এক্সক্লুসিভ

‘ছেলে বেঁচে আছে না মরে গেছে জানি না’

স্টাফ রিপোর্টার

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনের ভবনে ২৫ বছর ধরে মুদি দোকানির ব্যবসা করছিলেন আলমগীর হোসেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যবসায়ী গতকাল অগ্নিকাণ্ডের সময় তার দোকানেই ছিলেন। আগুনের তীব্রতা যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনি বাঁচার জন্য তার দোকানের পানির ড্রামে ঢুকে আশ্রয় নেন। দুই ঘণ্টা পানির ড্রামে আশ্রয় নিয়ে তিনি বেঁচে গেলেও তার ছেলে পারভেজকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মানবজমিন-এর কাছ তিনি তার চোখে দেখা ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আগুন লাগার ১০ মিনিট আগে আমার ছেলে মো. পারভেজকে (১৮) আমি রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বাসায় যেতে বলি। আমার কথা শুনে সে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। কথা ছিল খাবার খেয়ে সে আবার দোকানে ফিরে আসবে। তারপর আমি বাসায় যাবো। পারভেজ চলে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একের পর এক বিকট শব্দ হতেই থাকে। আমি দোকানের বাইরে তাকিয়ে দেখি সামনের সড়ক ও আশেপাশের সব ভবনে আগুন আর আগুন। আগুনের শিখা যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন আমি বের হবার আর কোনো রাস্তা খুঁজে পাইনি।

আলমগীর হোসেন আরো বলেন, সময় যত যাচ্ছিল আগুনের উত্তাপ বাড়ছিল। ধীরে ধীরে আমার দোকানের দিকে আগুন চলে আসে। উপায়ান্তর না পেয়ে আমি দোকানে থাকা একটি পানির ড্রামে ঢুকে যাই। বেশি পানি থাকায় আমার শরীরের বেশি অংশই পানিতে ডুবে ছিল। ধীরে ধীরে আমার দোকানে এসে আগুন লাগে। তখন আমি আল্লাহর নাম জপছিলাম। মনে হয়েছিল আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।

বাইরে শুধু বাঁচাও বাঁচাও বলে কান্নার শব্দ আর চিৎকার শুনছিলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আগুনের উত্তাপ কমে গেলে আমি দোকান থেকে বের হয়ে অন্যত্র যাই। আলমগীর বলেন, আমি বেঁচে গেলেও আমার ছেলে পারভেজের আর সন্ধান মেলেনি। সেই যে খাওয়ার জন্য বের হয়েছিল তারপর থেকে সে নিখোঁজ। সে বেঁচে আছে না মরে গেছে আমি জানি না। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ও মর্গে খোঁজ নিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আলমগীর আরো বলেন, আমার চার সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও একটি মেয়ে। পারভেজ ছিল ভাই বোনদের বড়। বাকি দুই ছেলের নাম আমান ও ইব্রাহিম আর মেয়ের নাম সুমাইয়া। পারভেজের মা পারভীন আক্তার মারা যাওয়ার পর আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছি। পারভেজ আমার ব্যবসা দেখাশুনা করতো। ঘটনার রাতে খাবার খেয়ে দোকানের উপরের একটি রুমে ঘুমানোর কথা ছিল। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। আমি তার ফেরার অপেক্ষায় আছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status