এক্সক্লুসিভ
ভাইয়ের দেখা পেলেন না শান্ত
স্টাফ রিপোর্টার
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন
ভাই আমার নাই, ভাই আমার নাই। আর আইবো না। আর দেখা হইবো না। আমি কারে নিয়া থাকমু। আমারে পড়াইবো কে? চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভাইকে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন শান্ত নামের এক কিশোর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে শত শত স্বজনের ভিড়ে গতকাল শান্তও ছিল। ভাই ভাই করে চিৎকার করছিল সে। কথা বলে জানা গেল, ভয়াল অগ্নিকাণ্ডে নিহত এই যুবকের নাম নয়ন। বেগম বাজারে একটি দোকানে চাকরি করতেন। শান্ত জানায়, অন্য দিনের মতো বুধবার রাতেও দোকানের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন নয়ন। এর মধ্যে ফোন করে শান্তকে বলেছিলেন বাসায় ফিরছেন। কিন্তু নয়নের আর বাসায় ফেরা হয়নি। শান্তরও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা আর হলো না। চকবাজারেই তাদের বাসা। শান্ত বলে, বাড়িতে মা আছেন। তিনি শয্যাশায়ী। বাবা বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম নয়নই ছিলেন সবার ভরসা। তার আয়েই চলতো ভাইয়ের লেখাপড়া ও সংসারের অন্য খরচ। ঢামেক মর্গের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নয়নের ভাই শান্ত বলে, আমার ভাই আর ফোন দিবো না। কারে ভাই ডাকমু। আমার সব শেষ হইয়া গেল। এসব চিৎকার করে বলতে বলতেই পাগলপ্রায় শান্ত হঠাৎ নীরব হয়ে পড়েন। তার বাবাও পাশ থেকে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। কিন্তু কোনো কথা বলতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলেও আহাজারি ছাড়া আর কোনো কথা নেই নয়নের বাবার। নয়নের এক খালাতো ভাই জানান, রাতে আসার আগে একবার বাসায় ফোন দিয়েছিলেন। দোকান বন্ধ করে চুড়িহাট্টার পথ ধরেই আসছিলেন বাসায়। এমন সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে হারিয়ে যান নয়ন। তার সঙ্গে আর কথা হলো না কারো। নয়নের এই খালাতো ভাই আরো জানান, শান্তকে বেশি ভালোবাসতো নয়ন। খুব আদর করতো। আমার খালার বড় ছেলে। এক আগুন আমাগো সব শেষ কইরা দিলো। চিরতরে হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের জন্য শান্তর কান্নায় পুরো ঢামেক মর্গ এলাকা ভারি হয়ে ওঠে। কখনো কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়েছেন খালাতো ভাইকে। আবার কখনো ভাই হারার শোকে লুটিয়ে পড়েছেন ঢামেক মর্গ প্রাঙ্গণে। কান্নজড়িত কণ্ঠে শান্ত আরো বলে, আমার ভাই আমারে ছাইড়া চলে গেল। আমরা একা হইয়া গেলাম। ভাই আমাগো সব আছিল।