শরীর ও মন

আজ বিশ্ব কিডনি দিবস

দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১৪ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। প্রতি ঘণ্টায় কিডনি বিকল হয়ে ৫ জন অকাল মৃত্যুবরণ করছেন। কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার উপায় কিডনি সংযোজন বা ডায়ালাইসিস। বাংলাদেশে বছরে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে কিডনিজনিত জটিলতায়।  প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ লোকের কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির আওতায় আসে এবং বাকি রোগীরা প্রকৃত চিকিৎসা সেবার আওতার বাইরে থেকে যায়। সম্পূর্ণ কিডনি বিকল রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো কিডনি সংযোজন। বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি রোগীর কিডনি সংযোজিত হয়েছে। এ সবই জীবিত এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে সংগৃহীত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে কিডনি ডোনারের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই মৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে জানিয়েছেন কিডনি বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে জীবিত যারা কিডনি দিয়েছেন তাদেরও নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। কিডনি প্রতিস্থাপনে দুই সপ্তাহের প্যাকেজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেড ভাড়া ও অস্ত্রোপচার ও ওষুধপত্র বাবদ মোট খরচ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দেশে মোট যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় তার সিংহভাগই বিএসএমএমইউতে হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি রোগে তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে কিডনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে পড়া এবং অবহেলিত। চিকিৎসকরা জানান, বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ নারী অকাল মৃত্যুবরণ করে কিডনি বিকল হয়ে। সারা বিশ্বে ১৪ শতাংশ নারী পক্ষান্তরে ১২ শতাংশ পুরুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত, অথচ চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা অবহেলিত, তারা পুরুষ শাসিত সমাজে বৈষম্যের শিকার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনি রোগের ব্যাপক প্রকোপ, এ রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসার খরচ এবং সিংহভাগ কিডনি বিকল রোগীদের অর্থাভাবে প্রায় বিনা চিকিৎসায় করুণ মৃত্যু হয়। ধনী-গরিব কিংবা সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি নির্বিশেষে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সর্বস্তরের কিডনি রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার এবং বস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ বলেন, উন্নত দেশে মোট কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ২০ থেকে ২৫ ভাগ নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে হয়। দুর্ঘটনায় বা অকালে এবং রোগে-শোকে মৃৃত্যুবরণকারীদের কিডনিগুলো সংগ্রহ করে কিডনি বিকল রোগীদের সংযোজন করে দিতে পারলে কিডনি চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতি হবে। এখন বছরে ২০০ থেকে ২৫০ ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন হয় অথচ মৃত ব্যক্তিদের কিডনি সংগ্রহ করে তা জীবিত রোগীদের সংযোজন করলে ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা সম্ভব হবে। ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং বিআরবি হসপিটালস-এর কিডনি বিভাগের চিফ কন্সালটেন্ট, অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ বলেন, বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে ৮৫০ মিলিয়ন লোক কিডনি রোগী। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় এদেশের শতকরা ১০ জন রোগী এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থাভাবে চিকিৎসাহীন থেকে অকালে প্রাণ হারান সিংহভাগ রোগী। পক্ষান্তরে, একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি ও এর কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা। তিনি সুস্থ জীবনধারা চর্চার উপর বেশি গুরুত্ব দেন। নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান না করা, পরিমিত সুষম খাবার, কাঁচা লবণ পরিহার করার তাগিদ দেন। তিনি রোগের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের ওষুধ গরিব রোগীদের জন্য বিনামূল্যে প্রদানের দাবি জানান সরকারের কাছে। কিডনি বিকলের চিকিৎসা যেহেতু অনেক ব্যয়বহুল তাই এর চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য গরিবদের ভর্তুকিসহ সবাইকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি জোর আবেদন জানান।
মানব দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সে আইনে অল্প কয়েকজন নিকটজন ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে কিডনি নেয়া যেত না। আইনটি সংশোধন করে নতুন একটি আইন হয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপন বাড়বে। নতুন আইনে পুত্র, কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ভাইবোন এবং রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও তাদের স্ত্রী বা স্বামী, চাচাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো ভাইবোন, খালাতো ভাইবোন এবং তাদের স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানাদি কিডনি দান করতে পারবেন। এর বাইরে ব্রেইন ডেথ (জীবিত কিন্তু মস্তিষ্ক কাজ করছে না এমন) ঘোষিত ব্যক্তির দেহ থেকে তার আইনানুগ উত্তরাধিকারীদের ইচ্ছানুসারে অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো মৃত ব্যক্তির দেহ কেউ দাবি না করলে তার দেহ থেকে প্রয়োজনীয় অঙ্গ নেয়া যাবে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে আজ বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সুস্থ কিডনি, সবার জন্য সর্বত্র।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status