এক্সক্লুসিভ

মেহেদির রঙ এখনো মুছেনি

স্টাফ রিপোর্টার

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

দুপুরের খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন দুই ভাই রানা আর রাজু। দু’জনে মিলে মোবাইলফোনের ব্যবসা করতেন পুরান ঢাকার চকবাজারে। যাওয়ার সময় অসুস্থ বাবার জন্য বিরিয়ানি আনার কথা বলে যান বড় ছেলে মাসুদ রানা। বাবাও অপেক্ষায় ছিলেন ছেলে বিরিয়ানি নিয়ে আসবে। কিন্তু কে জানতো এক সঙ্গে লাশ হয়ে ফিরবে দুই ভাই। গতকাল চকবাজারে আগুনে পুড়ে মারা যান তারা।

বাবা মো. সাহেবুল্লাহ’র তিন ছেলে। দুই ছেলেকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছেন তিনি। সবার কাছে বলছেন তার ছেলেদের ফিরিয়ে দিতে। মেজো ছেলে মাহাবুবুর রহমান রাজু বিয়ে করেছেন ২৫ দিন হয়েছে। স্ত্রী আফরোজা সুলতানা স্মৃতির শুকায়নি হাতের মেহেদিও। স্বামীর মৃত্যুর খবর  শোনার পর অজ্ঞান হয়ে গেছেন। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফেরার পর আবার আগের মতো অবস্থা। স্মৃতি আজিমপুর গার্লস কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তিনিও ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সঙ্গে পুরান ঢাকায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়িও নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনরা আসছেন সান্ত্বনা দিতে। সাহেবুল্লার বড় ছেলে রানা বিয়ে করেছেন ৫ বছর আগে। তার সংসারে রয়েছে ৩ বছরের পুত্র সন্তান রাতুল। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে সকাল থেকে কান্না করছে সে। নিহত দুই সন্তানের বাবা সাহেবুল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, আমার দুইটা মানিক কই? সবাই আমার ছেলেদের এনে দাও। আমার এখন কী হবে? আমি কারে নিয়া বাঁচবো। আল্লাহ তুমি কেন এমন করলা। আমার পরিবার এখন কে দেখবে? আমার নাতিকে কে দেখবে?

সাহেবুল্লাহ (৭৫)-এর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার দক্ষিণ ঘোষকামতা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় ভাড়া থাকেন। নিজে এক সময় প্লাস্টিকের ব্যবসা করতেন। এখন ব্যবসা বাদ দিয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকছেন বাসায়। দুই ছেলের উপার্জনে সংসার চলতো। আর ছোট ছেলে খলিলুর রহমান মিরাজ পড়াশোনা শেষ করেছেন। এখন বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

রাজুর শ্বশুর আবুল খায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এটাই কী ছিল কপালে। কতো ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। একমাস না যেতেই মেয়ে আমার বিধবা হলো। তিনি আরো বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমি ছুটে আসি। কিন্তু দোকানের কাছেই যেতে পারি নি। পরে শুনেছি আগুনের ভয়ে তারা দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে আর বের হতে পারে নি।

নিহত দুইজনের ছোট ভাই খলিলুর রহমান মিরাজ মানবজমিনকে বলেন, ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম। খবর পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি আমাদের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি চাইলেও ওই এলাকায় ঢুকতে পারি নি। সারারাত চকবাজার এলাকায় বসে ছিলাম। সকালে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে পেরেছি। রাজুর মামা শ্বশুর বরকতউল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, অল্প কয়েকদিন হলো ওদের বিয়ে হয়েছে। আর এরই মধ্যে আল্লাহ তাকে নিয়ে গেল। মাইয়াডা কেমনে থাকবো- একমাত্র আল্লাহই জানে। রাজুর সঙ্গে আমার দুইদিন আগেও কথা হয়েছিল। খুব ভালো ছেলে ছিল। বিয়ের আগে থেকেই আমি ওকে চিনতাম। মূলত বিয়ের সব আয়োজন আমিই করেছিলাম।

লালবাগ এলাকার ব্যবসায়ী জাকের আলী বলেন, ‘আমার বাড়িও নোয়াখালীতে। স্বাধীনতার পর থেকে এই এলাকায় থাকি। ছেলে দুইটা আমাদের চোখের সামনেই বড় হইছে। খুব ভালো ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখে নি। ভালো মানুষদের আল্লাহ সব সময় আগে নিয়া যায়।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status