ষোলো আনা

নারী হয়ে উঠতে পারেন পরিবারের প্রধান মানুষ

কামরুন নাহার

৮ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

আজ বিশ্ব নারী দিবস। বিশ্বের বহু দেশে আজ নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে। দিনটি পালিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। সেমিনার হচ্ছে, র‌্যালি হচ্ছে, নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নারীরা অনেকেই আজ বেগুনি রংয়ের শাড়ি পরবেন সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন, দেবেন।  এগুলো আশার কথা, ভালো লাগার কথা। আজকের দিনে বাংলাদেশের নারীদের কাছে আমার একটি অনুরোধ আছে।

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হওয়ায় পরিবারের মূল উপার্জনের মানুষ পুরুষই হয়ে থাকেন। এখন সেই প্রথাটা একটু ভেঙ্গেছে। এখন দেখা যায় অনেক পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী দুজনই উপার্জন করছেন। আমরা নারীরা আজকাল সমান অধিকারের ব্যাপারে খুব সোচ্চার বিশেষ করে শিক্ষিত অংশটা। এই সোচ্চার অংশকে সবাই নারীবাদী বলে- যারা পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে তাল মিলিয়ে চলার ব্যাপারে, অধিকার এবং সম-অধিকারের ব্যাপারে সদা জাগ্রত। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি নারীবাদী এবং অনারীবাদীরা (সচেতন হলেই নারীবাদী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই) এটাও মানেন যে পরিবারের প্রধান উপার্জনের মানুষ শুধু পুরুষই নন নারীও হতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাকে পরিবারের হাল ধরতে হবে।

আমি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করা অনেক নারীকে চিনি যারা সোচ্চার নারীবাদী। তারা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চান, চলেন; একজন পুরুষ যা করেন তার সবই করতে ভালোবাসেন। ‘পুরুষ সিগারেট খেতে পারলে আমিও খাবো, পুরুষ রাত বিরাতে চলাফেরা করতে পারলে আমিও করবো’ জাতীয় মনোভাব তারা পোষণ করেন এবং সেভাবে চলেনও। এটা খুবই আশার বিষয় যে প্রথা ভেঙ্গে তারা এভাবে চলছেন এবং অনেককে উৎসাহিত করছেন, সাহস দিচ্ছেন। কিন্তু এই নারীরাই যখন স্বামীর চাকরি চলে গেলে, স্বামী দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকলে ‘স্বামী হয়ে বসে বসে স্ত্রীর টাকায় খাচ্ছো লজ্জা করে না তোমার’ জাতীয় বাক্য স্বামীর প্রতি ছুঁড়ে দেন তখন আশাহত হতে হয়। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চাইলে পুরুষ করে থাকেন এমন সব কাজই সমান আগ্রহ এবং ভালোবাসা নিয়ে করতে হবে।

আপনার স্বামীর যখন চাকরি নেই তখন আপনি চাকরিজীবী হলে আপনাকেই পরিবারের হাল ধরতে হবে। পরিবারের প্রধান চালিকাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আর যদি আপনি কিছু না করেন তাহলে আপনার স্বামীকে মেন্টালি বুস্ট আপ করতে হবে, মানসিক শক্তি যুগিয়ে তার পাশে থাকতে হবে। সে একজন পুরুষ হয়েও আপনার টাকায় বসে খাচ্ছে এই কথা তাকে শোনানো যাবে না। যে পুরুষ উপার্জন করেন না তিনি এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন।

কারণ নিজেকে সুপিরিয়র ভাবেন এবং জানেন বলেই পুরুষের ইগো অনেক বেশি। স্ত্রী উপার্জন করলেও অনেক পুরুষ স্ত্রীর উপার্জনে সংসার চালাতে চান না এবং সেটা হয় ইগোর কারণেই। আর তাই যে পুরুষ চাকরি হারিয়ে ইতিমধ্যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, স্ত্রী হিসেবে আপনার কাজ হলো তাকে শক্তি-সাহস যোগানো এবং তাঁর যাতে আর একটা চাকরি হয় সেই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। সচেতন নারীরা এমনই হয়ে থাকেন এটা আমার বিশ্বাস। আপনি স্বামীকে ‘তুমি বউয়ের টাকায় বসে খাচ্ছো, আমি লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারি না, কেমন পুরুষ তুমি’ জাতীয় কথা শোনাবেন এটা আমি মানতে নারাজ।

পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি নারী পুরুষের সম্মিলিত চেষ্টায় পরিচালিত হয় যেখানে থাকে মায়া-মমতা, প্রেম- ভালোবাসা, স্নেহ, ত্যাগ-ছাড়, পারস্পরিক সহযোগিতা- সহমর্মিতা। এখানে একজন ঘর সামলান একজন বাহির। কখনও নারীকে ঘর-বাহির দুই-ই সামলাতে হয়। পুরুষকেও মাঝেমাঝে এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। আর তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বামী যখন চাকরিহারা হবেন স্ত্রীর কাজ হবে শক্তভাবে সংসারের হাল ধরা, শুধুই উপার্জনকারী থেকে প্রধান উপার্জনকারীতে অবতীর্ণ হওয়া। আজকের দিনে আমার অনুরোধ সমস্ত নারীবাদী এবং সচেতন নারীদের প্রতি আসুন আমরা পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার যে সত্যিকারের মানে সেটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করে সমাজটাকে এগিয়ে নিই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status