমিন বাসায় নাই। তাই তিনি ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানান। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তার মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

রাইসুল বলেন, তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়াতে আমি তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু তাদের সঙ্গে রুহুলের কোনো কথা হয়নি বলে তারা জানায়। ভেবেছিলাম ৩রা মার্চ থেকে তার ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। হয়তো লেখাপড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চলে গেছে। সকালে হলে খোঁজ পাওয়া যাবে। পরের দিন হলে, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত সকল স্থানে খোঁজ নিয়েও তার কোনো সন্ধান না পাওয়াতে আমাদের সন্দেহ বাড়তে থাকে। পরের দিন কাফরুল থানায় ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি জিডি করতে যাই। ডিউটি অফিসার জিডি না নিয়ে ঢাকার হাসপাতাল, থানাগুলোতে খোঁজ খবর নিতে বলেন। ঢাকার সকল হাসপাতাল ও থানায় খোঁজ নিয়ে আমার ভাইকে খোঁজে না পেয়ে ফের থানায় গিয়ে জিডি করি। তিনি বলেন, আমার ভাই নিখোঁজের অভিযোগটি থানা পুলিশ ছাড়াও, র‌্যাব ও ডিবির কাছে দিয়েছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন তদন্ত চলছে।

রুহুল আমিন সরকারের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক মো. কুদ্দুস ব্যাপারী মানবজমিনকে বলেন, আমরা সর্বশেষ লোকেশন শনাক্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সিম বন্ধ থাকায় কোনো লোকেশন পাওয়া যায়নি। আমরা দেশের সকল থানায় এসএমএস, ইনকুয়ারি স্লিপ দিয়েছি। মোবাইল কললিস্ট নিয়ে পর্যলোচনা করছি।  
নিখোঁজের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩রা মার্চ থেকে তার দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনি পরীক্ষা ছিল। বরাবরই সে পরীক্ষার আগে তার ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তাই এই পরীক্ষার আগে তার ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল। এছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও (স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৬) বিক্রির জন্য সে বিক্রয় ডট কম ও সেল বাজারে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের দাবি শান্ত স্বভাবের রুহুল আমিন সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না।  

এদিকে রুহুল আমিনকে খোঁজে না পেয়ে তার বড় বোন রাশেদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাত্র ১০ মাস বয়সে মা হারানো রুহুলকে তার বড় বোন ও ভাইয়েরা নিজের সন্তানের মতো করে মানুষ করেছেন। তাই আদরের ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারের সব আনন্দ এখন মিইয়ে গেছে। ছোট ভাইকে ফিরে পেতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।  

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪) সহকারী পুলিশ সুপার মো. রিফাত বাশার তালুকদার মানবজমিনকে বলেন, তদন্ত চলছে তবে আশাব্যঞ্জক কিছু এই মুহূর্তেই বলা যাচ্ছে না। আমরা তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ও তার বন্ধুদের লিং ধরে তদন্ত করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status